ধারণা ছিল “পিকুর ডায়েরী” সত্যজিৎ রায়ের কোন উপন্যাস। পড়া পর জানলাম এটা একটা ছোটগল্প। বইটা ছোটগল্পের, তাই উপন্যাসের কোন অংশকে সংক্ষিপ্ত করে তুলে দেয়াও হতে পারে। পিকু সাত আট বছরের বাচ্চা একটা ছেলে। ডায়রি লেখে খুব আগ্রহ করে।
অজস্র বানান আর যতির ভুল, তবু মূল বিষয়টা ধরতে পারা যায়। আমার মনে হয় এটা খুব কঠিন, বড়দের পক্ষে ছোটদের সাইকোলজি বোঝা। ছোটদের মনের গলি-ঘুপচি চিনে চিনে ঘুরতে পারাটা চাট্টিখানি কথা না। মানুষের বয়স বাড়লে তারা শৈশব মনে রাখে ঠিকই কিন্তু সূক্ষ্ম বিষয়গুলো হারিয়ে যায়। হঠাৎ করে বই পড়তে পড়তে কখনো মনে পড়ে যায়, আরে তাই তো, আমিও তো এমন সময়ে এমন কোন ঘটনার পর এমন করেই ভাবতাম।
বই পুস্তকে অনেকবার পড়েছিলাম যে ডায়রি লেখা একটা খুব ভাল অভ্যাস। রোজনামচা লিখে রাখলাম, তারপর সেটা থেকে অনেক সময়ে আমরা দেখে অনেক কিছু শিখব। এসব জেনেছিলাম। তাই কয়েকবার খুব আঁটঘাট বেঁধে মোটাসোটা ডায়রি যোগাড় করে লেখা শুরু করেছিলাম। প্রায় প্রতিবারই কাজটা মাঝপথে থেমে গেছে।
সারাদিনের ঘটনাপঞ্জী লিখতে হলে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে আর রাতেরবেলা পায় ঘুম। কিসের ডায়রি লেখালেখি। পরে কলেজ পাশ করার পর স্কুলজীবনের অর্ধসমাপ্ত একেকটা ডায়রির পাতা উল্টে দেখতে খারাপ লাগত না। অতি তুচ্ছ সব ঘটনা। জামার রঙ নকশা বা স্কুলের ঘন্টার শব্দ কেমন অথবা নারকেল গাছের অপমৃত্যু সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য।
লিখতে লিখতে ভাবতাম, বড় হলে হয়ত এই ডায়রি ঘেঁটে দেখতে গেলে শিক্ষণীয় বিষয়গুলি চোখেই পড়বে না বরং হাসাহাসি করব। বড়রা দরকারি ব্যাপার নিয়ে হাসাহাসি করতে পছন্দ করে। সত্যি সত্যি যখন পড়তে গেলাম, হাসি পায়নি। তবে তুচ্ছ মনে হয়েছে বেশিরভাগ লেখার সাবজেক্টই। সবচেয়ে মজার যেটা লক্ষ্য করেছি তা হল, সব লেখাতেই একটা এমন ছাপ আছে যে আমার বয়স কম হলেও আমি অনেক কিছুই বুঝি, অনেক কিছুই জানি যেটা মানুষ আমাকে দেখে ধারণাই করতে পারবে না।
কিছু লেখা ছিল এমন যেন কারো হাতে পড়লেও বুঝতে না পারে। আবার কিছু এমনভাবে লেখা যেন কারো চোখে পড়ে গেলে (চোখে পড়ার মত জায়গাতেই রাখা হত) বুঝতে পারে যে এই নেহায়েত বাচ্চা মেয়েটা এই রূঢ় পৃথিবীর কত কিই না বোঝে। ডায়রিগুলো আমি রাখিনি। ইতস্তত করতে করতে পুরানো কাগজের ডাঁইয়ের মধ্যে গুঁজে দিয়েছি। মনে হয়েছে আমি ঠিক কোন মুহূর্তে কি ভেবেছিলাম তার খুঁটিনাটি বর্ণনা আমার প্রয়োজন নেই।
কখনো যদি কেউ দেখে ফেলে? আমার নিজের ব্যাপার শুধু আমার নিজের জন্য। সেসবকে যেই পরিস্থিতিতে যেভাবে বিবেচনা করব সেটাই আসল। তাছাড়া প্রত্যেকেরই কিছু কিছু ভাবনা থাকে যার কোন লিখিত ডকুমেন্ট থাকা উচিত না। কেবল হৃদয় আর মস্তিষ্ক মিলে যতটুকু ধরে রাখবে ততটুকুই যথেষ্ট।
অনেকদিন আগের একটা ডায়রি পেয়ে গিয়েছিলাম।
একটা জায়গায় এমন লেখা, জানিনা কোন প্রেক্ষাপটে,
"মানুষের বায়োডাটাতে বিভ্রান্তি নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকে না। আপনার কাছে কোন বস্তুটিকে বিভ্রান্তিকর লাগে এমন প্রশ্ন করা হয়না। হলে আমি বলতাম, নিজেকে। নিজেকে নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি বিভ্রান্ত। কেননা, আমার চারিত্রিক লেখচিত্রটা আমি এখনও বুঝে উঠতে পারিনি।
অন্যেরা বুঝবে বা আমি অন্য কাউকে বুঝব তা তো পরের কথা। যেমন যা আমার ভাবা উচিত না বা যা ভাবা দূর্বল ব্যাক্তিত্বের লক্ষণ, যতই অস্বীকার করি না কেন আমি তা খুব ভাবি। এবং আমি জানি আমার এই স্বভাব কোনদিন যাবে না...। "
হাইস্কুলে থাকার সময়কার একটা পাতা এটা। বিপরীতমুখী কথাবার্তা।
নিজের কিছু বুঝি না বলে আবার একটা বৈশিষ্ট্য ঠিকই বুঝে ফেলেছি। তবে তৎকালীন বাকশৈলী দেখে একটু মুগ্ধ হলাম বৈকি।
বড়কালের কোন ডায়রি নেই আমার। আর থাকলেও বুড়ো হয়ে সেটা নিয়ে হাসতাম না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।