আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ত্রিভুজের পাল্লায় আমি!

এইখানে শায়িত আছেন বাংলা ব্লগ ইতিহাসের কলঙ্ক...
২০ শে জুন, ২০০৯ - আমার সর্বশেষ পোস্ট। আর তারপরে আজকের এই পোস্ট। এই দীর্ঘসময় ধরে আমার কোন পোস্ট না আসা ও ব্লগে প্রায় অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কোন নির্দিষ্ট কারন নেই, বরং কারনের সংখ্যাটা একাধিক। ২০ জুনের পর আমি প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। মৌসুমী জ্বর আর সর্দি আমাকে পুরোপুরি কাবু করে ফেলেছিলো।

ফলস্বরূপ টানা ১ সপ্তাহের মতো সময়কাল টানা বিছানায় বলতে গেলে। এর মধ্যে মাঝখানে (সম্ভবতঃ ২৬ জুন) একটি পোস্টও দিয়েছিলাম আমার অসুস্থতা নিয়ে। পরে অত্যাধিক ছোট বিধায় পোস্টটি মুছেও দেই। এরপর ধীরে ধীরে সুস্থ হই কিন্তু পোস্ট দেয়ার মন করে না কোন এক অদ্ভূত কারনে, কি নিয়ে লিখবো তাও ভেবে পাই না। আর তার উপর ছিলো পড়াশোনা।

সব মিলিয়ে ব্লগ থেকে একরকম বিচ্ছিন্নই হয়ে যাই। সবমিলিয়ে খানিকটা ইচ্ছা আর অনিচ্ছা মিলিয়েই এই দীর্ঘ অনুপস্থিতি। এরপর ধীরে ধীরে ব্লগে আসার মতো সময় হাতে এলো, কিছু পোস্ট লেখার আইডিয়াও মাথায় এলো - কিন্তু বাধ সাধলো গ্রামীণফোন। আমি বাসায় আমার N70 দিয়ে গ্রামীণফোণের প্রিপেইড কানেকশনে পি২ প্যাকেজটা দিয়ে নেট ব্যবহার করি। ৮ জুলাই সকাল থেকে কোন এক অদ্ভূত কারনে আমার নেটের স্পিডে ধস নামে, স্পিড এমনই কম হয়ে যায় যে গুগল খুলতেও ১ মিনিট লাগে প্রায় - নেট নাই বলা যেতে পারে।

বাসার বাইরে বেরিয়ে অন্য এলাকায় গেলাম। অবাক কান্ড সমস্যা শুধু আমার এলাকায়। বাসায় ফিরে ঐ স্লো নেট স্পিড দিয়েই আধা ঘন্টাখানেক চেষ্টার পর কোনোমতে জিপির অনলাইন চ্যাটে ঢুকলাম, কাস্টমার ম্যানেজারকে যেই সমস্যাটার কথাটা বলতে যাবো অমনি গেলো লাইন ডিসকানেক্ট হয়ে। বুঝলাম এখন গাঁটের টাকা খরচিয়ে জিপিকে অভিযোগ জানাতে হবে। দিলাম মায়ের ফোন থেকে ১২১ এ কল, শুরু হলো জিপির সেই পরিচিত টুং-টাং/ভুং-ভাং।

কাস্টমার ম্যানেজারকে সমস্যার কথা বলতেই উনি বললেন উনি কলটা উনাদের EDGE/GPRS Section এ ট্রান্সফার করে দিচ্ছেন। ট্রান্সফার করলেন কল - রিং হচ্ছে হচ্ছে.........কিন্তু কারো ধরার নামও নেই। টানা ১ মিনিটের উপরে রিং হওয়ার পর বিরক্ত হয়ে ফোন রেখে দিলাম। রাতে দিলাম আবার কল। এবারে ধরলেন তারা কল, সমস্যার কথা শুনে বললেন তারা টেকনিক্যাল টিমকে জানিয়েছেন বিষয়টা।

তারপর কেটে গেলো ২ দিন। হঠাৎই দেখি সমস্যা ঠিক। জিপি থেকে জনৈকা ফারজানা নামের সুকন্ঠী নারী ফোন করে জিজ্ঞেস করেন - "স্যার, সব ঠিক আছে তো!" আমিও গদগদ হয়ে লুলীয় ভঙ্গিতে বলি - "হ্যাঁ, ঠিক আছে!"............সুকন্ঠী বলেন - "গ্রামীণফোনের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ!" ফোন রাখি, মত্ত হই ডাউনলোডে.........পোস্ট লিখি, ড্রাফট করি। ১২ তারিখ ভোর রাতে উবুন্টুর আপডেট ডাউনলোড করছি। হঠাৎই চলে গেলো নেট।

ভাবলাম উবুন্টুর কোন সমস্যা নাতো? ঢুকলাম এক্সপি দিয়ে। নাহ্! একই সমস্যা! আর এবার কম স্পিড তো দূরে থাক, নেটে কানেক্টই হয় না। গেলো মেজাজ আবার বিগড়ে! পরের দিন বের হলাম বাসার বাইরে, দেখলাম সেই একই কাহিনী। অন্য এলাকায় নেট সুন্দরভাবে কাজ করে, কিন্তু আমার এলাকায় এলেই কেন যেনো তার মেজাজ বিগড়ে যায়। বাসায় ফিরে ফোন দিলাম গ্রামীণফোনে, এবার ওরা নয় আমি নিজেই বললাম ফোন EDGE/GPRS Section এ ট্রান্সফার করতে।

ভেসে আসলো সুকন্ঠী এক নারী কন্ঠ - "গ্রামীণফোন থেকে ***** বলছি, কিভাবে সাহায্য করতে পারি?" বুঝলাম এই দফা কপালে খারাপই আছে। আগেই বলে রাখি মেয়েদের প্রতি আমার কোন সুপ্ত আক্রোশ বা রোষানল নেই, কিন্তু ঐতিহ্যগতভাবেই জিপির EDGE/GPRS Section এর মেয়ে কাস্টমার ম্যানেজাররা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোন সমস্যার সমাধান তো দেয়ই না, উল্টো অতি বেসিক কিছু প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে (অন্ততঃ আমার ১ম দিন থেকেই জিপির ইন্টারনেট সার্ভিস ব্যবহারের অভিজ্ঞতা তাই বলে)। আমি খুলে বললাম সমস্যা তাকে। শুরু হলো প্রশ্নোত্তর পর্ব: কোন এলাকা, কোন হ্যান্ডসেট, কবে থেকে সমস্যা, আমার বিল্ডিং কতো তলা, আমি কতো তলায় থাকি.....ইত্যাদি। কিন্তু এরপরে যা করলেন তা রীতিমতো হাস্যকর! আমাকে বললেন ফোন থেকে আমার সব কনফিগারেশন সেটিং মুছতে।

আমি তাকে শত চেষ্টা করেও বুঝাতে পারলাম না যে অন্য এলাকায় যেহেতু নেট ঠিকভাবে কাজ করছে তাই এটা কনফিগারেশন সেটিংসের সমস্যা হতে পারে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সেটিংসতো মোছালেনই, নতুন করে সেটিংস পাঠালেন, সেগুলো সেইভ করালেন এমনকি আমাকে নতুন করে পি২ তে রেজিস্ট্রেশনও করালেন (টাকা লাগে নাই), ফোন অন-অফ করালেন ২ বার। মনে হয় আমাকে তিনি বলা বাদ রেখেছিলেন ফোনটা হাতে নিয়ে সোফার উপর লাফাতে লাফাতে চেষ্টা করতে। আমি ততোক্ষণে মনে মনে হাসছি।

এতোকিছুর পর কোন সমাধান হলো না - যেই লাউ সেই কদু! অবশেষে তিনি ক্ষান্ত হলেন, বললেন উনি সমস্যাটা উনি তাদের টেকনিক্যাল টিমকে জানাবেন। আবারো শুরু হলো অপেক্ষার পালা.......দিন যায়.....সপ্তাহ যায় কিন্তু আমার নেট আর ফিরে আসে না। মাঝে মাঝে আমি গ্রামীণে ফোন করে খোঁচা দিয়ে ঘুম থেকে জাগাই। শেষে কোন উপায় না দেখে আমি নিজেই মাঠে আই মিন রাস্তায় নামলাম। আগেই বলেছি আমার বাসায় নেট কাজ করে না, ৮ তলা বিল্ডিংয়ের কোন তলাতেই এমনকি ছাদেও না।

হাতে মোবাইল নিয়ে অপেরা মিনি খুলে নামলাম রাস্তায় - আমার বাসাটা ৩টা রাস্তার মোড়ে অবস্থিত। বাসার একদম সামনে যে রাস্তা সেখানেও নেট কাজ করে না। কিন্তু অদ্ভূত ব্যাপার হলো ৩টা রাস্তা ধরেই কিছুদূর গেলে (প্রায় ১২০-১৫০ ফিট) নির্দিষ্ট একটা দূরত্বে নেট কাজ করছে। হাত কাগজ কলম নিয়েই বের হয়েছিলাম। পুরো এলাকা হেঁটে বেরিয়ে বানালাম এক ম্যাপ, ভেবেছিলাম ইমেইল এ্যাড্রেস জোগাড় করা সম্ভব হলে এটা জিপির টেকনিক্যাল টিমের কাছে ইমেইল করবো।

ম্যাপটা আপনিই দেখুন না একবার - বড় ও স্পষ্ট করে দেখতে: View this link ম্যাপে সবুজ রঙের ঘর চিহ্নিত অংশটা আমার বাসা, সাদা অংশগুলোতে নেট ঠিকভাবেই কাজ করে আর লাল রঙের ত্রিভুজ চিহ্নিত অংশে নেট একেবারেই কাজ করে না। যাহ্! শেষ পর্যন্ত ত্রিভুজ! ম্যাপটা দেখে মনে মনে খানিকক্ষণ কি যেনো চিন্তা করলাম, তারপর তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে হেসে আপনমনেই বলে উঠলাম - "নাহ্, এটা সম্ভব না!"। জিপিকে আবারো ফোন করে জানালাম আমার এই আবিষ্কার সম্পর্কে। তারা বললেন এটা নিশ্চয়ই কোন ক্ষুদ্র সমস্যা। সম্ভবতঃ ২৪ তারিখে জিপি ফোন দিয়ে জানালো টেকনিক্যাল টিম আমার সমস্যাটা নিয়ে কাজ করেছে এবং সমস্যা ঠিক হয়ে যাবার কথা।

তারা আমাকে আরো বললো তাদের জানামতে আমার এলাকায় নেট কানেকশন ঠিকমতোই কাজ করছে এবং তাদের কাছে এ ব্যাপারে কোন অভিযোগও নেই। আমি জানালাম সমস্যা আগের মতোই আছে, কোন উন্নতি হয়নি। আমি তাদেরকে বুঝিয়ে বললাম সমস্যাটা কতোটা ক্ষুদ্র এলাকা জুড়ে, এই ছোট্ট এলাকার মধ্যে সম্ভবতঃ আমিই একমাত্র জিপির নেট ব্যবহারকারী তাই তাদের কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। ২৭ তারিখে আবার ফোন দিলো তারা, বললো আমার সমস্যাটার ওপর আবারো নাকি কাজ করা হয়েছে। আমার বিরক্তি তখন চরমে, আমি বললাম জিপির মতো একটা প্রতিষ্ঠিত কোম্পানী ১৫ দিন ধরে এরকম একটা সমস্যার সমাধান করতে পারছে না উল্টো আমার পি২ এর ৯৭৭ টাকার অর্ধেকটাই গচ্চা গেলো সেটাতো নিশ্চয়ই জিপি ফেরত দেবে না।

এমনকি এও জিজ্ঞেস করলাম আমার এলাকা থেকে কেউ যদি পি৪ প্যাকেজ (একদিনের জন্য ইন্টারনেট সার্ভিস) চালু করে ব্যবহার করতে চায় তার কি হবে? তার তো পুরো টাকাটাই গচ্চা যাবে। এ প্রশ্নগুলোর কোন জবাব জনৈক কাস্টমার ম্যানেজার আমাকে দিতে পারলেন না। বুঝলাম তাকে বলে তো আসলে লাভ নেই। সে তো তার কাজ ঠিকই করছে। সেদিনের মতো রাখলাম ফোন, তবে রাখার আগে কাস্টমার ম্যানেজার আমাকে নিশ্চিৎ করলেন যে ব্যাপারটা তার High Priority হিসেবে মার্ক করেছেন।

কিন্তু ঐসব কথায় কি আর মন ভরে? আসলো ২৯ জুলাই, আমার পি২ এর মেয়াদ আজই শেষ। সকাল সকাল জিপির থেকে SMS এলো মড়ার ওপর খাড়ার ঘাঁ'র মতো। SMS টা ছিলো - Notice: EDGE P2 is no longer available for new activation from 31-July-2009 for Pre-paid. If you cancel or do not renew P2 then you cannot activate P2 again. এর সহজ সরল বাংলা অর্থ হচ্ছে ৩১ জুলাই ২০০৯ থেকে প্রিপেইড থেকে কেউ পি২ প্যাকেজের (৯৭৭ টাকায় ১ মাস আনলিমিটেড ইন্টারনেট) জন্য নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে না। যারা বর্তমানে প্রিপেইডে পি২ ব্যবহার করছে তাদেরকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট তারিখ পেরোনোর আগেই টাকা ভরে লাইন চালু রাখতে হবে, আর তা না হলে পি২ বাতিল হয়ে যাবে এবং নতুন করে আর চালু করা যাবে না। মেজাজ আমার এবার আরো চরমে উঠলো।

ফোন করলাম ১২১ এ, জিজ্ঞেস করলাম যে আমি লাইন চালু রাখতে চাই এবং তার জন্য টাকা ভরতেও রাজি আছি কিন্তু সেটা আমি করবো কিসের আশায়? আমার এখানে তো নেট কাজই করছে না। আবার নীরব কাস্টমার ম্যানেজার। অনেক ভেবে বললেন যে তার ওখানে নাকি লেখা আছে আমার সমস্যাটার ব্যাপারে জিপির আগামীকাল (৩০ জুলাই) দুপুর ২.৩০টার মধ্যে আবার কাজ করার কথা। উনি আমাকে বললেন আগামীকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে এবং পি১ ব্যবহার করে চেক করতে সমস্যাটা তার মধ্যে চলে যায় কিনা। যদি চলে যায় তারপরে টাকাটা ভরে আবার পি২ চালু করতে।

আর কিইবা বলার ছিলো তার, আমিও মেনে নিলাম। পরের দিন দুপুর ২টায় চেষ্টা করলাম নেটে ঢোকার, দেখলাম কাজ করছে। শিওর হওয়ার জন্য এক বন্ধুর পি২ আমার বাসায় এনে চেক করলাম। টাকা ভরলাম নেটে ঢুকলাম। আর এভাবেই শেষ হলো আমার ১৯ দিন দীর্ঘ নেট-দুঃস্মৃতি।

যারা চিন্তা করছেন কেন এতোদিন অপেক্ষা না করে অন্য কোন নেটওয়ার্কের নেটের লাইন বা বাসায় ব্রডব্যান্ড নেইনি এর কতোগুলো কারন আছে। জিপিতে আমি গড়ে ২৫-৩০ কিলোবাইট/সেকেন্ডের ডাউনলোড স্পিড পাই যা তুলনামূলকভাবে যা অন্য নেটওয়ার্কগুলো তুলনায় বেশ ভালো, নেটটা আমার বাসার চেয়ে বাসার বাইরে পথে থাকলে খুব কাজে লাগে তাই ব্রডব্যান্ড নেইনি। প্রায়ই দেখা যায় পথে থাকা অবস্থায় কাউকে মেইল করা লাগে বা কোন ফাইল সেন্ড করা লাগে। তখন নেট থাকলে বেশ সুবিধা হয়। প্রিপেইড থেকে পি২ তুলে নেয়ার কারনটার সুরাহা করতে পারিনি এখনো।

আমার মাথায়ই ঢুকলো না এমনটা করার কোন যৌক্তিক কারন। এমনিতেই *** গ্রামীণফোন কল করার কাজে ব্যবহার করি না, সিমটা সাথে রেখেছিলাম একমাত্র নেটের জন্য। এখন দেখি সেটাও যাওয়ার ব্যবস্থা প্রায় পাকাপোক্ত। জিপিকে পছন্দ করার শেষ কারনটাও বুঝি এবার প্রায় চলেই গেলো। মাঝখানে কয়েকদিন মোবাইলের অপেরা মিনি দিয়ে ব্লগে ঢুকেছিলাম।

ব্লগে বেশ কিছু কমেন্টও দেখেছিলাম। অনেক ব্লগার আমাকে মেইল করেছেন সেগুলোও দেখেছি। কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ তাদের সবাইকে যারা আমাকে মেইল করে বা ব্লগে কমেন্ট করে আমার খবর নেয়ার চেষ্টা করেছেন। অনেকে আমাকে মিস করে পোস্টও দিয়েছেন - তাদেরকেও অসংখ্য ধন্যবাদ! আর আমিও দুঃখিত সবাইকে অনেকটা ধোঁয়াশার মধ্যে রাখার জন্য। সবাই ভালো থাকুন, হ্যাপি ব্লগিং!
 


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.