আরেকটি অপ্রয়োজনীয় সার্কাসে জড়ালো বাংলাদেশ
ঘড়ির কাঁটা এক ঘন্টা আগানো হল। এই জাতি এমনিতেই নানাবিধে প্যাঁচে আক্রান্ত। নতুন একটি প্যাঁচে জড়ানোর কোন মানেই হয়না, তবু বাংলাদেশ বলে কথা। আমরা অর্থহীন কাজে নিজেকে জড়াতে ভালোবাসি, আর সেই কাজে যদি যথেষ্ট গোলমাল হবার সম্ভাবনা থাকে- তাহলে তো কোন কথাই নেই।
ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে বিদ্যুতের কোন সম্পর্ক নেই।
ঘড়ির কাঁটা এক ঘন্টা এগিয়ে এনে বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে- এই প্রচারণারও কোন মানে নেই। ভর দুপুরেও এয়ারপোর্ট রোডে রাস্তার আলো জ্বলে। ঘড়ির কাঁটা নিয়ে নাড়াচাড়া না করে যদি রাস্তার আলো একটু নিভিয়ে রাখা হতো, তাহলে কিছু কাজের কাজ হতো। ঢাকা শহর এক সময় ছিল মসজিদেও শহর, এখন এটা শপিংমলের শহর। সেখানে রাতদিন বাতি জ্বলছে, এসি চলছে।
এতো শপিংমলের দরকার আছে দেশে ? শপিং কমিয়ে আনলে আমার ধারণা ব্যবসায়ীরাই বেশি লাভবান হবেন।
সরকারী অফিসে যতক্ষণ বিদ্যুত থাকে- ততক্ষণই এর অপচয় হয়। বড় কর্মকর্তা কক্ষেও বাইরে থাকলে তার রুমের এসি, লাইট , ফ্যান সবই চলে।
একসময় বাসাভাড়ার সাথে বিদ্যুত বিল যুক্ত থাকতো। যতই কারেন্ট খরচ হোকনা কেন, মাস শেষে সবমিলিয়ে চারহাজার টাকা বাড়ি ভাড়া।
তখন ভাড়াটিয়ারা ইচ্ছামতো লাইট , ফ্যান অপ্রয়োজনে চালিয়ে রাথতো , এমনকি - আমার মনে পড়ে ঘরে যাতে চোর না আসে এজন্য আমরা লাইট ফ্যান জ্বালিয়ে রেখে গ্রামের বাড়ি থেকে একবার ঘুরে এসেছিলাম সপ্তাহ খানেকের জন্য। বাড়িওয়ালারাও ক্রমশ শেয়ানা হয়ে গেছেন। বিল এখন আলাদা। এখন আমরা এক রুম থেকে আরেক রুমে গেলে লাইট নিভিয়ে যাই।
সরকারী অফিসেও এই নিয়ম চালু করা উচিত।
বিদ্যুত বিল এখন তাদের বেতন থেকে দিতে হবে। এজন্য অবশ্য তাদের বেতন বাড়ানো হবে নতুন একটা খাত তৈরী করে। সমস্ত সরকারী কর্মচারীরা অন্তত; ঐ টাকা বাঁচানোর জন্য বিদ্যুত ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবেন।
এছাড়া এ জাতির খাসলত ভালো করার তেমন কোন উপায় নেই।
সরকারী অফিস এখন দুইদন বন্ধ থাকে।
সপ্তাহে পাঁচদিন সরকারী অফিস খোলা রাখার কোন কারণ নেই। ওটি তিনদিন খোলা রাখলেই হয়। অফিস খোলা থাকলেই অফিসে কাজ হবে- এমন কোন কথা নেই। কাজ হবে তদবিরে, ঘুষ লেনদেনে। কাজেই ঐ সরকারী খামারটি সপ্তাহে তিনদিন খোলা রাখাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ, তাতে রাস্তায় জামজট কমবে, বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে, কর্মকর্তাদের ঘুষ খাওয়ার প্রবণতাও কমবে।
বর্ছর জুড়ে সংসদ অধিবেশন চলারও কোন মানে হয়না। বাজেট ঘোষণার নামে অর্থমন্ত্রি ঘন্টার পর ঘন্টা বক্তব্য দেন। এটি জাতির জন্য , অন্যান্য সাংসদদের জন্য, এমনকি খোদ অর্থমন্ত্রির জন্যও খুবই বিরক্তিকর একটি ব্যাপার। বাজেটের কপি মিডিয়াতে প্রকাশ করলেই যথেষ্ট। এই অর্থহীন আনুষ্ঠানিকতায় কত অর্থ, শ্রমঘন্টা আর বিদ্যুতের অপচয় হয়, সেটি নিয়ে কেউ কথা বলে না, কেউ ভাবে না।
একসঙ্গে কোটি কোটি মাইকে আযান দেওয়ারও কোন মানে হয় না। দুই বর্গকিলোমিটার এলাকায় একসঙ্গে দুইশত মসজিদ থাকাটাই অসামাজিক ও অভব্য একটি ব্যাপার । আর মাইক যন্ত্রটি আগ্নেয়াস্ত্রের মতোই নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। এই যন্ত্রের যথেচ্ছা ব্যাবহার নাগরিকের স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর । আর তাছাড়া এতগুলো মাইক ও মসজিদ _ এগুলো নানাবিধ অপচয়ের একটি মাধ্যম।
তবে নতুন সময় সূচী নিয়ে বড়ো একটা ঘাপলা লাগবে বলে মনে হচ্ছে। সময়সূচীর ব্যাপারটা অনেকেই গুলিয়ে ফেলছেন। অবস্থা হবে ধানমন্ডি এলাকার মতো। সড়ক নম্বর ২ ( নতুন) ৭৬ ( পুরাতন) ।
আগামী সপ্তাহে জুম্মার নামায কয়টায় হবে- সেটি নিয়ে গ্রামেগনজে প্রবল ক্যাঁচাল লাগার সম্ভাবনা।
বাঙালি এমনিতেই বিভাজন প্রিয়। সময়সুচী নিয়ে গোটা বাঙালি মুসলিম উম্মাহ , সিয়া সুন্নী, আহমদীয়, কাদিয়ানির ইত্যাদির মতো আরও দুইভাগে বিভক্ত হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
কথাগুলো খুব আগগুবি শোনাচ্ছে, ঠান্ডা মাথায় ভাবলে বোঝা যায়- এটিই বাস্তবতা।
অপ্রিয় কিছু কথাবলার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।