এখন রাত 11:30 । পাশের ঘরে টিভি থেকে ভেসে আসছে কোজ আপ ওয়ানের রন্টির গান "জন্ম আমার ধন্য হল মাগো" । আজকাল কেন জানি মনে হয় এসব কথাই বানোয়াট । আগামীকাল 16 ই ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। সেই ছোটবেলা থেকেই অনুভূতিগুলো এমন ভাবে গড়ে উঠেছে যে বিজয় দিবস এর আগে মহান কথাটা না লাগিয়ে উচ্চারণ করার কথা মনেই আসেনা।
কিন্তু এই এত বছর পরে যখন চারপাশে আমার সঙ্গী সাথীদেরই কাউকে কাউকে দেখি মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করে কথা বলতে , ক্লাসে দাঁড়িয়ে কোন শিক্ষককে বলতে শুনি মুক্তিযুদ্ধে আসলে বাংলাদেশের বেশি লোক মারা যায়নি বাঙ্গালীরা অতিরঞ্জিত করে বলতে ভালবাসে 30 লক্ষ শহীদের কথা তখন কেমন জানি অদ্ভূত লাগে। নিজামী ও তার চামচাদের মুখ থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ নিয়ে বড় বড় কথা শুনে যতটা না অবাক হই তার থেকেও অনে-ক অনে-ক বেশি অবাক হয়ে যাই এসব শুনে। বিশ্বাসঘাতক রাজাকাররা তো এমন মিথ্যাচার করতেই পারে কিন্তু আমারই এই আশেপাশের চেনা মানুষগুলো কেন বলবে? আমার প্রজন্মের প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস ছিল। আমরা দূর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারব। কিন্তু আজ আমি হতাশ।
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। ছাত্রীজীবনে এমন কিছু ঘটনা চোখের সামনে আমার সাথেই ঘটছে যে সব কিছুর থেকে বিশ্বাস উঠে গিয়েছে। আমারই কিছু সহপাঠী অন্যায়ভাবে ক্লাসের সবাইকে ঠকিয়ে কিভাবে টাকা আত্মসাৎ করছে তা চোখের সামনে দেখছি। কিছু রাজনৈতিক দলের ছাত্রনেতার বিরূদ্ধে আওয়াজ তুলে সত্য কথা বলাতে আমার আরেক সহপাঠীকে পুরো চারটি বছর কিভাবে সবকিছু থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে তাও চোখের সামনে দেখছি। ।
তাদের কথা মত না চললে আমারই আরেক বন্ধুকে হল ছাড়া করার হুমকি দেয় এই এরাই। সব দিকে খালি টাকা খিভাবে মারা যায় তারই চেষ্টা। টাকা টাকা টাকা ..আর দূর্নীতি। আর আমি আমরা? সব দেখে শুনে জেনেও কিছু করতে পারিনা। কিছু করলে তাকে সারাটি জীবন কাটাতে হয় ভয়ে ভয়ে।
যদি ওরা কিছু করে বসে! নিরপেক্ষ থেকে থেকে আমরা জানি কেমন হয়ে গেছি। ধিক আমাদের! আমার পক্ষ থেকে আমি কিছু কিছু কাজের প্রতিবাদ করেছি ..কিন্তু আমি জানি এই অহিংস প্রতিবাদে কোন সমাধান হয়না, ওরা হয়ত আড়ালে আমাকে নিয়ে হাসাহাসিই করে, ভাবে মেয়েটা কি বোকা!! আমি চাই এমন কিছু করতে যাতে একটা সমাধান হয়। কিন্তু সেটা কি? ওদের হাত যে অনেক বড়? আজ খালি বিষ্ময় নিয়ে ভাবি মুক্তিযোদ্ধারা কতটা সাহসী ছিলেন! নিজের প্রাণটাও তাদের কাছে ছিল তুচ্ছ। আজ এই বিজয়ে দিবসে তাই তাদের কাছে আমি ক্ষমা চাই। তাদের কষ্টার্জিত বাংলাদেশের এমন হাল হতে দেখে, চারপাশের চেনা মানুষগুলোকে এভাবে বদলে যেতে দেখেও কিছু করতে পারিনা বলে।
খালি পারি নিজের অক্ষমতার বর্ণনা এই খানে তুলে ধরতে। আমরা ক্ষমারও অযোগ্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।