এডিট করুন
আমার বন্ধু রাজু। একসাথে ক্লাস ফাইভে পড়ি তখন। হঠাৎ তার মনে হল আমাদের ক্লাসের " " পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী বালিকা। রাজুর মনে বৈশাখের ঘনঘটা লাগল। সে আর তর সইতে পারল না।
মনের কথা প্রিয়াকে তার বলা চাইই চাই। একদিন " "দের বাসার সামনের মাঠে যেয়ে রাজু উপস্থিত হল। "_"'র পরিবার রাজুকে চিনত। সে ""_"কে বাড়ী থেকে ডেকে আনল মাঠে। বলল তোমার সাথে একটা জরুরী কথা আছে।
আতঃপর নিজেদের আড়াল করার জন্য রাজু "_"কে নিয়ে মাঠে দাঁড়িয়ে ঘাস খাচ্ছে এমন এক গরুকে বেড়া হিসেবে ব্যবহার করে সেই গরুর পাশে গিয়ে দাড়াল। অতঃপর রাজু বলল তার মনের কথা। জীবনের প্রথম প্রেমের প্রকাশ করল সে। ঐদিকে "_" কিছু বলে না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
আর মিটিমিটি হাসে। রাজু অনেকক্ষণ অপেক্ষা করল উত্তর পাবার জন্য। কিন্তু "_" কিছুই বলছে না। মাথা নিচু করে শুধু মিটিমিটি হাসছে। বালক ভাবিল বালিকা লজ্জা পাইতেছে।
তাই মুখ ফুটিয়া বলিতেছে না। বালিকার হাসিকে সে সম্মতি হিসাবে নিয়ে স্থানত্যাগ করিল। প্রস্থান করিবার সময় বলিয়া গেল "দেখা হবে"। বালিকা স্থাণুর ন্যায় দাড়াইয়া রহিল। কিন্তু বালিকার মন অবগাহন এত সরল নহে।
বালক পৃথিবীর মানবিক জটিলতার প্রতি সম্যক অবগত নহে। হর্ষপূর্ণ মনে সে বাড়ী ফিরিয়াছিল। তাহার মনের আকাশে উজ্জ্বল রৌদ্রালকে বিচরণ করিতে ছিল লাল, নীল আবেগের ঘুড্ডি। বৈশাখের প্রলংকরী ঝড়ের ন্যায় তাহার আকাশে সহসাই উপস্থিত হইল রাশি রাশি মেঘ। বালিকা তাহার পিতা মাতাকে ঘটনা সম্পর্কে অবগত করিয়াছিল।
বাল্যপ্রেমের জোয়ার তাহার মনে কিছুমাত্র নাড়া দিতে পারে নাই। বালিকার মাতা, জেষ্ঠ ভ্রাতা এবং আরও দুই এক জন পরবর্তী দিবসে বালিকাকে নিয়া সপরিবারে বালকের বাসায় উপস্থিত হইল। দূর্ভাগ্য বা সৌভাগ্যক্রমে বালকের পিতা মাতা উভয়ই গৃহে উপস্থিত ছিলেন। বালিকার মাতা বালকের মাতা পিতাকে সবিস্তারে ঘটনা বর্ণনা করিয়া আশু প্রতিকার চাহিলেন। বালকের মাতা পিতা উভয়ই আশ্বাস প্রদান করিলেন যে তাহারা তাহাদের পুত্রকে সামলাইয়া রাখিবেন এবং তাহাদের পুত্র ভবিষ্যতে তাহাদের কন্যাকে কোনরুপ বিরক্ত বা উত্যক্ত করিবে না।
তাহারা হৃষ্টচিত্তে বাটী ফিরিয়া গেলেন। বালকের মাতা পিতা বালককে শুধু এইটুকু বলিলেন, বাবা আর এইরকম করিসনে। বালক অর্বাচিন নহে। সে ভবিষ্যতে উক্ত বালিকাকে আর বিরক্ত করে নাই, এমনকি তার সহিত কথা বলারও চেষ্টা করে নাই। বালক বড়ই আঘাত পাইয়াছিল।
তাহার ভালবাসা ছিল প্রকৃত। তাহাতে কোনরুপ খাদ ছিল না। এইরুপে সর্বসমক্ষে বালিকা তাহাকে অপমান না করিলেই পারিত। বলিয়া দিলেই হইত তোমাকে আমার মনে ধরে নাই। সে কোনরুপ উপদ্রব করিত না।
বালিকা তাহাকে বড়ই আঘাত দিয়াছিল।
***** পুরান আমলের সাহিত্য পইড়া পইড়া অবস্থা খারাপ হইয়া গেছে। লেখতে গেলে খালি সাধু ভাষা আইয়া পড়ে।
আমার এই কাহিনীটা আমার একান্ত বন্ধু আশিকের। আশিক আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু।
জীবনে কোনদিন বিয়ে করলেও আমি আর বঊ থেকে আশিককে বেশী ভালবাসব। আমি ওর জন্য সব ত্যাগ করতে পারি এবং ভাইস ভার্সা। তা ও আর আমি একই সাথে প্রেমে পড়েছিলাম ক্লাস সেভেনে। আমার কাহিনী হয়ত আগে পড়েছেন। আমি কাউকে প্রপোজ করতে পারি নাই।
কিন্তু ও প্রপোজ করে বসেছিল। মেয়েটা ছিল আমাদের ক্লাসের ফার্ষ্ট গার্ল। ক্লাস সেভেনে পড়ি। একদিন আমি ওদের বাসায় গেলাম ঘুরতে। ও আমাকে একটা কলম দেখায়।
আমি বলি কি হইছে? ও বলে দোস্ত আমি প্রেমে পইড়া গেছি। আমি বললাম, কার প্রেমে পড়ছস? ও বলল "_"র। বুঝলাম কলম কার। আমি আর আশিক গত কিছুদিন ধরেই "_" এবং "_" ক্লাসের সেরা দুই ছাত্রীর সাথে ঝগড়া করে আসছি। আমরা সবসময় ক্লাসে চিল্লা ফাল্লা করি এতে উনাদের অধ্যায়নের ব্যাঘাত ঘটে।
শুধু আমি ক্যাপ্টেন বলে ওরা কিছু করতে পারে না। একদিন নাকি আশিকরে চাষা বলে গালিও দিছে "_"। উত্তরে আশিক বলেছে, তোমরা যে থালায় ভাত খাও সেই থালাতেই ফুটা কর। চাষার পরিশ্রমের চাল খাইয়া এখন মানুষরে চাষা বলে গালি দেও। তা যাই হোক আমার মনে ক্ষীণ সন্দেহ ছিল এত ঝগড়া ভাল না।
কারণ বইপত্রে, ইতিহাসে, ছিনেমায় বেশী ঝগড়া হইল প্রেমের লক্ষন। আমার সন্দেহ সত্য হইল। দোস্ত আমার "_" ব্যাগ থিকা একটা ময়লা দুই টাকার নোটও চুরি করছিল। রাইতে চুলার পাশে বইসা সে কলম আর নোট দুইটা দেখত। আমরা দুই লেবেন্ডিস বন্ধু ক্লাসের দুই সেরা ছাত্রীর প্রেমে পড়িয়াছিলাম একদা।
কই গেল সেই সব দিন। তা আশিক আমার মতই নীরবে ভালবেসে যেতে থাকে। কিন্তু ক্লাস টেনে উঠে আর সহ্য করতে পারে না ও। বলে দোস্ত এইবার যদি না কইতে পারি তাইলে আর জীবনেও কইতে পারুম না। আমি বললাম যা বল গিয়া।
ও বলে দোস্ত তোমাগোরে আমার লগে থাকতে হইব। আমি ভাবি কি করা যায়। কারন একটা মেয়েরে এইভাবে দল বাইন্ধা ভালবাসার পয়গাম দেওয়াটা আমার বিবেকে সইতে ছিল না। বেচারী না ভয় পাইয়া আবার দৌড় দেয়। তা কি আর করা।
আমরা আছিলাম ষ্ট্রেট কাট পোলাপান। সোজা একদিন কোচিং ক্লাস শেষে বেলা দশ ঘটিকায় "_" যখন বাড়ী ফিরিয়া যাইতে ছিল তখন আমরা চার পাচজন পথিমধ্যে দৌড়াইয়া গিয়া পিছু ডাইকা "_" এবং তার চিরকালীন দুই বান্ধবীকে থামাইলাম। বলিলাম আশিক তোমাকে কিছু বলতে চায়। মনে রাইখেন আমি আগে বলেছি যে আমরা ছিলাম ষ্ট্রেট কাট পোলাপান। আশিক বলিলঃ
আই ডু লাভ ইউ।
ডু ইউ লাভ মি? ইয়েস অর নো।
"_" বলিলঃ
নো!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!(হৃদয় ভাঙ্গার আওয়াজ)
আমরা বলিলাম ঠিক আছে, কোন সমস্যা নাই। অসুবিধার জন্য দুঃখিত।
আশিক বাসায় আসিয়া সেইদিন রাতে কলম আর টাকাটা জলন্ত উনুনে নিক্ষেপ করিল।
পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই,
প্রেম বলে কিছু নেই।
মন তোরে দিয়াছিলাম বন্ধু
আর দিলাম দুই ফোটা চোখের জল
হইলি না তুই করুণাসিন্ধু
শুধু দিলি এই মনে ব্যাথার কোলাহল
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।