রশনি মুক্তি যেদিন কাদের মোল্লার বিচারের রায় হল, সেদিন প্রচণ্ড মাথা গরম করে, অপরিসীম ঘৃণা নিয়ে, রাগে ফুটতে ফুটতে ব্লগে লিখেছিলাম, নিজের দুঃখ অনেকের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য। সেদিন ভাবিনি, বিভিন্ন ব্লগারের দুঃখগুলো পরবর্তীতে বাংলার প্রতিটি মানুষের প্রতিবাদী কণ্ঠে মিলেমিশে একাকার হয়ে এতবড় ঝড় তুলবে। আমি অভিভূত এমন গণজাগরণে। আমি গর্বিত।
শাহবাগে আন্দোলন যখন শুরু হল তখন হলে (টাঙ্গাইল) ছিলাম, পরে ঢাকা গেলাম খুব তাড়াহুড়ো করে।
বাসা (ঢাকা) থেকে বেরোনোর সময় মাকে বললাম, “প্রজন্ম চত্বরে যাচ্ছি। " মা আনন্দিত হয়ে খুব জোর দিয়ে বলে উঠলেন, “নিশ্চয়ই। আমি যদি সুস্থ থাকতাম তাহলে আজ আমিও যেতাম, তোমাদের তারুণ্যেএক হয়ে যেতাম। এ তো আমাদের জন্মের ঋণ। যেতেই হবে।
তোমার বাবা যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে আমি নিশ্চিত তিনিও যেতেন। তুমি কি জানো, নব্বইয়ে জন্মেছিলে বলে ভালবেসে তোমার বাবা তোমার নাম রেখেছিলেন মুক্তি? নামের মর্যাদা রক্ষার এমন সুযোগ জীবনে আর কখনও নাও পেতে পারো। তাই দেরি না করে এখনি যাও। ” ছোট ভাই বলে উঠল, “আমার পরীক্ষা (এসএসসি) না থাকলে আমিও যেতাম তোমার সাথে আপু। ”
প্রজন্ম চত্বর থেকে ফিরে আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) শুরু করলাম আন্দোলন।
সারাদিন পরে রাতে যখন মায়ের সাথে ফোনে কথা হচ্ছিল, তখন স্লোগান দিয়ে আর বক্তৃতাবাজি করে কণ্ঠ মাশাআল্লাহ ফাটা বাঁশ। ভাবলাম, বুঝি বা আম্মুর বকুনি খাবো। অথচ আমায় অবাক করে মা বললেন, “গলাটাকে সুস্থ রেখো, যতদিন পর্যন্ত রাজাকারগুলোর ফাঁসি না হবে ততদিন পর্যন্ত গলাবাজি করতে হবে ত। আমি চাই, তোমার কণ্ঠ না ভাঙুক, বরং কুলাঙ্গারগুলোর কানের পর্দা ফেটে যাক। " আমি গর্বিত আমার মাকে নিয়ে।
এজন্যই আমরা তরুণ প্রজন্ম জেগে উঠেছি, কেননা এমন সব মায়েদেরই সন্তান আমরা। আমরা কখনও বাংলা মায়ের প্রতি আমাদের জন্মের ঋণের অমর্যাদা করতে পারব না। আমাদের বাংলা মায়ের অপমান আর মুখ বুজে সইব না আমরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।