ছোটবেলা থেকেই নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়ের টেনিদার দারুন ভক্ত আমি,আরেকটু বড় হতেই শিবরাম চক্রবর্তী। তার লেখা পড়তে শুরু করার নিদিষ্ট একটা বয়স লাগে। অনেকেই খুব ছোট বাচ্চাদের শিবরাম কিনে দেন। আমি শিবরাম চক্রবর্তী কে ছোটদের লেখক ভাবিনা। তার ‘লেখা লেখা খেলা’ (pun)বোঝার বুদ্ধি ছোটদের থাকে না।
সত্যি কথা বলতে কি শিবরামের লেখার ধরন বাংলা সাহিত্যে দুর্লভ। শিবরাম যে পড়েনি সে বাংলা গল্পের রসভান্ডার খুঁজে পায়নি,সে হতভাগ্য। আমার মাঝে মাঝে আফসোস হয়, হায় আগে আগেই কেন শিবরাম চক্রবর্তী পড়া হয়ে গেল(আমি শিবরামে অনুরক্ত তা বুঝে আপনাদের নিশ্চয় বিরক্তির সীমা নেই!)। আমি আরেকজনের ভক্ত তিনি শীর্ষেন্দু ।
তাই গোল দিঘির ময়দান,গড়ের মাঠ,এসপ্লানেড,ধর্মতলা,শোভাবাজার, নিউ মার্কেট,বেহালা,কালিঘাট,বেলেঘড়িয়া,নিউ আলিপুর, ট্রাম ,পাতালট্রেন এইসব নিয়ে কোলকাতার একটা ছবি আমার ভেতরে ছিল।
আমি ছবি মেলাচ্ছিলাম।
মার্কুইস স্ট্রীট কে ওখানকার লোকেরা বলে মার্কো স্ট্রীট। ওখানেই বাংলাদেশ থেকে সব বাস গুলো গিয়ে থামে। আমাদের হোটেল প্যারাডাইস ইন্টারন্যাশনাল ওই রোডেই। আমাদের হোটেলের সামনেই আছে আরেকটা হোটেল প্যারাডাইস।
নামের শেষে ইন্টারন্যাশনালের বদলে রেস্টহাউজ লেখা। ওখানে ভুলেও ঢুকবেন না। একদম পুরনো বিল্ডিং,আধুনিক সুযোগ সুবিধা নেই,ব্যবস্থাপনাও ভালো না।
হোটেলে ব্যাগট্যাগ রেখে চটজলদি গোসল সেরে নিলাম।
দুপুরের খাবারের সময় পেরিয়ে যাচ্ছিল আমাদের গাইড সঞ্জুদা তাড়া দিলেন।
আমরা তাড়াতাড়ি নিচে নেমে একটু হেঁটে খাবার জন্য ঢুকলাম দাওয়াত নামের এক রেস্টুরেন্টে। মালিক উর্দুভাষী এবং মুসলমান। খুব ভীড় চলছে তখনো। আমরা বসতেই খাবার চলে আসলো,অনেক দিনপরে পাবদা মাছ খেলাম। হোটেলের রান্না অসম্ভব ভালো।
দাম ও খুব বেশি নয়। তবে ওয়েটার আর মালিকের ব্যাবহার ভালো নয়! হোটেলে অনেক লোকজন হয় এ কারনে মনে হয় দেমাগ বেশি। তবে উর্দুভাষীরা জন্মগত ভাবে ক্রিমিনাল হওয়ায় বিষয়টা মেনে নিয়েছিলাম (আমার কাছে মনে হয় উর্দু ভাষীদের নিয়ে জিনেটিকসের আলাদা শাখা খোলা যেতে পারে)।
হ্যা ! ওখানে বহুবার খেয়েছি।
আমাদের হাতে সময় বেশি ছিল না।
আজ রাতেই আমরা ট্রেনে করে আগ্রার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হব। সঞ্জু দা বৌদির কাছ থেকে বিদায় নেয়ার জন্য চলে গেলেন বাড়িতে। আমরা হোটেলে সামান্য রেস্ট নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম কলকাতা দেখতে। হাঁটা পথেই চল্লাম। স্যার আর ম্যাম কোলকাতা কে ভালোভাবেই চেনেন।
আমরা অনুসরন করছিলাম। হঠাৎ দেখলাম ট্রাম আসছে! দুটো মাত্র বগি নিয়ে রাস্তার মাঝখান দিয়ে ধীরে ধীরে ঘন্টা বাজাতে বাজাতে চলে গেল। ট্রাম থেকে একটা এন্টেনার মত তার বেরিয়ে আছে সেটি ওপরের বিদ্যুতের নগ্ন তার ঘষতে ঘষতে যাচ্ছে। তবে একদম শম্বুক গতি ,সামনে একটা রিকসা দাড়ালেও থেমে যায়। এই ট্রামের চাপায় প্রিয় কবি জীবনান্দ দাশ কি করে মারা গেলেন ভেবে পাইনা।
ভারতের ট্রাম ও ট্রেন প্রায় সবই বৈদ্যুতিক। আমাদের দেশের বিদ্যুৎ ব্যাবস্থার কথা ভেবে ভারি খারাপ লাগলো। হাঁটতে হাঁটতে চারপাশ দেখছিলাম , কেমন জানি পুরনো গন্ধ আছে সবখানটায় । সারি সারি দোকানপাট,রাস্তায় হকারের হাক ডাক,চায়ের দোকান- ঢাকার সাথে মিল অনেকটাই। মানুষে টানা রিকসা দেখলাম অজস্র।
দেখলাম দুই স্বাস্থ্যবান বিদেশি কে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এক বুড়ো রিকসাওয়ালা। ভারি অমানবিক লাগছিল দেখতে। পরে শুনলাম এই রিকসাগুলো একটু বিশেষ ধরনের ,চাকায় টিউব নেই। টানতে কষ্ট হয়না অতটা। রিক্সাওয়ালাদের ইনকাম ও খারাপ নয়।
রাস্তা ঘাটে প্রচুর গাড়ি। বেশিরভাগই পুরনো হলুদ ট্যাক্সি। ঢাকায় এসব ট্যাক্সিতে পয়সা দিলেও মানুষ চাপবেনা। আরো আছে মোটর বাইক। পুরো ইন্ডিয়াকেই আমার কাছে মোটর বাইক সর্বস্ব মনে হয়েছে।
এছাড়া দেখলাম রাস্তা ভর্তি অসংখ্য অ্যাম্বাসেডর, টাটা , ভারতীয় হুন্দাই আর কয়েকটা শেভ্রলেট । কোথাও বাংলাদেশের মত টয়োটা,নিশান, কিংবা হোন্ডার গাড়ি চোখে পড়লোনা। শুনলাম ওদের সরকারের বড়কর্তারা তো বটেই মন্ত্রিরাও আ্যাম্বাসেডরে চাপেন।
এরই মধ্য সন্ধ্যা নেমেছে। সাথে সাথে ভীড় ও বেড়েছে অনেকটা।
রাস্তায় হাঁটা দায়। রাত নামার সাথে সাথে কোলকাতা ও ভীষন আলোকজ্জল হয়ে উঠল। হাটতে হাটতে চলে এসেছি বিড়লা প্লানেটরিয়ামের সামনে।
রাস্তার লোকজনের পোষাক-আশাক বিশেষ করে মেয়েদের পোষাক বেশ আধুনিক। জিন্সের টাইট প্যান্ট,আটো সাটো গেঞ্জি,শার্ট।
হিন্দি ছবির প্রভাব। লোকজন কে দেখলাম ‘প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে প্রতি অঙ্গ মোর ’ টাইপ চেহারা নিয়ে তাকাচ্ছে।
ট্রেনের সময় হয়ে আসছিল । আমরা হোটেল মুখো হলাম। হাঁটতে লাগলাম আবার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।