চোখ কেড়েছে চোখ ,উড়িয়ে দিলাম ঝরা পাতার শোক...। ১ম পর্ব--কালের কপোলে শিশির বিন্দু, তাজমহল-আগ্রা
২য় পর্ব--আগ্রা ফোর্ট +ফতেপুর সিক্রি
৩য় পর্ব--রূপবান রাজস্থান-জয়পুর
৪র্থ পর্ব--রূপবান রাজস্থান-বিড়লা মন্দির,সিটি প্যালেস,জন্তর-মন্তর,অম্বর প্যালেস
৫ম পর্ব
২৩শে সেপ্টেম্বর । বেশ রোদ ঝলমলে একটা দিনের শুরু হল দিল্লীতে । সকাল সকাল নাস্তা করে আমরা তৈরি হয়ে নিলাম,আজ সারাদিন দিল্লী ঘুরে দেখার পালা
টুরিস্ট বাসে করে যাত্রা । প্রথমেই দিল্লি ১ নম্বর,সফদর জং রোডের ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল
ভারতের প্রথম ও আজ পর্যন্ত একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রী ,প্রয়াত ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী গান্ধীর বাসভবনটিকেই ব্যাবহার করা হচ্ছে মিউজিয়াম হিসেবে ।
এর প্রতিটি ঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে ইন্দিরা গান্ধী, রাজিব গান্ধী সহ গান্ধী পরিবারের সদস্যদের ব্যাবহার করা নানা জিনিস,বিভিন্ন সময় পাওয়া পুরষ্কার ও সম্মাননা,উপহার সামগ্রী ইত্যাদি ।
ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা
সার্ক সম্মাননা
ভারত সফরকালে বিভিন্ন উচ্চপদস্থ ব্যাক্তির কাছ থেকে পাওয়া উপহার সামগ্রী
সৌদি বাদশাহের দেওয়া বহু মূল্যবান নিরেট সোনার তৈরি হীরা খচিত ছোরা ও তরবারি
ইন্দিরা গান্ধীর সংগ্রহীত নানা রকম পাথর
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কিছু নিউস পেপারের কাটিং আর বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখে ভাল লাগলো । গর্বিত হলাম বাংলাদেশী হিসেবে ।
কিছু স্মৃতি,কিছু ছবি---->
সাবেক এই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মারা যান এই বাড়িটিতেই । ৩১ অক্টোবর নিজের দেহরক্ষীদের হাতেই নির্মমভাবে জীবন দিতে হয় তাকে।
জীবনের শেষ মুহূর্তে ইন্দিরা গান্ধী যে রাস্তাটুকু হেঁটেছিলেন,সেটা এখানে বাঁধাই করা আছে ক্রিস্টাল দিয়ে । যেখানে গুলি খেয়ে উনি পরে গিয়েছিলেন,সেখানটাও চিহ্নিত করা।
জীবনের শেষ সময়ে এই শাড়িটিই ছিল তাঁর পরনে,সাথে ঝোলা ব্যাগ
শুধু ঐতিহাসিক কারণেই নয়,শ্রীমতী গান্ধীর এই বাড়িটি সৌন্দর্যেও বেশ মনোরম
ইন্দিরা গান্ধীকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্মাননা’ দেওয়া হয়েছে। শুনেছি সেটা এখন নয়াদিল্লির ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল ট্রাস্টেই রাখা হয়েছে। প্রতিদিনই মিউজিয়ামটাতে নানা দেশের পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে।
স্মারকটি ওই সংগ্রহশালায় থাকায় দেশ বিদেশের পর্যটকেরাও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্মারক দেখার সুযোগ পাচ্ছে।
দুপুরে ইন্ডিয়া গেটের সামনে আমাদের যাত্রা বিরতি দেয়া হল । দুপুরের খাবারটাও সেরে নিলাম সামনের মাঠে বসে । পাশেই একটা ছোট পুকুর মত,বেশ সুন্দর একটা ফোয়ারাও আছে।
দারুন পিকনিক পিকনিক মজা হল।
খাবার আমাদের সাথেই ছিল। ফ্রায়েড রাইস,চিলি চিকেন আর প্রন । খাওয়া সেরে দেখে নিলাম ৪২ মিটার উঁচু ওয়ার মেমোরিয়াল,ইন্ডিয়া গেট ।
ইন্ডিয়া গেটের সামনে আমরা । লাফ দিছিলাম ,কিন্তু ছবিটা ঠিকমত তুলতে পারে নাই গাইড ভাইয়া
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত প্রায় ৯০ হাজার ভারতীয় সৈন্যের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে এটি ।
এই স্মৃতিসৌধটির নকশা করেন মি. লটিয়েন্স। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে যার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ডিউক অব বেনাউট। দশ বছর ধরে ইন্ডিয়া গেটের নির্মাণ কাজ চলে। আমাদের দেশের শিখা অনির্বাণের মত ওখানেও রয়েছে একটি সদা প্রজ্বলিত শিখা ।
ইন্ডিয়া গেটের আলোকসজ্জা নাকি রাতের বেলা সবাইকে আকৃষ্ট করে।
সন্ধ্যাবেলা ভ্রমণের জন্য ইন্ডিয়া গেট অন্যতম একটি ঐতিহাসিক স্থান। মুভি টুভিতে অনেক দেখেছি,যদিও সামনাসামনি আমাদের সেটা দেখা হলনা ।
দুপুরের পরে গেলাম কুতুব মিনারে । কুতুব উদ্দিন আইবেকের ভারত জয়ের স্মৃতি স্তম্ভ এই মিনার । কুতুব মিনার দিয়েই লোকে দিল্লীকে চেনে ।
দিল্লীর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হল মেহেরউলীতে অবস্থিত এই মিনার । মেহেরউলীতে অনেক গুলো রাজবংশের উত্থান পতন হয়েছে। মোগল আমলের আগে দিল্লীতে যতগুলো শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তার সবগুলো এই শহরকে ঘিরেই। খিলজি, তুঘলগ, মামলুক, লোদী ইত্যাদি বংশ এখানে বসেই দিল্লী শাসন করেছিলেন। এখানে রাজ বংশের কবরস্থান আছে।
দিল্লী রাজধানীর গোড়াপত্তন হয়েছিল মেহেরুলীকে ঘিরেই।
কুতুব মিনার পোড়া মাটি তথা ইট নির্মিত বিশ্ব সেরা মিনার।
১১৯৩ সালে কুতুব উদ্দিন আইবেক, এই মিনার বানানো শুরু করেন। ১৩৮৬ সালে ফিরোজ শাহ তুঘলুগ মিনারের মাথার অংশ শেষ করেন।
৪৭ ফিট ব্যাসের এই স্তম্ভটি কোণ এর মত উপরে উঠে গেছে।
চূড়ার দিকে এর ব্যাস হয়ে গেছে মাত্র ৯ ফিট। এক্কেবারে ওপরে ওঠার জন্য ৩৬০ ধাপের একটা ঘোরানো সিঁড়ি আছে, যেটা এখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ।
কুতুব মিনারের আরবি নকশা
মিনারটি পাঁচটি ভাগে বিভক্ত। চারটি ঝুল বারান্দা রয়েছে চারটি ধাপে। এগুলোতে নিখুঁত ভাবে খোদাই করা আছে পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও অন্যান্য নকশা ।
কুতুব কমপ্লেক্সে প্রচুর গাছ পালা আছে।
সোজা গেলে আলাই মিনার। এই মিনারটা মাত্র ৮০ ফুট উচু। কিন্তু এটা শুধুই বেজ লাইন।
সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজী এর কাজ শুরু করেছিলেন, ইচ্ছে ছিল কুতুব মিনারের চেয়েও অনেক বড় নতুন মিনার তৈরির।
কিন্তু কাজটা অসমাপ্ত থেকে যায়।
আলাউদ্দিন খিলজীর সমাধী, সম্রাট ইলতুতমিশের সমাধি, আলাই মাদ্রাসা মসজিদ হয়ে লোহার স্তম্ভ।
মুসলমানদের দখলের আগে এখানে বিষ্ণু মন্দির ছিল যেটা মুসলিম শাসকরা ধ্বংস করে ফেলে। মন্দিরের বিষ্ণু মূর্তিটি সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত ৪০২খ্রিষ্টাব্দে উদয়গীরির এক মন্দিরে এটা স্থাপন করেছিলেন। সে হিসাবে এটার বয়স প্রায় ১৭শ বছর।
পরে আরেক সম্রাট এটাকে এখানে ধ্বংস হওয়া এই জায়গার মন্দিরে নিয়ে আসে ১০ম শতাব্দিতে। এটার ওজন প্রায় ৬হাজার কেজি।
বিষ্ণু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ
কুতুব মিনারে এবং এর আশে পাশের জায়গা গুলোতে অনেক ছবি তুললাম ।
সন্ধ্যের অন্ধকারে দিল্লীর আলো ঝলমলে রাস্তায় হোটেলে ফিরে আসার পথে ভাবলাম , আমাদের ট্যুরটা শেষ হয়ে এলো । আর মাত্র কয়েকটা দিন ।
মনটা খারাপ হয়ে গেলো ।
তবুও এই ভেবে সান্ত্বনা পেলাম , এখনো তো শিমলা-মানালি বাকি ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।