যারা উত্তম কে উচ্চকন্ঠে উত্তম বলতে পারে না তারা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে শুকরকেও শুকর বলতে পারে না। এবং প্রায়শই আর একটি শুকরে রুপান্তরিত হয়।
যেহেতু আমি নিশ্চিত ছিলাম
তোমার মতই একদিন
আমিও নিহত হব কোন অদেখা আততায়ীর হাতে
তাই আমি সন্ত্রস্ত ছিলাম না
তবে উৎকণ্ঠায় ছিলাম
নিজের সন্তানের জন্য মানুষ যতটা উদ্বেগ আর শংকায় থাকে
তার ভূমিষ্ঠ হবার দিনক্ষণ যেভাবে
প্রতিদিনকার ওঠাবসাখাওয়া আর শোয়ায় খোদিত হতে থাকে
অনেকটা সেরকম
যদিও তীব্রতায় এর চেয়ে অনেকগুনে বেশি
খুবই অ-পরিমাপযোগ্য
আদতে পরিমাপের বাসনা বিহীন
তাই মুক্ত!!
অনেকটা প্রথমবার সমুদ্রস্নানের মত,
লোকমুখে যতটা শোনা যায় চার চেয়েও অভাবিত রকমের বেশি;
যেহেতু এই পঙ্গু নিস্তরঙ্গ জীবনে
এই একটি বিষয়ে আমি একেবারেই নিশ্চিত ছিলাম
তাই আমি সুখী বোধ করছিলাম
শৈশবের লাটিম ঘোরানোর স্বচ্ছন্দ্য অভ্যস্ততা
আর গোল্লাছুটের চক্রে হাত ছুটে যাবার পূর্ব মুহূর্তের মত টানটান উত্তেজনা
ধরফর করছিল বুকের ভেতর
এদিকে বয়সের সাথে বৃত্তটাও সংকুচিত হয়ে আসছিল কয়েক বছর ধরে
ভেতরের ঘূর্ণনে বেড়ে চলছিল কেন্দ্রাভীমুখী ভর
অনেক দিনের পরে আমার বিশ্বস্ত কোষগুলো উন্মুখ হয়ে ছিল
যেন সিনেমার ক্লাইমেক্স উপস্থিত
এরপর এরপর?
যদিও খুব ভেতরে আমি ফ্যান্টাসী পাঠক নই
প্রায় গুনে গুনে বলে দিতে পারি পরিণাম সমূহের তালিকা
মাপতে পারি থরথর আবেগের মাপ
মাপতে পারি আবেগীয় জ্বলন্ত বালিকা
তাই এখানে কোন থলথলে আবেগ ছিল না
ছিল, বহুদিনের জমানো প্রতীক্ষা সমূহের নির্মোহ বাসনা
একটা সুতীব্র উন্মূখতা মাথা নিচু করে দৃঢ় পায়ে হেঁটে যাচ্ছিল বুকের ভেতর
দু-একবার পিছলে যাবার পর আমি কেবল অনুমান করতে চাইছিলাম কি ঘটবে নিহত হবার পর...
এটি ছিল তার লেখা শেষ কবিতা। লোকমুখে শোনা যায়, বৃহস্পতিবারের রাতগুলোতে মাতাল হয়ে তিনি চিৎকার করে বলতেন, ”অবশেষে আমি নিহত হয়েছি, অবশেষে আমি সত্যিকার অর্থেই নিহত হয়েছি। “ তার এরকম নিয়মিত চিৎকারে বিরক্ত প্রতিবেশীরা একদিন তাকে থামানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু যেই রাতে তারা তাকে সতর্ক করতে যায়, সে রাতে তার কক্ষ পর্যন্ত যেয়েও তারা ফেরত আসেন। কেননা ঘরের কাছাকাছি যাবার পরই তারা বুঝতে পারেন যে ভেতরে শাহিন ফূপিয়ে ফূপিয়ে কাঁদছেন এবং কোন এক বিচিত্র ভাষায় কারো সাথে কথা বলছেন। তারা অনুমান করেন যে নিশ্চয়ই তার কাছের কেউ মারা গেছে’ যদিও কোন সুনির্দিষ্ট খবর তারা এখনো জানেন না। নি:সঙ্গ শাহিনের প্রতি তাদের দয়া হয় এবং তারা তার এই পাগলামীকেও শেষ পর্যন্ত মেনে নেন। কেননা সবকিছুর পরও শাহিনকে এতদিন তারা একজন নিরীহ মানুষ হিসেবেই চিনতেন।
যদিও এরপর থেকেই তার সাথে দৈনন্দিন সাধারণ বিষয়গুলো নিয়েও যোগাযোগ করা অন্যদের জন্য দুরুহ হয়ে উঠতে থাকে। তিনি পেপারওয়ালাকে ডাকতে থাকেন টেলিফোনের লাইনম্যান এর নামে, দারোয়ানকে ডাকেন দুধওয়ালীর নামে। এক দিন পরিচিত দোকান থেকে মাসের বাজার করে ফেরার সময় পুলিশ তাকে সন্দেহভাজন লোক ঠাউরে আটক করে এবং জেলে নিয়ে যায়। পরে জিগ্গাসাবাদের সময় নিজের নাম ঠিকানা বলতে বললে তিনি; উল্টা পাল্টা জবাব দিতে থাকেন । সেসময়ের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার এই সংবাদ প্রতিনিধিকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে জানান, ’এখানে নিয়ে আসার পর তিনি অনেক উল্টাপাল্ট কথা বলছিলেন, তবুও ওসি স্যার রাগ করেন নি।
আমাদের থানার ইনচার্জকে তিনি ভাইস চ্যান্সেলর নামে ডাকছিলেন। কনেষ্টেবলকে তিনি ফকরুদ্দিন নামে ডাকছিলেন ইত্যাদি ইত্যাদি। ‘ শেষ পর্যন্ত তার বুদ্ধিতেই ওসি তাকে সার্চ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং একটা পুরোনো আইডি কার্ড দেখে তার সর্ম্পকে সঠিক তথ্য জানতে পারেন। সেই রাতেই তাকে তার ফ্ল্যাটে পৌছে দেয়া হয়। পত্রিকায় নাম না প্রকাশ করার শর্তে সেই পুলিশ অফিসার আরো জানান যে, আচার আচরণে শাহিনকে তার একেবারে বদ্ধ উন্মাদ মনে হয়নি বরং কিছুটা অদ্ভুত মনে হয়েছিল।
যদিও পরে তিনি জানতে পারেন যে তিনি একজন পড়াশুনা জানা ডিগ্রীধারী লোক।
যেদিন শাহিন খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং বিদ্যুত পানি ইত্যাদি সমেত মাসের আনুষাঙ্গিক বিল নেবার জন্য দারোয়ান তার দরজা ধাক্কাতে থাকে তিনি সেদিন কেবল তার দরজাটা খুলে দিতে সমর্থ হয়েছিলেন এবং এরপরই পুরোপুরি এলিয়ে পড়েছিলেন, একটা আঙ্গুল নাড়ানোর শক্তিও তার ছিলনা । কেবল দারোয়ানকে অসুস্থতার উপসর্গ বোঝাতে বারবার মাথা ব্যাথার কথা বলছিলেন। যদিও পরবর্তীতে সুরতহাল রিপোর্টে জানা যায় তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন। মৃত্যুর খবর পেয়ে তার শুভানুধ্যায়ীরা একেএকে ছুটে আসতে থাকেন।
তারা শাহিনকে কিভাবে বাঁচানো যেত এই নিয়ে তর্কও করতে থাকেন। কিন্তু কারো কাছেই পরিষ্কার হয় না কেন তিনি বুকে ব্যাথার বিষয়টা বোঝাতে বারবার মাথার কথা উল্লেখ করেছিলেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।