আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তারুণ্যের কণ্ঠস্বর 'অনুপ্রাণন'

শরীরে আচড়ের দাগ, নষ্ট হল বুঝি আবার মানবতা! প্রতি বছরের মতই দুয়ারে কড়া নাড়ছে ফেব্রুয়ারী। ফেব্রুয়ারী মানেই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চেতনা ধন্য অমর একুশে বইমেলা। আর বইমেলা মানেই নতুন বই নতুন কাগজের মৌ মৌ গন্ধ। বিগত তিন মাসে আমার অনেক বন্ধু ব্যক্তিগত বার্তায় কিংবা সরাসরি জানতে চেয়েছেন গত বছরের মত এবারেও আমার কোন বই আসছে কিনা। তাদের সকলকেই বলে দিয়েছি না, কিন্তু একই সাথে তাদের অসম্ভব ভালবাসা ও প্রীতিতে ধন্য হয়েছি বারংবার।

এ ভালবাসা ভোলার নয়। সেই সব বন্ধুদের জানাতে চাই এ বছর মেলায় আমার বই না এলেও বই এর মতই একটি সন্তান আসছে যার নাম ‘অনুপ্রাণন’ শিল্প সাহিত্যের ত্রৈমাসিক। পত্রিকাটির জন্যে বিগত তিনটি মাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি আমরা ‘অনুপ্রাণন’ সম্পাদনা পরিষদ। পত্রিকার সম্পাদক শ্রদ্ধেয় আবু এম ইউসুফ প্রতিটি লেখা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছেন যাতে পত্রিকার মানের ব্যাপারে কোন রকম আপস না করা হয়। প্যানেলে নবাগত বন্ধু হামিম কামালও দিন রাত পরিশ্রম করেছে পত্রিকাটি যে সত্যিই তারুণ্যের কণ্ঠস্বর তা প্রমাণ করার জন্যে।

মনি ভাই এবং সাজ্জাদ ভাইয়ের অবদানও ভোলার নয়। আর পরিশ্রম ও ত্যাগের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন নির্বাহী সম্পাদক কবি সরসিজ আলীম এবং সহ সম্পাদক কবি কুহক মাহমুদ। তারা উভয়েই এ বছর তাদের প্রকাশিতব্য কাব্যগ্রন্থের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন শুধুমাত্র পত্রিকাটিকে সুন্দর ও সামগ্রিক অর্থেই ব্যতিক্রমী কিছু করবার জন্যে। পত্রিকা বিষয়ে কিছু বলবার আগে ফেসবুকের বন্ধুদের জানাতে চাই, আপনারা সকলে অনুপ্রাণনের সাথে থাকুন। অনুপ্রাণন তারুণ্যের কণ্ঠস্বর, তরুণদের পৃষ্ঠপোষকতা আমাদের সকলের অবশ্য কর্তব্য।

সবাইকে স্বাগত জানাই অনুপ্রাণনের ভুবনে। পত্রিকাটির সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শেষ এবং এটি পাওয়া যাবে অমর একুশে বইমেলা ২০১৩'র প্রথম দিন থেকেই লিটল ম্যাগ চত্বরে। অন্য কোথাও পাওয়া গেলে জানিয়ে দেয়া হবে। ১৬ ফর্মার এই পত্রিকা ৮০ গ্রাম অফসেট কাগজে ভিতরের অংশ এবং ৩০০ গ্রাম আর্ট কাগজে প্রচ্ছদ করা হচ্ছে। মূল্য বরাবরের মতই পঞ্চাশ টাকা।

আশা করছি সকলেই সংগ্রহ করে নেবেন তারুণ্যের কণ্ঠস্বর এই পত্রিকাটি। পত্রিকার পূর্ণাঙ্গ সূচীপত্র এখানে দেয়া হল- এ সংখ্যার আকর্ষণ: এ সংখ্যার মূল আকর্ষণ হল নির্বাচিত আট জন কবির দশটি কবিতার উপরে আলোচনা। সাম্প্রতিক অর্থাৎ নব্বই ও শূন্য দশকের কবিদের কবিতা নিয়ে আলোচনার এ পর্বের কবিগন হলেন- আমীর খসরু স্বপন, শামীম নওরোজ, রিষিণ পরিমল, শরিফা সালোয়া ডিনা, মামুন মোস্তফা, রিঙকু অনিমিখ, মাসুদার রহমান ও শাকিলা তুবা। প্রবন্ধের দিক থেকেও পিছিয়ে নেই এ সংখ্যাটি। এবারের প্রবন্ধ বিভাগটি সত্যিকার অর্থেই তারুণ্যের কণ্ঠস্বর।

তরুণরা তাদের বৈচিত্র্য দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন তারা শুধুমাত্র গল্প কবিতা লিখেই লেখালেখির কাজটা শেষ বলে মনে করছেন না, বরং মননশীল প্রবন্ধের চর্চায় ও নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। এবারের সংখ্যায় রয়েছে মোট ৬টি প্রবন্ধ। শিল্প সাহিত্য ও বিনোদনে প্রযুক্তির ভূমিকা বিষয়ে লিখেছেন আবু এম ইউসুফ। ওমর খৈয়ামের দর্শন বিষয়ে লিখেছেন স্বকৃত নোমান। নব্বইয়ের দশকের কবি ও কবিতার উপরে লিখেছেন মনির ইউসুফ।

লালসালু উপন্যাসে ‘মজিদ’ চরিত্রটির প্রসঙ্গে ভিন্নমত উত্থাপন করে লিখেছেন মাহমুদ ইমরান। বাংলাদেশে চলমান প্রত্নতাত্ত্বিক ও নৃগোষ্ঠীকেন্দ্রিক বিতর্ক নিয়ে লিখেছেন আদনান আরিফ সালিম। সনেটের নানা আঙ্গিক নিয়ে লিখেছেন হারাধন শর্মা। পত্রিকায় বরাবরের মতই রয়েছে অনুবাদ সাহিত্য। কাহলিল জিবরান থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রাজ্জাক।

৪জন এশিয়ান কবির কবিতা অনুবাদ করেছেন চন্দন চৌধুরী। নোবেল জয়ী চীনা লেখক মো. ইয়ানের গল্প অনুবাদ করেছেন হামিম কামাল। এ বছরে আমরা বাংলা সাহিত্যের অনেক বরেণ্য লেখকদের হারিয়েছি। এ সংখ্যায় তাদের স্মরণ করা হয়েছে। সদ্যপ্রয়াত গবেষক ও কথাসাহিত্যিক আব্দুশ শাকুর এর স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়েছেন মোজাফফর হোসেন।

খ্যাতিমান ব্লগার ও লেখক ইমন জুবায়ের এর লেখা প্রকাশের মাধ্যমে তার স্মৃতির প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। এ সংখ্যায় এসেছে ইমন জুবায়েরের প্রবন্ধ শেখ ফয়জুল্লাহ ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য। আমরা সদ্যপ্রয়াত আরেক কথাকার হুমায়ূন আহমেদ কে স্মরণ করেছি রেজওয়ান তানিম এর নিবন্ধের মাধ্যমে। এছাড়াও নিয়মিতে বিভাগ গল্প, একক কবিতা, দুটি কবিতা, ম্যাগ আলোচনা, বই আলোচনা, বই পরিচিতি, ম্যাগ প্রকাশের খবর ও বই প্রকাশের খবর স্থান পেয়েছে। গল্প রয়েছে মোট ১২ টি।

গল্প গুলো লিখেছেন প্রথম ভাগে-পাপড়ি রহমান, পিন্টু রহমান, রেজা নূর, জুলিয়ান সিদ্দীকী, চন্দন আনোয়ার, আন্না পুনম এবং দ্বিতীয় ভাগে-হাসান মাহবুব, সবুজ ওয়াহিদ সেলিনা ইসলাম, চৈতী আহমেদ, তৃপ্ত সুপ্ত এবং ফরহাদ চৌধুরী শিহাব। অনুগল্প লিখেছেন শ্বেতা শতাব্দী ও মোজাফফর হোসেন। দুটি কবিতায় ৬জন কবির কবিতা, একক কবিতায় ১২জন কবির কবিতা প্রকাশ পেয়েছে। মুক্তগদ্যে এ সময়কে নিয়ে লিখেছেন সরসিজ আলীম ও কুহক মাহমুদ। অনুগল্প স্থান পেয়েছে দুটি।

বই আলোচনায় প্রাবন্ধিক ও গবেষক অনুপম হাসান এর আলোচনা স্থান পেয়েছে আশির দশকের কবি কামরুল হাসান এর কাব্যগ্রন্থের উপরে। ম্যাগ আলোচনায় স্থান পেয়েছে কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা সম্পাদিত কবিতাবাংলা, স্বকৃত নোমান সম্পাদিত সম্প্রীতি, আহমেদ মাযহার সম্পাদিত বইয়ের জগৎ, সানাউল্লাহ সাগর সম্পাদিত আড্ডা পত্রিকার উপরে বিশ্লেষণ। এবারে বেশ কয়েকটি নতুন বিভাগে লেখা এসেছে। কাফি কামালের সচিত্র রাজস্থান ভ্রমণ স্থান পেয়েছে। পাঠ প্রতিক্রিয়ায় শওকত ওসমানের ‘কৃতদাসের হাসি’ ও জহির রায়হানের ‘আর কত দিন’ নিয়ে লিখেছেন যথাক্রমে সমদ্দার রতন ও রেজওয়ান তানিম।

আর অনুপ্রাণনের বিশেষ পাতা তৌহিন হাসান এর অলংকরণে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা'র প্রতিবাদ পাতা - পোস্টার পাতা। পত্রিকাটির প্রচ্ছদ করেছেন তৌহিন হাসান। অলংকরণ আলম জাকারিয়া, হামিম কামাল ও আতিকুর রহমান। পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে লেখক, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই নিরন্তর শুভেচ্ছা। আশা করছি, আগামী বইমেলায় তারুণ্যের এই পত্রিকাকে পাঠক সাদরে গ্রহণ করবেন।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।