জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখতে চাই। গতানুগতিকতার গন্ডি থেকে মুক্তি চাই। এতে হয়তো শুনতে হবে অনেক অপমানের বাণী। ভয় করি না।
তখন আমি অনেক ছোট।
আমাদের বাসা ছিল ময়মনসিংহে। আমাদের বাসায় আমার আমার আম্মু অনেক গুলো মুরগী পালত। একদিন আমি চুপচাপ বসে মুরগীদের হাঁটা দেখছিলাম। আমার সামনে একটা কাস্তে ছিল। আমার হটাৎ কি যেন মনে হল।
আমি কাস্তেটা একটা মুরগীর মাথার দিকে জোরে ছুঁড়ে মারলাম। মুরগীটার মাথা ফেটে গেল। শরীর থেকে রক্ত ঝড়তে লাগল। কিছুক্ষণ যন্ত্রণায় কাতরানোর পর মুরগীটি মারা গেল। আমার আম্মু এসে দেখলেন যে মুরগীটা আমি হত্যা করেছি।
আমাকে বকা ঝকা করতে লাগলেন। এক সময় আমার ভিতরের বিবেক জেগে উঠল। আমি আম্মুকে বললাম কেন তুমি কাস্তেটা আমার হাতের সামনে রেখেছ?ও টা না থাকলে তো আমি আজকে মুরগীটা মারতাম না। আমি কান্না করতে লাগলাম। তারপর নিজ হাতে মৃত মুরগীটা হাতে করে নিয়ে আমি আমাদের বাগানের পিছনের কোণে একটা গর্ত করলাম।
তারপর তাকে কবর দিলাম। তারপর তার জন্য মোনাজাত করলাম।
তারপর অনেকদিন পার হয়ে গিয়েছে। সময়ের আবর্তনে কখন যে এই শিশু মনটিকে কবর দিলাম তা বুঝতেই পারি নি। আজ হটাৎ করে লক্ষ করলাম যে দেশে হাজার হাজার লোক প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝর সিডরে মারা গিয়েছে।
অথচ আমার মনে কিছু মাত্র তা স্পর্শ করে নি। পত্র পত্রিকায় খবর দেখি। দেখে একটা দীর্ঘশাস ফেলি। আর কিছু করি না। সারা রাত মোবাইলে কথা বলি।
মোবাইলের ব্যালেন্স শেষ করি। কিন্তু মনেই থাকে না যে ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত মানুষের জন্য আমি ২ টাকা দিয়ে এস এম এস করতে পারি না। আমি সারাদিন সাভাবিক জীবন যাপন করি। কিন্তু সেই দূর্গত মানুষের কথা আমার মনে থাকে না। কোন কারণে নিজে আনন্দিত হই,আবার মন খারাপ থাকলে নিজের জন্যই কাঁদি।
সব কিছুই যেন আমি কেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছি। যেই ছোট্ট আমি একটি মুরগীর মৃতু্য তে এত কেঁদেছি,সেই আমি আজ হাজার মানুষের মরণে একটুও ব্যাথিত না। আর সেই দুঃস্থ পথ শিশু ,মানুষের জন্য কিছু করার ভাবনা তো বাদই দিলাম। এক সময় লেখা পড়া শিখে মানুষ হতে চেয়েছিলাম। আর আজ লেখাপড়া শিখেছি কিন্তু মনুষত্য অর্জন করা শিখিনি,মানুষ হতে পারিনি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।