আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি ভুতের গল্প



(সামহোয়ারইনে নাকি বাচ্চারাও আসে.. তাদের জন্যই এই গল্প) এক দেশে ছিল এক... না কোনো রাজা নয়, ছিল এক অদ্ভুত গ্রাম। গ্রামের নাম খন্ডতংঃ। উচ্চারণে সমস্যা হলে তোমরা গ্রামটাকে ভুতপাড়া বলেও ডাকতে পারো। কেননা, গ্রামটিতে মানুষের চেয়ে ভুত বেশি। ভুতরা সেখানে অবাধে চলাফেরা করে।

শিশুভুতরা সকালে স্কুলে যায়। ভুতদের হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল এমনকি সিনেমা হলও আছে। মানুষও বাস করে। তবে তারা সংখ্যালঘু। ভুতদের এড়িয়ে কোনো রকম দিন কাটালেই মানুষরা খুশি।

সেই ভুতপাড়ায় বাস করতো এক কিশোর ভুত। নাম অঁকি। মরার আগে তার নাম ছিল রকি। ভুত হওয়ার পর নাম পাল্টাতে হয়। গ্রামে এক কিশোর ছেলেও থাকতো।

অদ্ভুত ব্যাপার হলো, তার নাম রকি। সেই রকি আর অঁকি একই কাশে পড়ে। তবে রকি মানুষের স্কুলে। আর অঁকি ভুতের স্কুলে। দুজনের কখনো দেখা হয়নি।

আর দেখা হলেও কেউ কারো সঙ্গে কথা বলতো না। সংখ্যায় কম হওয়ার কারণে ভুতরাই উল্টো মানুষকে ভয় পায়। একদিন রকি বিকেলে স্কুল থেকে বাসায় ফিরছে। নির্জন রাস্তা। কোনো মানুষ নেই।

ভুতও নেই। অবশ্য ভুতরা বেশিরভাগ সময়ই অদৃশ্য থাকতে পছন্দ করে। পাছে যদি আবার মানুষরা দেখে ফেলে। তবে কিছু কিছু বাচ্চা ভুত এখনো ঝটপট অদৃশ্য হওয়া শেখেনি। মেঠো পথের দুপাশে ঘন জঙ্গল।

রকি চুপচাপ হাঁটছে। হঠাৎ সামনে ফ্রক পরা একটা ছোট্ট মেয়ে এসে দাঁড়ালো। রকিকে দেখেই থমকে দাঁড়িয়ে চোখ বড়বড় করে তাকালো। তারপরই ঘুরে ভোঁ দৌড়। মেয়েটার চিৎকারে রকির কানে তালা লেগে যাওয়ার দশা।

‘বাঁচাঁও.. বাঁচাঁও.. মাঁনুঁষ মাঁনুঁষ’। রকি কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেয়েটা হাওয়া। রকির বুঝতে দেরি হয় না, বাচ্চা ভুতটা তাকে দেখেই ভয় পেয়েছে। রকির মন খারাপ হয়ে যায়। এমনিতেই তার কোনো বন্ধু নেই।

তার ওপর যদি ভুতরা তাকে এভাবে ভয় পাওয়া শুরু করে তাহলেতো সারাজীবন একাই থাকতে হবে। চিন্তিত মনে বাসার দিকে এগিয়ে যায় রকি। পরদিন। স্কুল বন্ধ। ছুটির দিনে বনবাদাড়ে একা একা ঘুরে বেড়ায় রকি।

বাড়িতে মা ছাড়া আর কেউ নেই। আজও বাড়ি থেকে দুমাইল দূরের জঙ্গলে চলে আসলো রকি। সুযোগ পেলে দুয়েকটা আপেল পেড়েও খাওয়া যাবে। দিনে দুপুরেও চারদিকে এক অদ্ভুত নির্জনতা। কিন্তু রকির ভয় করছে না।

ভয় পাবে কীসে? ভুতরাতো উল্টো তাকে দেখেই ভয় পায়। হাঁটতে হাঁটতে আশপাশে মৃদু ফিসফাস শুনে রকি। কিন্তু সে ওসবে গা করে না। সে বুঝতে পারে, তাকে নিয়েই আলোচনা করছে ভুতরা। সে কাউকে দেখতে না পেলেও তাকে ঠিকই দেখতে পাচ্ছে।

রকি ভাবে, ইশ্, ভুতদের মতো সেও যদি অদৃশ্য হতে পারতো! তাহলে অনায়াসে একা একা ঘুরে বেড়াতো পারতো, কেউ দেখতো না। কেউ না। ‘উঁরে মাঁরে, গেঁলাম রেঁ, ইঁ ইঁউ ইঁউ ইঁউ’। রকি শুনেই বুঝতে পারে এটা ভুতের কান্না। কিশোর ভুত।

বোধহয় কোনো বিপদে পড়েছে, নয়তো পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে। গলা শুনে মনে হচ্ছে ভুতটা তার বয়সীই হবে। শব্দটা আসছে একটা ইয়া বড় গাছের দুটো ডালের মাঝ হতে। তারমানে ভুতটা দুটো ডালের মাঝে আটকে গেছে। অন্য ভুতরা তাকে উদ্ধার করতেও আসছে না।

রকি বুঝতে পারে, তাকে দেখেই এগিয়ে আসার সাহস পাচ্ছে না কেউ। ভেতরে ভেতরে রেগে যায় রকি। ঠিক করে, সে-ই বাঁচাবে ভুতটাকে। গাছের ঠিক গোড়ায় এসে দাঁড়ায়। লম্বা হলেও খুব একটা মোটা নয় গাছটা।

রকির জন্য এসব গাছ দুধভাত। তরতর করে উঠে যায় সে। ভুতটাকে এখন দেখা যাচ্ছে। তার ডান পা’টা আটকে আছে। চিত হয়ে ঝুলছে সে।

ভুতটা আর কেউ নয়, অঁকি। রকিকে দেখেই কান্না থামিয়ে দেয়। বড় বড় চোখে তাকিয়ে বলে, আঁ আঁ আঁমি কোনো দোঁষ কঁরিনি। আঁমার ঘাঁড় মঁটকে দিঁয়োনা প্লিঁজ। রকির ইচ্ছে হলো ভুতটাকে ধরে কষে একটা চড় লাগায়।

কিন্তু চড় দিতে গেলে সে নিজেই গাছ থেকে পড়ে যাবে। তাই চোখ গরম করেই রাগ দেখায়। ডান হাত দিয়ে ডাল চেপে ধরে বাঁ হাতে ভুতের পা ধরে হ্যাঁচকা টান দেয় রকি। ভুতদের ওজন নেই বললেই চলে। তাই অঁকিকে অনায়াসে সরিয়ে আনতে পারে সে।

আপেল পাড়ার মতো করেই অঁকিকে গাছ থেকে পেড়ে পকেটে ঢুকিয়ে নিচে নেমে আসে রকি। এদিকে ভয়ে টুঁ শব্দটিও করছে না অঁকি। মানুষের খপ্পরে পড়ার এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা তার আর হয়নি। একেবারে পকেটে। গাছ থেকে নেমেই অঁকিকে পকেট থেকে এক রকম ছুড়েই নিচে নামায় রকি।

রাগ দেখানোর এর চেয়ে ভালো কিছু পায়নি সে। অঁকি কাঁচুমাচু চেহারায় রকির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রকিই প্রথম নীরবতা ভাঙলো। আমার নাম রকি, তোমার নাম কী? প্রশ্ন শুনে হা হয়ে যায় অঁকি। তার নামও এক সময় রকি ছিল।

এটা সে বলবে কীভাবে। যদি মানুষটা আবার রাগ করে। অ্যাঁ ইয়ে মানে.. আমার নাম অঁকি। একটা কথা বলতে তিনবার ঢোক গিলে অঁকি। রকিকে দেখে কেন যেন অতোটা ভয়ংকর লাগছে না।

মানুষটা তার ঘাড় নাও মটকাতে পারে। শত হলেও তাকে বাঁচিয়েছে। তা না হলে মরে টুত হয়ে যেতো (ভুত মরে টুত হয়)। রকি হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়। অঁকি ভেবেছিল রকি তাকে একটা কিছু দিচ্ছে।

কিছু না ভেবে সেও হাত বাড়িয়ে দেয়। রকি তার হাল্কা স্বচ্ছ হাতটা ধরে ঝাঁকি দিতেই কঁকিয়ে ওঠে অঁকি। উফ্। সঙ্গে সঙ্গে রকি বলল, সরি, ব্যথা পেলে নাকি? অঁকি ওপর-নিচ মাথা দোলায়। রকি বলল, এসো আমার সঙ্গে।

অঁকি ভাবার সময় পেল না। তার আগেই রকির সঙ্গে হাঁটতে শুরু করলো। এমনিতেই সে একটু কম ভাবে। উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটছে দুজন। সন্ধা তখনো ঘনিয়ে আসেনি।

একটা নীলচে টিলার উপর দাঁড়ায় রকি-অঁকি। অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। নীরবতা ভাঙলো রকি। বলল, অঁকি, তোমাদের কাশে কী পড়ায়? অঁকি মনে মনে বিরক্ত হয়। কাশের গল্প তার ভাল লাগে না।

তবে রকিকে সেটা বলা যাবে না। যদি রাগ করে! ‘নাঁ মাঁনে এঁইতো, জোঁনাকিঁর আঁলো দিঁয়ে কীভাবে জেঁলি বাঁনাঁতে হঁয়, চাঁদের আঁলোয় কী কঁরে সাঁতার কাঁটতে হঁয়, অঁদৃশ্য হঁওয়া এঁই সঁব। রকি ভীষণ অবাক হয়। ‘তাই নাকি! আমাকে শেখাবে?’ অঁকি ঘাবড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে বলে, এ্যাঁ মাঁনে কীঁ শিঁখতে চাঁও? রকি বলল, আগে জেলি বানানোটা শিখি।

দারুণ ব্যাপার! জোনাকির আলোর জেলি! অঁকি আরো ঘাবড়ে যায়। কেননা এ জেলি বানাতে শুধু জোনাকির আলোই হলেই চলে না, সেই আলোকে আবার পানির নিচে ১০ দিন ডুবিয়ে রাখতে হবে। ভুত ছাড়া কেউ তা পারবে না। অঁকি কিছুটা কঁকিয়ে বলল, এ্যাঁ, তুঁমিতোঁ পাঁরবেঁ না, তুঁমি মাঁনুষ। ‘তো কী হয়েছে! মানুষ পারে না এমন কিছু নেই।

কীভাবে কী করতে হবে তাই বল, বাকিটা আমার দায়িত্ব’। অঁকি কিছুণ মিনমিন করে পরে পুরোটা খোলসা করে বলে। সব শুনে রকি বলল, হুঁ, জটিল ব্যাপার, তবে পাখা আর রাবার দিয়ে হেলিকপ্টার বানানোর চেয়ে অনেক সহজ। অঁকি বলল, ওঁটা কিঁ? তোঁমাদের স্কুঁলে শেঁখায়? রকি বিজ্ঞের মতো বলে, হ্যাঁ, আমাদের স্কুলে আরো অনে--ক কিছু শেখায়। তবে ওসব ভুতদের কাজ নয়।

অঁকির ওতে কিছু যায় আসে না। সে বলল, না হলেই ভালো, ভুতদের অতো শেখার কী আছে! কোনোরকম চাঁদ আর সূর্যের আলো খেয়ে বেঁচে থাকলেই হলো। সন্ধা হতেই অঁকি বলল, আঁমার ফিঁরতে হবে। মাঁ ভীঁষণ বঁকা দেঁবে। রকির ও নিয়ে চিন্তা নেই।

তার মা ওতো বকা দেয় না। কিন্তু ঘুরতেও ইচ্ছে করছে না। অনেক বেড়ানো হয়েছে আজ। অঁকিকে তার সঙ্গী হিসেবে বেশ লেগেছে। ভুত হলেও মানুষের অনেক কিছুই জানে সে।

ঠিক হলো কালও দুজন এভাবে ঘুরবে। ফেরার সময় অঁকি কমপক্ষে একশবার বলেছে, ভাঁই রঁকি তুঁমি যে আঁমার সঁঙ্গে ঘুঁরেছো কেঁউ যেঁন না জাঁনে, জাঁনলে আঁমাকে স্কুঁল থেঁকে বেঁর কঁরে দেঁবে। মেঁরে টুঁত বাঁনিয়ে চাঁদে পাঁঠিয়ে দেঁবে। রকি তাকে কথা দিয়েছে, কাউকে কিচ্ছু জানাবে না। তবে শর্ত হলো, ভুতদের স্কুলে যা যা পড়ানো হয়, সব তাকে শেখাতে হবে।

তীব্র আপত্তি থাকা সত্ত্বেও শর্তে রাজি হলো অঁকি। প্রতিদিনই অঁকির সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে আসে রকি। দুজনের মধ্যে এখন বেশ ভাব। রকির সঙ্গে মিশে অঁকির গলাও এখন মানুষের মতো হয়ে গেছে। নাকি সূরে কথা বলতে তার কষ্ট হয়।

তবে অন্য ভুতদের সঙ্গে নাকি সূরে কথা তাকে বলতেই হবে। তা না হলে সবাই ভাববে সে ভুত নয়, ভুতরূপী মানুষ। নতুন বন্ধু পেয়ে রকির দিন এখন বেশ কাটে। হোক না ভুত। তাতে কি! অনেক কিছু শিখতেতো পারছে।

সে এখন অনায়াসে গাছের ছায়ার সঙ্গে ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ মিশিয়ে চিপস বানাতে পারে। খেতে মন্দ না। কিছুটা টক আবার ঝালও। আর অঁকি শিখেছে ত্রিভুজ চতুর্ভুজের সূত্র। ভীষণ মজা পেয়েছে।

কিছুদিন পর শিখবে পিথাগোরাসের উপপাদ্য। দুজন সারাক্ষণ পাশাপাশিই থাকে। তবে অন্য কোনো মানুষ বা ভুত আসা মাত্রই অঁকি টুপ করে ঢুকে পড়ে রকির পকেটে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.