বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।
শীর্ষ জঙ্গি শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইসহ 7 জঙ্গিকে তড়িঘড়ি ফাঁসিতে ঝুলাতে সরকারের এতো ব্যসত্দতা কেন? ঝুলে থাকা প্রায় 400 ডেথ রেফারেন্স মামলা ডিঙিয়ে হাইকোর্টে এই জঙ্গিদের ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানি ও রায়ের তারিখ এগিয়ে আনে সরকার। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের এ ধরনের তাড়াহুড়ো আচরণের কারণ কি? দেশের যে কোন সচেতন নাগরিকই জঙ্গিদের ঘৃণিত কর্মকান্ড ও নারকীয় হত্যাযজ্ঞের উপযুক্ত শাসত্দি চায়, এ কথা বলাই বাহুল্য। কিন' এক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে দেশের ভোটার ও বিদেশের দাতাগোষ্ঠীর কাছে জঙ্গি দমনে নিজেদের আনত্দরিকতা দেখাতে এবং ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই শীর্ষ জঙ্গিদের মুখ চিরতরে বন্ধ করে দেওয়ার লক্ষ্যেই কি তড়িঘড়ি এদের ফাঁসি কার্যকর করে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে সরকার? তারা কি আশঙ্কা করছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জঙ্গিরা মুখ খোলার সুযোগ পেলে দেশে জঙ্গিবাদের স্রষ্টা, গডফাদার ও মদদদাতাদের সম্পর্কে তারা এমন কিছু তথ্য ফাঁস করে দিতে পারে যাতে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের আসল চেহারা বেরিয়ে যাবে? জনমনে এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে শীর্ষ জঙ্গিরা মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও সরকার তাদের সে সুযোগ না দেওয়ায় জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল সরকার জঙ্গিবাদের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা আড়াল করতেই জঙ্গিদের মিডিয়ার সামনে আনছে না।
ডেথ রেফারেন্স নিয়ে সরকারের আচরণে সে সংশয়ই আরো সুদৃঢ় হয়েছে। মেয়াদ শেষের আগেই শীর্ষ জঙ্গিদের মৃতু্যদণ্ড কার্যকর করতে সরকারের অতি আগ্রহের বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে পড়েছে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বক্তব্য থেকেও। মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বীকার করেন, দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা কয়েকশ ডেথ রেফারেন্সের মামলা ডিঙিয়ে শীর্ষ জঙ্গিদের ডেথ রেফারেন্সের মামলার শুনানি সম্পন্ন ও রায়ের তারিখ এগিয়ে আনতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে সরকার। কারণ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এসব ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানি হলে সিরিয়াল পেতেই 5 বছর লাগতো। অবশ্য তিনি এই উদ্যোগকে জঙ্গিদের দণ্ড কার্যকরে সরকারের আনত্দরিকতার প্রমাণ হিসেবেই বর্ণনা করেন।
মওদুদ গতকাল আবারো বলেন, আদালতের অনুমোদন পেলে বর্তমান সরকারের মেয়াদকালের মধ্যেই এই শীর্ষ জঙ্গিদের মৃতু্যদণ্ড কার্যকর করতে চান তারা। বর্তমান বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে দেশে উগ্র মৌলবাদী জঙ্গিবাদের বিসত্দার ঘটে। বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ ওঠে, সরকারই এই জঙ্গিবাদের স্রষ্টা ও মদদদাতা। কিন' বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ক্ষমতাসীনরা। গত 2 মার্চ সিলেটে গ্রেপ্তার করা হয় শীর্ষ জঙ্গি শায়খ আব্দুর রহমানকে।
ধরা দেওয়ার আগে শায়খ রহমান মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ চান। প্রথমে আশ্বাস দেওয়া হলেও পরে তাকে আর এ সুযোগ দেওয়া হয়নি। তখনি কথা ওঠে মিডিয়ার কছে কী বলতে চেয়েছিলেন শায়খ রহমান? 6 মার্চ ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে আটক বোমায় দগ্ধ বাংলাভাইকেও মিডিয়ার আড়ালে রাখা হয়। বিভিন্ন মহল থেকে এ দুই জঙ্গিকে মিডিয়ার সামনে আনার দাবি উঠলেও সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। মিডিয়ার সামনে না আনলেও বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে এবং আদালতে হাজিরাকালে শীর্ষ জঙ্গিদের কথাবার্তা থেকে অনেক বিস্ফোরক তথ্যই বেরিয়ে আসে।
ঝালকাঠীতে বিচারক হত্যা মামলায় বিচারের জন্য গত 2 মে তাদের সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করা হলে বাংলাভাই স্পর্ধার সঙ্গেই বলেন, জঙ্গিবাদ নিয়ে সরকারের সাজানো নাটক চলছে। এ নাটকে কে নায়ক আর কে খলনায়কের ভূমিকায় আছে তা স্পষ্ট করে জাতিকে বলতে চাই। বাংলাভাই আরো বলেন, আমাদের কাছে হ্যামিলনের বাঁশি আছে। সে বাঁশি বাজালে একটি ইঁদুরও গদিতে থাকতে পারবে না। গত 4 মে একই আদালতে শায়খ রহমান বলেন, আমরা নিজেদের নির্দোষ বলি না।
আমরা খালাস চাই না, আমরা বিচার চাইতেও আসিনি। আদালতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শায়খ রহমান বলেন, এসব আমাদের কাছে কেন জিজ্ঞেস করছেন, আমাদের যারা মাঠে নামিয়েছে তাদের কাছে জিজ্ঞেস কর"ন। তারাই ভালো বলতে পারবে। দুই জঙ্গি নেতার এসব বক্তব্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন পর্যবেক্ষক মহল। শায়খ রহমানের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তিনি জঙ্গিবাদ ও বোমাবাজির দায়িত্ব স্বীকার করে নিয়েছেন এবং ক্ষমতাধর কেউ বিশেষ উদ্দেশ্যে তাদের মাঠে নামিয়েছিল।
আর বাংলাভাই পরিষ্কারভাবেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, বর্তমান ক্ষমতাসীনরা শুধু জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িতই নয়, এসব জড়িত ব্যক্তি ক্ষমতার গদিতেই বসে আছে। তিনি বলতে চেয়েছেন, তার কাছে এমন সব তথ্য আছে যা প্রকাশ করলে ক্ষমতাসীনদের গদিতে টান পড়বে। জঙ্গিবাদের পুরো বিষয়টি যে সরকারের নাটক তাও তিনি স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন। আর এ নাটকে নায়ক ও খলনায়কের পরিচয় জানিয়ে দেওয়ার ইচ্ছাও ব্যক্ত করেছেন তিনি। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, নাটকটি যদি সাজানো হয় তাহলে এর পাত্রপাত্রীরাও সরকারের মধ্যেই রয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে,- এই নায়ক, খলনায়ক বা ইঁদুরগুলোর পরিচয় ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়েই কি দুই শীর্ষ জঙ্গিকে তড়িঘড়ি করে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানোর জন্য ব্যসত্দ হয়ে পড়েছে সরকার? নির্বাচনকে সামনে রেখে জঙ্গিবাদের সঙ্গে সরকারের সম্পৃক্ততা আড়াল করতে এবং দাতাগোষ্ঠী ও জনগণের কাছে জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের আনত্দরিকতা প্রদর্শনের লক্ষ্যেই শীর্ষ জঙ্গিদের ফাঁসিকাষ্ঠ সাজাতে সরকার উদগ্রীব হয়ে পড়েছে বলেও অনেকে ধারণা করছেন। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মনত্দব্য থেকে এমন ইঙ্গিতই পাওয়া যায়। ইতিপূর্বে তিনি এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেছেন, অনেক মামলা থাকলেও একটি মামলায় ফাঁসি কার্যকর করার আদেশ নিশ্চিত হয়ে গেলে আসামিদের ফাঁসি দিতে কোনো বাধা নেই। তার এ বক্তব্য থেকে শায়খ রহমান ও বাংলাভাইকে ফাঁসিতে ঝুলাতে সরকরের অতি উৎসাহের দিকটি স্পট হয়ে ওঠে। তাছাড়া আদালত জঙ্গিদের ফাঁসি নিশ্চিত করবেনই এমন ধারণা তিনি পেলেন কোত্থেকে সে প্রশ্নও আসে।
গত বছর 14 নভেম্বর ঝালকাঠীর দুই সহকারী জজ জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল আহমেদকে বোমা হামলা চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে জঙ্গিরা। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ঝালকাঠীর অতিরিক্ত দায়রা জজ গত 29 মে শায়খ রহমান ও বাংলাভাইসহ 7 জঙ্গিকে মৃতু্যদণ্ডের আদেশ দেন। রায়ের পর মৃতু্যদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখার নিয়ম থাকলেও নিরাপত্তার অজুহাতে সরকার দুই শীর্ষ জঙ্গি শায়খ রহমান ও বাংলাভাইকে রাজধানীর মরিপুরে একটি বিলাসবহুল বাড়িকে সাব জেল ঘোষণা করে সেখানে আরাম আয়েশে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। ধারণা করা হয়, দুই শীর্ষ জঙ্গি ও তাদের অনুসারীরা যাতে সরকারের প্রতি র"ষ্ট না হয় এবং তাদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের বিষয়টি যাতে কারো কাছে ফাঁস করার সুযোগ না পায় এটা ছিল তারই প্রয়াস। অনেকের মতে, একই উদ্দেশে নজিরবিহীনভাবে আইন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে 400 ডেথ রেফারেন্সের মামলা ডিঙিয়ে শায়খ রহমান ও বাংলাভাইয়ের ডেথ রেফারেন্স মামলা শুনানি ও রায় প্রদানের ব্যবস্থা করে দেয় সরকার।
আর জনমনে সন্দেহ ঘনীভূত হয় এখান থেকেই। এই প্রেক্ষাপটে গত মঙ্গলবার থেকে শুর" হয়েছে 7 শীর্ষ জঙ্গির ডেথ রেফারেন্সের রায় ঘোষণা। এ রায় প্রদান আজ বৃহস্পতিবার শেষ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে রায় যা-ই হোক, সরকারের ভূমিকা নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয় থেকেই যাবে। :::ভোরের কাগজ ::::
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।