নির্বাচনকালীন সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে নির্বাচনী প্রচারণায় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, মন্ত্রী ও এমপিদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ নিষিদ্ধ করে আচরণবিধির খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী রবিবার থেকে ৭ দিন ইসির ওয়েবসাইটে এ খসড়া রেখে সবার মতামত নিয়েই তা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছে ইসি। খসড়ায় বলা হয়েছে, নির্বাচনকালীন সময়ে 'সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা' কোনো প্রকল্প অনুমোদন, ফলক উন্মোচন, অর্থ বরাদ্দ, ছাড় বা অনুদান ঘোষণা করতে পারবেন না। নির্বাচনের আগে সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচন কর্মসূচিও তারা জড়াতে পারবেন না। এক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন সময় বলতে তফসিল ঘোষণার দিন থেকে নির্বাচনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ পর্যন্ত সময়কে বোঝানো হবে।
সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা হলেন- প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সরকারের মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী ও তাদের সমমর্যাদাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র। নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের শাস্তি নির্ধারিত হবে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী। এতে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা থেকে শুরু করে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও ইসিকে দেওয়া হয়েছে। গতকাল কমিশন সভায় আচরণবিধির খসড়ায় নীতিগত অনুমোদনের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ জানান, আচরণবিধির খসড়ার পর জনমতের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। রাজনৈতিক দলসহ সর্বমহলের মত পাওয়ার পর তা চূড়ান্ত করা হবে। আগামী রবিবার নাগাদ এ খসড়া জনসম্মুখে তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি।
সিইসি বলেন, প্রার্থী হলে মন্ত্রী ও এমপিদের বিদ্যমান সুবিধা ছাড়তে হবে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই। কাজী রকিব বলেন, এবার দলীয় সরকার থাকছে। তাই প্রধানমন্ত্রী-বিরোধীদলীয় নেতা বা মন্ত্রী পর্যায়ের ব্যক্তিরা সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মসূচি এক করতে পারবেন না। সংসদ সদস্যদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপদেষ্টাসহ বিদ্যমান সুবিধাগুলোও কার্যকর রাখা হবে না বলে জানান সিইসি।
সিইসি জানান, আগে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) বা উপনির্বাচনের জন্য সরকারি সুবিধা নিয়ে প্রচারণার কোনো সুযোগ ছিল না আচরণবিধিতে। তিনি জানান, আচরণবিধি কার্যকরের সুবিধার্থে তফসিল ঘোষণা থেকে ফল গেজেটে প্রকাশ সময় পর্যন্ত উল্লেখ করে নির্বাচনকালীন 'সময়কে' নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকারের সদস্যরা শুধু 'রুটিন' কাজ করবে জানিয়ে সিইসি বলেন, তখন মন্ত্রিসভার সদস্যরা নীতিনির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে মনোনয়ন দাখিল, বাছাই, প্রত্যাহার ও প্রচারণার সুবিধার্থে ৪০-৫০ দিন সময় রেখে 'যথাসময়ে' তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানান সিইসি। তিনি বলেন, তফসিলে সময়ের কোনো টান পড়বে না। সমঝোতায় ২৪ জানুয়ারির পরে নির্বাচনে আপত্তি নেই ইসির। প্রধান দুই দলের মধ্যে সমঝোতা হলে সংবিধান অনুসারে ২৪ জানুয়ারির পরে নির্বাচন আয়োজনেও কোনো আপত্তি নেই বলে জানান কাজী রকিব। ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন না হয়ে দুই পক্ষ যদি রাজি হয় পরবর্তীতে নির্বাচন করতে চায় তখন কী করবেন? এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই দল রাজি হলে আলহামদুলিল্লাহ।
অনুমোদিত খসড়া বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ জানান, সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা নির্বাচনী প্রচারে সরকারি যানবাহন বা প্রচারযন্ত্রের মতো সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী বা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও প্রচারে ব্যবহার করা যাবে না। মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচিতে কর্তৃত্ব করতে বা এ সংক্রান্ত সভায় যোগ দিতে পারবেন না। এমপিরা পদাধিকারবলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সংস্থার পরিচালনা পর্ষদ বা উপদেষ্টা পদে থাকলেও নির্বাচনের সময়ে তাদের ওই ক্ষমতা 'অকার্যকর' থাকবে। 'সরকারি সুবিধাভোগী' এই 'গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নিজেদের ভোট দেওয়া ছাড়া আর কোনো কারণে কোনো ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন না। নিজে প্রার্থী না হলে ভোট গণনার সময়ও সেখানে উপস্থিত থাকতে পারবেন না।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।