আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা... চির উন্নত মম শীর
"একাত্তরে শহীদের সংখ্যা কত ?? -খুব বেশী হইলে হাজার পাঁচেক হবে..."
-আরিফ রহমান
"ঝাঁকে ঝাঁকে শকুন নেমে এসেছে। তীক্ষ্ণ ঠোঁট দিয়ে ছিড়ে খুড়ে খাচ্ছে মরা মানুষের দেহ। তাদের চোখ চক চক করছে। কিন্তু মৃত মানুষের সংখ্যা এত বেশী যে শকুনের খেয়ে শেষ করতে পারছে না। শকুনদেরও খাওয়ায় অরুচি এসে গেছে।
মরা মানুষের গা থেকে ছিঁড়ে খুঁড়ে ফেলেছে জামা কাপড়। তাদের অনেকের তখনো গা গরম। সবেমাত্র মরেছে।
পথে ঘাটে নালা নর্দমায়—সর্বত্রই কলেরায় মরা মানুষ পড়ে আছে। জন সার দেখতে পেয়েছেন একটি শিশুর মৃতদেহ।
শিশুটির গায়ে একটি শাড়ির অংশ পেঁচানো। তাঁর হতভাগী মা পেঁচিয়ে পুটুলি বানিয়েছে। ট্রাকের চলার সময় অসুস্থ শিশুটি মারা গেছে।
চলন্ত ট্রাক থামেনি। মৃত ছেলের জন্য ট্রাক থামানো কোনো মানেই হয় না।
আরও অনেক মৃতপ্রায় মানুষ এই ট্রাকেই ধুঁকছে।
আগে পৌঁছাতে পারলে হয়তো কোনো হাসপাতাল পাওয়া যেতে পারে। তাদের সুযোগ মিলতে পারে চিকিৎসার। বেঁচেও যেতে পারে। এই আশায় সময় নষ্ট করতে কেউ চায় না।
শিশুটির পুটুলী করা মৃতদেহটিকে ট্রাক থেকে রাস্তার পাশে ধান ক্ষেতে ছুড়ে ফেলা দেওয়া হয়েছে........."
(Genocide:Leo kuper)
বিশ্বের বৃহত্তম গনহত্যাগুলোর তালিকার বাংলার রক্তের দাগ নেই, থাকলেও অল্প...
উইকিপিডিয়া নিরপেক্ষতার নামে শহীদের লিমিট বেধে দেয় ৩ থেকে ৩০ লাখের মধ্যে,
পাকিস্তান সরকার তো বলে একাত্তরে শহীদের সংখ্যা ছাব্বিশ হাজারেরও কম (হামিদুর রহমান কমিশন), উইকি সেটাও কোট করে, কিন্তু ইউনিসেফ যে শহীদের সংখ্যা ৪০ লাখেরও বেশী দাবী করে তাতে তাদের ভ্রূক্ষেপ নেই,
উইকির Genocides in history আর্টিকেলে তো বিহারী হত্যার দায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযুক্ত পর্যন্ত করা হয়েছে, বিবিসির Mark Dummett তার আর্টিকেলে শহীদের সংখ্যা বানায় ৩ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ
এর কারণ কি জানেন ?
এর কারণ, সম্ভবত আমরাই,
কারণ আমরাই পৃথিবীর একমাত্র দুর্ভাগা জাতি, যারা স্বাধীনতায় আত্মত্যাগকারিদের সংখ্যা কমাতে চাই। নিরপেক্ষতার নামে শহীদের সংখ্যায় আপার লিমিট লোয়ার লিমিট বসাতে চাই, আর এর প্রধান কারণ একটাই, স্বাধীনতার পরেও একটা শ্রেণীকে বাঁচিয়ে রাখা যারা ''আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম'' টাইপের গান গেয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত রাখেছিল। পাকিস্তানের সাথে আবার জোড়া লাগানোর ফিকির করেছিলো,
৪২ বছর ধরে প্রজন্মকে দমিয়ে রাখার কৌশলে তারা ছিল সচেষ্ট।
যারা স্বাধীন দেশে "পাকিস্তান পুনুরুদ্ধারকরণ কমিটি" চালিয়েছিল, যার অস্তিত্ব ১০-১৫ বছর আগেও ছিল ! !যারা বারবার গণহত্যাকে লুকিয়ে রেখেছিল !!
২৫ মার্চ মধ্যরাতে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর কায়দায় রাতের অন্ধকারে পাকি জল্লাদ বাহিনী এক দানবীয় নিষ্ঠুরতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালীর ওপর। চলল বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ আর ধ্বংসের উন্মত্ততা।
হকচকিত বাঙালী কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঢলে পড়ল মৃত্যুর কোলে।
শহরের রাজপথ, অলিগলি, ফুটপাথ, খেলার মাঠ, ক্যাম্পাস সর্বত্রই মৃত্যু তার রেখে গেছে ভয়ংকর স্বাক্ষর। মানুষের কান্না ভারি হয়ে এলো শহরের আকাশ। সে কান্না ছাপিয়ে তখন আকাশে কেবলই মুহুর্মুহু আগুনের লেলিহান শিখা। মধ্যরাতে ঢাকা হয়ে উঠল লাশের শহর।
একাত্তরের অগ্নিঝরা এদিনে বাঙালী জাতি তথা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছিল ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস বর্বরতা। একাত্তরের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে গণহত্যার নীলনকশা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পাকিস্তানী দানবরা মেতে উঠেছিল নির্বিচারে স্বাধীনতাকামী বাঙালী নিধনযজ্ঞে। ঢাকাসহ দেশের অনেক স্থানেই মাত্র এক রাতেই হানাদাররা নির্মমভাবে
হত্যা করেছিল অর্ধ লক্ষাধিক ঘুমন্ত বাঙালীকে।
বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসে নিষ্ঠুর, নির্মম ও বর্বরোচিত গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা। একাত্তরের এ দিনে চির আকাঙ্ক্ষিত ও প্রিয় স্বাধীনতার জন্য উন্মাতাল লাখো বাঙালীর রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল বাংলার সোঁদামাটি।
ঘুমন্ত শিশু, বধূ, বৃদ্ধার রক্তে কলঙ্কিত হয়েছিল মানব ইতিহাস।
সেই নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতা চেঙ্গিস খান-হালাকু খানদের নৃশংস নির্মমতাকেও হার মানায়।
একাত্তরে পাকিস্তানিদের নিষ্ঠুরতার একটা খণ্ডচিত্র পাবেন
Leo kuper এর লেখা Genocide বইয়ে , ৭১এর গণহত্যা সম্পর্কে যারা বাঁকা চোখে ভাবেন তাদের অবশ্য পাঠ্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।