প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং তাদের উভয়ের পারিষদবর্গ, মোসাহেবরা, কিছু স্তাবক ও বিবেকবর্জিত বুদ্ধিজীবী ছাড়া আজ গোটা জাতি আতঙ্কিত, উদ্বিগ্ন, ভবিষ্যৎ সংঘাতের আশঙ্কায় সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত। অনেক বিবেকবান প্রতিভাদীপ্ত মানুষ যারা সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না হলেও সমস্ত সত্তা ও মননশীলতায় দেশপ্রেমিক- তাদের আশঙ্কা এবং উদ্বিগ্নতা এতই প্রবল যে, তারা কেউ দুশ্চিন্তার আবর্তে কেবল নিমজ্জিতই নয়, অসহ্য যন্ত্রণায় প্রতি মুহূর্তে ছটফট করছেন। এমনকি অনেকে রাতে ঘুমাতে পর্যন্ত পারছেন না। দেশের আপামর জনগণের হৃদয়ের অনুরণন যদি স্বরলিপি করে বাজিয়ে দেখানো যেত তাহলে সবাই অনুধাবন করত, উপলব্ধি করত তাদের আতঙ্কের মাত্রাটি। সরকারি দল এ সমস্যার সমাধানে প্রধান ভূমিকা রাখবে- এটিই পরিশীলিত চিন্তার প্রত্যাশা।
কিন্তু দুর্ভাগ্য জাতির, দুর্ভাগ্য স্বাধীনতার এবং ১৬ কোটি মানুষের। প্রধানমন্ত্রীকে পারিষদবর্গ প্রায় স্থির প্রত্যয়ে উজ্জীবিত করেছেন যে, সাংগঠনিকভাবে বিএনপি এতই দুর্বল যে, তাদের কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করার প্রয়োজন নেই। তারা কোনো সফল গণআন্দোলন গড়ে তোলার সাংগঠনিক শক্তি রাখে না। অতএব এই আহূত হরতালে বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
সাম্প্রতিককালে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে বেতার ভাষণ দেওয়ার ঘোষণা জোনাকির আলোর মতো হলেও মানুষের মনে একটি প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছিল, হয়তো সংকট নিরসনের একটি পথ উন্মোচিত হতে যাচ্ছে।
এমনকি এই প্রত্যাশার আঙ্গিকে শেয়ারবাজার একটু হলেও চাঙ্গা হয়েছিল (শিল্পাঙ্গনেও কিছুটা আস্থার সৃষ্টি হয়েছিল)। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ সেই স্পন্দিত চেতনাটিকে একটি সম্ভাবনার দিক উন্মোচন করতে পারেনি। তা দুঃখজনক হলেও বাস্তব। দেশ যখন মহাসংকটের মুখোমুখি, ওয়ান-ইলেভেনের চেয়েও একটি ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সমঝোতার সব সম্ভাবনার আলো ঘোর অমানিশার অতল অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে তখন দুই নেত্রীর দায়িত্ব বোধের পরিচয় এতই নিম্নমুখী যে, কোনো সুস্থ মানুষ কল্পনাতেও এটি করতে পারবে না।
এ সংকটময় মুহূর্তে দুই নেত্রীর টেলিফোন আলাপচারিতা প্রায় ১০ মিনিট ভাঙা রেকর্ডের মতো বেজেছে রেড ফোনটি সচল ছিল কি ছিল না- এই প্রশ্নে।
এটি সমগ্র জাতির জন্য লজ্জাস্কর। প্রধানমন্ত্রী যে প্রস্তাবটি দিয়েছেন তা কেবল নতুন বোতলে পুরনো মদ পরিবেশনের মতো। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তিনি তার নেতৃত্বে 'অন্তর্বর্তীকালীন সর্বদলীয় জাতীয় সরকার'-এর যে প্রস্তাব দিয়েছেন সেটি মানার কোনো সুযোগ বেগম খালেদা জিয়ার ছিল না; অনেক প্রশ্নে বিরোধী দলের নেত্রীর সঙ্গে আমার প্রচণ্ড মতপার্থক্য থাকলেও এ কথাটি আমি স্বীকার করি। আমার কূটনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক সখ্য যাদের সঙ্গে রয়েছে, তাদের অনেকেই মন্তব্য করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নিমন্ত্রণে বিরোধীদলীয় নেতা সাড়া দিলে সমস্যা নিরসনের একটি পথ উন্মোচিত হতো। কিন্তু বাস্তবে বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবটির বিপরীতে যে কথাটি বলেছেন (আপনি নির্দলীয় সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রদান করলে আমি তো সাক্ষাৎ করবই, হরতালও প্রত্যাহার করব) এটি তার আঙ্গিক থেকে একটি সপ্রতিভ রাজনৈতিক কৌশল।
এখানে তার আঙ্গিকে তিনি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। পরবর্তীতে বৈদ্যুতিক সংবাদ মাধ্যমে (টিভি চ্যানেল) প্রচারিত টেলিফোনের আলাপচারিতা যারা দেখেছেন তারা ওর মধ্যে স্টেটসমেনশিপ তো দূরে থাক, দুটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের যে দায়িত্ববোধ- তার বিন্দুমাত্র পরিচয়ও পাননি। বরং মনে হয়েছে পাশাপাশি ফ্ল্যাটে বসবাসকারী দুজন মহিলা পরস্পর কলহে লিপ্ত। যে দেশে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা ও বঙ্গবন্ধুর মতো নেতৃত্বের সৃষ্টি হয়েছে সে দেশটি আজ এ কোন অভিশাপের শিকার?
অন্যদিকে বিরোধী দল যদি ক্রমাগতভাবে সংসদ বর্জন না করত তাহলে আজকে এই সংকটটি এত গভীর হতো না। বরং সংসদে থেকে নির্দলীয় দাবিটি বারবার উচ্চারণ করলে শুধু দেশবাসীকেই তাদের স্বপক্ষে উজ্জীবিত করত না, উপরন্তু দলের তৃণমূল কর্মীদের হৃদয়েও একটি আত্দিক শক্তির জন্ম দিত, তাদের হৃদয়ে প্রত্যয়বোধ সৃষ্টি করতে সাহায্য করত।
আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সন্ত্রাস, আগুন জ্বালা, মানুষের প্রাণহানি, ককটেল বিস্ফোরণের মতো আত্দঘাতী পথে তাদের পদচারণার প্রয়োজন হতো না। বরং ধাপে ধাপে দেশের আপামর জনগোষ্ঠীকে বিশ্বাসের আওতায় এনে তাদের চিন্তার আঙ্গিকে আন্দোলনের সোপান উত্তরণের মধ্য দিয়ে যে রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে পারত তাতে আওয়ামী লীগের স্তাবকগোষ্ঠীর এই দাম্ভিকতা সৃষ্টির কোনো সুযোগ তৈরি হতো না।
ক্ষমতার প্রচণ্ড লোভ, প্রতিহিংসাপরায়ণতা, পরশ্রীকাতরতা, অসহনশীলতাই আজকে রাজনীতির মূল বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়ানোর পেছনে দুই নেত্রীর অবদান সমানে সমান। রাজনীতি সহনশীলতা, সমঝোতা এবং ছাড় দেওয়া-নেওয়ার একটি সুমার্জিত খেলা। কিন্তু এখানে দম্ভ এবং ক্ষমতার প্রতি প্রলোভন দুর্দমনীয়; কি সংসদ, কি সংগঠন, কি রাজনৈতিক পরিচর্চা- কোনো জায়গায় যখন গণতান্ত্রিক চর্চার বিন্দুমাত্র সুযোগ থাকে না, তখন দেশে ব্যক্তিতন্ত্রের প্রভাব গণতন্ত্রের মোড়কে রাজতান্ত্রিক মানসিকতাকে প্রতিষ্ঠিত করে।
বাংলাদেশে দুই নেত্রী জনগণকে বিন্দুমাত্র পরোয়া না করে স্থির প্রত্যয়ে বিশ্বাস করেন যে, তারা একটি এজমালি রাষ্ট্রের প্রধান মুতওয়ালি্ল এবং দেশের সব নাগরিক তাদের আজ্ঞাবহ ক্রীতদাস। জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো তো দূরে থাক, তাদের মতামতের বিষয়টি মনে বিন্দুমাত্র স্থান দেওয়ার কোনো প্রয়োজনই তারা বোধ করেন না।
সাম্প্রতিককালে এ সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক মহল প্রচণ্ডভাবে তৎপর এবং অবস্থাদৃষ্টে এটিও অনুমিত যে, বিশ্ব রাজনীতির পরাশক্তিদের মধ্যে আসন্ন নির্বাচন ও নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং আমেরিকাসহ পাশ্চাত্য শক্তির মধ্যে একটি টাগ অফ ওয়ার শুরু হয়েছে, যা সংকট নিরসনের চেয়ে সংকট ঘনীভূত করারই আশঙ্কা বৃদ্ধি করেছে। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত যে, আমেরিকার রাষ্ট্রদূ মোজেনাকে দিলি্লতে তলব করে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, আসন্ন নির্বাচনে পাশ্চাত্য শক্তির কোনো নাক গলানো ভারত সুনজরে দেখছে না। এমনকি বিরোধী দলের প্রতিও তাদের নেতিবাচক মনোভাবটি আমেরিকার রাষ্ট্রদূতকে সরাসরি অবহিত করা হয়েছে।
সম্ভবত এ বার্তাটিকে বিস্তারিত ব্যাখ্যায় ওয়াশিংটনের নীতিনির্ধারকদের কাছে তুলে ধরার জন্য মি. মোজেনা আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন। এখন দেখার বিষয়, এই প্রেক্ষাপটে আমেরিকার সিদ্ধান্ত কী দাঁড়ায়?
আমি স্বাধীনতা-সংগ্রামের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে আমার হৃদয়ের উদ্বিগ্নতাটি স্পষ্ট করে তুলে ধরতে চাই। ভারত মুক্তিযুদ্ধকালীন যেসব সহযোগিতা করেছে, তা অবিস্মরণীয় এবং বহুল আলোচিত। তখন ভারতের নেতৃত্বে এই কংগ্রেসই ছিল এবং সেই কংগ্রেসের পুরোধা ছিলেন তৎকালীন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ নেত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তার দূরদর্শী কূটনৈতিক কৌশল ছাড়া আমাদের স্বাধীনতা অর্জন ত্বরান্বিত হতো না- এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়।
আজ তার আদর্শের উত্তরসূরি, তারই পুত্রবধূ রাজনীতিতে আত্দত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত একটি নেতৃত্ব। মনমোহন সিংও পৃথিবীতে মি. ক্লিনম্যান হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। আমরা কখনো প্রত্যাশা করব না যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আমেরিকা অথবা ভারতের কোনো প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ। বিশেষ করে ভারত আমাদের অতি সনি্নকটের প্রতিবেশী। তাদের সঙ্গে বিদ্বেষী মনোভাব কোনো রকমেই কল্যাণকর এবং অভিপ্রেত নয়।
আজকের ভারতের নেতৃত্ব যদি বাংলাদেশ এবং আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে চান তাহলে ফারাক্কা সমস্যা, সীমান্ত বিরোধ, তিস্তা ব্যারেজ, টিপাইমুখ এবং ছিটমহল জাতীয় সমস্যার সমাধান করে আওয়ামী লীগের মুখ উজ্জ্বল করবেন। বাংলাদেশের মানুষের বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা অর্জন করবেন। ওদিকে না হেঁটে অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন দুই দেশের জন্যই অনভিপ্রেত।
মর্মান্তিক হলেও এটি বাস্তব, দুই নেত্রীর অভূত কূটনৈতিক কৌশলে কি দলের অভ্যন্তরে, কি সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে তৃতীয় ধারার কোনো নেতৃত্বকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেননি। এটি তাদের অবস্থানের জন্য প্রচণ্ড সুবিধাজনক হলেও আজকের দিনের জন্য একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি।
দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেগুলোর ওপর নির্ভর করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা করা যেত। যেমন- নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, বিচারিক ব্যবস্থা আজ হয় মেরুদণ্ডহীন, না হয় কোনো না কোনো বড় দলের আবর্তে গণ্ডিবদ্ধ। নির্বাচন কমিশনের ওপর বিরোধী দলের আস্থা রাখার কোনো প্রশ্নই আসে না। কারণ স্বাধীন, প্রত্যয়দীপ্ত কোনো ভাবমূর্তি তারা তৈরি করতে পারেনি। ভারতের এককালীন প্রধান নির্বাচন কমিশন সাকসেনা নিরপেক্ষতার প্রশ্নে এমনই দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছিলেন যে, আজ ভারতে সেটি একটি গৌরবের দৃষ্টান্ত।
কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের অবস্থাটি ঠিক তার বিপরীত। অতএব দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশনের সার্বভৌমত্ব এবং নিরপেক্ষ আচরণের চিন্তাটি অকল্পনীয়।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, ২০০১-০৬ সালে চারদলীয় জোটের শাসনামলে ২০০৪-এর ২১ আগস্ট ও ২০০৫-এর ১৭ আগস্টের বীভৎসতা ভোলার নয় এবং বিএনপিও তার জন্য কোনো ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। এ কথাগুলো মানুষের সামনে উচ্চকিত করার অধিকার আওয়ামী লীগের আছে এবং তাদের সফলতাগুলোকেও তুলে ধরা তাদের নির্বাচনী কৌশলের অন্তর্ভুক্ত অধিকার। কিন্তু তাই বলে নির্দলীয় সরকারের দাবি তারা অস্বীকার করেন কোন যুক্তির আঙ্গিকে এবং কোন অধিকারে? যদি তারা ভেবে থাকেন, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় পুনর্বাসিত হবে এবং বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ আবার মাথাচাড়া দেবে তাহলে ষষ্ঠদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে আরও ১০টি বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার একটি সংশোধনী আনলেই পারেন।
তাহলেই ফাইনাল খেলাটি হয়ে যায়। সংশোধনীটি টিকিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকতে পারলে শুধু ডিজিটাল বাংলাদেশ নয়, বরং তাদের চেতনার পুরোটাই বাস্তবায়িত করতে পারবেন এবং ফাইনাল খেলাটিও সংঘটিত হয়ে যাবে; প্রতিনিয়ত সংঘাত-সংঘর্ষ-বোমাবাজি-জীবনাবসানের একটি স্থায়ী পরিসমাপ্তি ঘটবে।
রাজনীতিতে এমন টালমাটাল অস্থিরতা, এমন অনিশ্চয়তা এর আগে কখনো দেখা দেয়নি। '৭০-এর নির্বাচনের আগে ইয়াহিয়া খান সাহেব এলএফও (লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার) প্রদান করেছিলেন। তা সত্ত্বেও আমরা বিন্দুমাত্র শঙ্কিত হইনি, কারণ পুরো জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় আমরা উদ্বেলিত করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
আমাদের বিশ্বাস এতটাই প্রত্যয়দৃঢ় ছিল যে, আমরা বিশ্বাস করতাম, নির্বাচন মানেই আমাদের স্বপক্ষে ম্যান্ডেট। কিন্তু আজকের পরিস্থিতিটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। দশম সংসদ নির্বাচনের ফলাফল নির্ভর করবে নির্বাচন কোন আঙ্গিকে অনুষ্ঠিত হবে তার ওপর। যদি তত্ত্বাবধায়ক হয় তবে বিএনপির জয়জয়কার, আর যদি দলীয় সরকারের অধীনে হয় তাহলে তাদের জন্য নিদারুণ হাহাকার।
পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলের পর বিএনপির পারিষদবর্গ, স্তাবক ও মোসাহেব গোষ্ঠী বেগম খালেদা জিয়াকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে, কোনো রকমে একটি আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে ঘরে বসে থাকলেও তাদের বিজয় সুনিশ্চিত এবং আওয়ামী লীগ নতিস্বীকার করতে বাধ্য হবে।
তারা বেমালুম ভুলে গেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাশ্রিত দল নয়, আন্দোলনের। ২৩ বছরের দীর্ঘ পথপরিক্রমণের মধ্যে একেকটি সোপান উত্তরণ করে বাংলার নিভৃত গ্রামেও যে অবারিত উজ্জীবিত সত্তা তৈরি করেছে, তাকে অবদমিত করা যেমন সহজ নয়, তেমনি ককটেল ফুটিয়ে, বোমাবাজি করে ক্ষণিকের ত্রাস সৃষ্টি করা যাবে, কিন্তু একটি সফল আন্দোলন গড়ে তোলা যাবে না।
আমি নিজে বরাবরই নির্দলীয় সরকারের যে পদ্ধতিটি চলে আসছে, তা আরও দুটি নির্বাচনে চলুক- তার পক্ষে। কিন্তু আজ সেটি একটি অলীক কল্পনা এবং মরীচিকার মতো মনে হচ্ছে। সুপ্রিমকোর্টের অবজারভেশনকে কেন্দ্র করে যে পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়েছে, তাকে মোকাবিলা করতে হলে বিরোধী দলকে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে নামতে হবে।
ঘরে বসে হরতালের ডাক, বোমাবাজি, ককটেল বিস্ফোরণ আতঙ্কের সৃষ্টি করবে- এটি সত্য, কিন্তু তাদের কাঙ্ক্ষিত বিজয় আনতে পারবে না- এটি প্রায় সুনিশ্চিত। এখানেই জাতি উদ্বিগ্ন এবং সামাজিক বিপর্যয়ের আশঙ্কাটি আরও ঘনীভূত করেছে।
ওয়ান-ইলেভেনের চেয়েও উদ্ভূত এ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির পাদপীঠে দাঁড়িয়ে দেশের সাংবাদিক, নির্মোহ বুদ্ধিজীবী, অকুতোভয় ছাত্রসমাজ, সার্বিকভাবে দেশের মানুষের কাছে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ এবং দাবি- সামাজিক বিপর্যয়ের হাত থেকে অথবা সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধের এই মর্মান্তিক আশঙ্কা থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে আমাদের সবাইকে অকুতোভয়ে সরব হতে হবে। কোনো প্রাপ্তি-প্রত্যাশার আঙ্গিক থেকে নয়, দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে; সামাজিক বিপর্যয়ের হাত থেকে সবাইকে বাঁচাতেই হবে।
লেখক : স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।