মোদীর হাত মমতা ধরবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে। মোদীর নেতৃত্বাধীন (যদি হয়) কেন্দ্রীয় সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেয়েও তাঁর কাছে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে রাজ্য শাসন নিজের হাতে রেখে দেওয়া অনেক বেশি জরুরি বলে অনেকে মনে করেন। ক্ষমতার রাজনীতির এই অতি-সাধারণ জ্ঞানটুকু আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর নেই এ কথা মনে করার কোনো কারণই নেই।
হিন্দুপ্রধান দেশ হলেও এই ভারতবর্ষে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের কাছেই সংখ্যাগুরুর সাম্প্রদায়িকতা এখনো প্রায় একটি অচ্ছুত বিষয়। '৯৮-'৯৯ সালে বিজেপিকে কেন্দ্র করে বিবিধ কংগ্রেস-বিরোধী দলের যে কোয়ালিশন গড়ে উঠেছিল তার সর্বপ্রধান কারণ ছিল অটলবিহারি বাজপেয়ীর নরমপন্থী ভাবমূর্তি, অভিজ্ঞতা ও সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা।
তিনি নিজে লখনউয়ের মতো (যেখানে মুসলিম ভোটারদের সংখ্যা মোটেই অবজ্ঞা করার মতো নয়) লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের মাতব্বরির কাছে সর্বদা মাথা নত করতেন না, এমনকি রাম জন্মভূমি আন্দোলনেও তার যোগদান ছিল অনেকটাই চাঁদ সদাগরের মনসা পূজার মতো। বাজপেয়ী আরএসএস-এর সদস্য ছিলেন কিন্ত্ত উগ্র হিন্দুত্ববাদী ছিলেন না, একমাত্র হিন্দুয়ানাকে পাথেয় করেও কোনো দিন সেভাবে রাজনীতি করেননি।
নির্বাচনী জনসভার মঞ্চে দাঁড়িয়ে উত্তরপ্রদেশের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং ও মায়াবতীর সঙ্গে তুলনা টেনে মোদী যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লি-বিরোধী মনোভাবের প্রশংসা করেছেন, বন্ধুহীনতার অসহায়তাই তার উত্সস্থল। ভোটের আগে দেশের সামান্য দুটি আঞ্চলিক দলের বাইরে অন্য কারও সমর্থন জোটাতে অপারগ মোদী তাই ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য শরিক খোঁজার চেষ্টা করে চলেছেন। অতীতে দু'বার তৃণমূল কংগ্রেস দিল্লিতে এনডিএ-র শরিক হয়েছিল বলে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর মনে করছেন তৃতীয় বারের জন্যও বোধ হয় সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটা অসম্ভব নয়।
অন্তত চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি তো নেই! কলকাতায় এসে ব্যবসায়ীদের সম্মেলনেও মোদী প্রকারন্তরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকেই সমর্থন করে গিয়েছিলেন৷ বলেছিলেন, ৩৪ বছরের বামশাসনের নৈরাজ্য দূর করে সুশাসন কায়েম করতে একটু সময় তো লাগবেই!
আবার এখানেই মায়াবতীর সঙ্গে মমতার মৌলিক পার্থক্য। বিজেপির সঙ্গে থাকলে বহেনজির স্বর্গবাস হলেও হতে পারে, কিন্ত্ত দিদির সাক্ষাত্ সর্বনাশ। উত্তরপ্রদেশের মতো জাতপাতের অঙ্ক বাংলায় অচল, ফলে কোনো দলেরই সেই অর্থে এখানে জাত-ভিত্তিক রাজনীতি করেনা। কিন্ত্ত লোকসভা, বিধানসভা এবং পঞ্চায়েত, উপর্যুপরি তিনটি নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে বামবিরোধী যে সামাজিক জোটটি তৈরি হয়েছে সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজ তার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ৷ অনেকটা তপসিলি জাতি ও উপজাতিদের মতোই। বাকি ভারতবর্ষের মতো পশ্চিমবঙ্গেও সংখ্যালঘু ভোট কোনও দিন কোনো নির্বাচনে একটি রাজনৈতিক দলের বাক্সে গিয়ে পড়েনি।
তবুও সংখ্যালঘুদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠরা যেদিকে থাকেন, ভোটের পাল্লা ভারি থাকে সেই দল বা জোটের দিকেই৷ আপাতত সেই অ্যাডভান্টেজ তৃণমূলের। পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলে দক্ষিণবঙ্গের সংখ্যালঘু প্রধান কয়েকটি অঞ্চলে তৃণমূল ধাক্কা খেলেও মোটের উপরে তাদের বেশির ভাগের এখনো ভরসা আছে দিদির ওপরেই।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।