আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তারিক আলি, আপনাকে আমাদের প্রয়োজন নেই

প্রথম আলো অদ্ভুদ । আরো অদ্ভুদ তাদের পাকিরাও ভালো প্রজেক্ট । আনপড় পাঠকের এই প্রজেক্ট সম্পর্কে না জানতে পারেন। তাদের জন্য একটা ছোট্ট সূচনা।
পাকিরাও ভালো প্রজেক্ট প্রথম আলো ঘোষিত অফিসিয়াল কোন প্রজেক্ট নয়।

সবকিছু নিয়ে প্রশ্ন তোলা ব্লগজগত থেকে এইরকম প্রজেক্ট বাস্তবে আছে এরকম অনুমানের সূচনা। প্রথমআলো গ্রুপ নিয়মিত বিরতিতে পাকিস্তান থেকে বুদ্ধিজীবী ভাড়া করে আনে। এরা হাবিজাবি মিশিয়ে পাকিস্তানের হাতেগোনা কিছু লোকের বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালোমন্দ কথা বলে এরকম লোকেদের হাজির করে। নিয়মিত এরকম পাকিস্তানি ভালো লোক মিডিয়াতে হাজির হলে, এবং সেইসাথে সেখানকার লোকেদের একাত্তর প্রশ্নে অবস্থান চেপে গেলে জনমানসে সব পাকিস্তানি আসলে খারাপ না এরকম একটা ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য হয়। পুনর্মিত্রতার এই প্রজেক্ট বেশ কিছুদিন ধরে চলছে।


পাকিরাও ভালো প্রজেক্টে সর্বশেষ সংযোজন পাকিস্তানী বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ বুদ্ধিজীবি তারিক আলি। আজ বেশ বড়সড় আকারে প্রথম আলোতে তারিক আলির সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে। (১) তারিক আলি বেশ বিখ্যাত লোক। ইনি নিয়মিত গার্ডিয়ান, কাউন্টার পাঞ্চ ইত্যাদিতে লেখেন। বেশ কয়েকটা বইও আছে তার।

বিবিসির হয়ে একটি স্কৃনপ্লেও লিখেছিলেন তিনি। সেখানে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে চিতাবাঘ ও জেনারেলদের শেয়াল বলা হয়েছিলো। (২)
তো এই রাজনৈতিক ওরিয়েন্টেশন তালেবান এ্যাপলোজেটিক বামপন্থা। এই তালেবান এ্যাপলোজিস্ট বামপন্থীরা আমেরিকা যেহেতু খারাপ সেহেতু আমেরিকার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সবার সাথে (সেটা তালেবান হলেও) মিত্রতা বোধ করেন। তারিক আলি যুদ্ধ পরবর্তী তালেবানদের সম্পর্কে কয়েক বছর আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন (৩),
Ali: "I have, just recently, written of the previous Taliban regime in Afghanistan as a 'malignant social order' and for that reason insisted on a national coalition government in that country following the NATO withdrawal. Given the massive increase in support for the new version of the Taliban that is the result of the war and occupation, any government has to include their representatives."


কোন গোষ্ঠির ম্যাসিভ সাপোর্ট থাকলে সেই দলকে সরকারে রাখতে হবে এটা একটা চমকপ্রদ থিওরী।

আরোও চমকপ্রদ বিষয় উনার বক্তব্য থেকে জানা গেল যে তালেবানদের আগেকার ভার্সন ম্যালিগন্যান্ট সোশাল অর্ডার হলেও বর্তমান তালেবানদের (অর্থাৎ যারা মেয়েদের পড়ালেখার দাবি তোলার কারণে মালালার মাথায় গুলি করেছিলো) massive increase in support ঘটেছে এবং এজন্য তাদের সরকারে রাখতে হবে। তো এই সাক্ষাৎকারটা প্রকাশের বছরেই বিবিসি আফগানিস্তানে একটা জরিপ করেছিলো। সেখানে ৪% লোক তালেবানদের সমর্থন করে জানা গেছে। (৪) তারিক আলি কোথায় এই ম্যাসিভ ইনক্রিজ ইন সাপোর্ট দেখতে পেয়েছিলেন সেটা এক গবেষণার বিষয়।
তো এহেন জ্ঞানী লোক তারিক আলি সম্প্রতি ঢাকা এসেছেন পুঁজিবাদি চরিত্রের সাহিত্য সম্মেলন হে ফেস্টিভাল উপলক্ষে।

রিভিশনিস্ট চলচ্চিত্র মেহেরজানের পক্ষে জান লড়ে দেয়া রিকনসিলিয়েশন তত্ত্বের প্রবক্তা ফারুক ওয়াসিফ দৌড়ে গেছেন পাকিরাও ভালো প্রজেক্টে আরো একটা নতুন মুখ যোগাড় করতে। তারিক আলি সাক্ষাৎকারে বলছেন,
মানুষ যদি ক্ষুধার্ত থাকে, মানুষের যদি নিরাপত্তা না থাকে, তারা যদি মজুরি না পায়; তাহলে ধর্ম বা সেক্যুলারিজমে কিছুই যাবে আসবে না মানুষের।


ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি যে জনসংখ্যার অর্ধেকটাকে পর্দার আড়ালে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থেকে দুরে সরিয়ে রাখে এবং সেটা যে ক্ষুধার্ত লোকের সংখ্যা বাড়ায় এটা সাধারণ জ্ঞান। রাজনীতিকে সেকুলার করলে সেটা ক্ষুধার ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে এই বিষয়ে বোধকরি উনি ধারণা রাখেন না।
বাংলাদেশের নারী পুরুষ সমতা নিয়েও তারিক আলি দুই পয়সা দিয়েছেন।

উনি বলছেন,
আমরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে দেখতাম রাজনীতির পথপ্রদর্শক হিসেবে। সে সময় বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের মান ছিল খুবই উঁচু, নারী-পুরুষের মধ্যে ভেদাভেদ কম ছিল। নারীরা অনেক মুক্তভাবে কথা বলত, চলাফেরা করত। সে সময়ের বাংলাদেশের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা করলে গভীর বেদনা হয়।


তারিক আলীর কাছে কয়েকটা প্রশ্ন করা যেতে পারে।

যেমন. ১. স্বাধীনতা আগে এবং বর্তমানে কতো সংখ্যক নারী সরাসরি অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতো? ২. শিক্ষাখাতে নারীপুরুষের অনুপাত স্বাধীনতা আগে কতো ছিলো এবং স্বাধীনতার ৪০ বছর কতো হয়েছে? ৩. নারী প্রজনন স্বাস্থ্য, রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ স্বাধীনতার আগে কতো ছিলো এবং এখন কীরকম অবস্থায় আছে এগুলো?
তারিক আলি সম্ভবত জবাবে তালিবানদের জনপ্রিয়তা বাড়ার মতো তথ্য বের করে আমাদের দেবেন। আমরা সেটার অপেক্ষায় থাকলাম।
তারিক আলি বাংলাদেশের এহেন দুরাবস্থার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন। উনি বাংলাদেশ কেন মুক্তিকামী প্রগতিশীল রাষ্ট্র হয়নি সেটার ব্যাখ্যা হাজির করেছেন এভাবে,
বলতেই হচ্ছে, এর কারণ সে সময়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের একের পর এক ভুল। তারা একদলীয় রাষ্ট্র গঠন করেছিল, কর্তৃত্ববাদী শাসন চালু করেছিল।

মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব করেছিল, ভিন্নমতাবলম্বীদের আটক করছিল। তাহলে অতীতের সঙ্গে আর পার্থক্য কী থাকল? তাই স্বাধীনতার পরের প্রথম চার-পাঁচ বছরের ইতিহাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একসময় যখন স্বাধীনতার উচ্ছ্বাস কমে এল, তখন মানুষ চাইছিল বাস্তব পরিবর্তন। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু যা তারা চেয়েছিল, তা তারা পায়নি।

মনে রাখতে হবে, যে রাজনীতিবিদেরা জনগণকে সন্তুষ্ট করতে পারেন না, মানুষ তাঁদের জন্য আর জীবন দেয় না।


তারিক আলি আওয়ামী লীগের সাড়ে তিন বছর টেনে চার পাঁচ বছরে টেনে নিয়ে গিয়ে যাবতীয় দোষ আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চাপিয়েছেন। এরপর একটা বিধ্বস্ত দেশে যেখানে খাবার সংস্থান পর্যন্ত নেই সেখানে আরোও কী কী করা যেতে পারতো সেই বিষয়ে তার বক্তব্য অনুপস্থিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যার পর পাকিস্তানি প্রেতাত্মার আছর বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসে সকল প্রগতির সম্ভাবনা বিনাশ করেছিলো সেটার সম্পর্কেও কোন বক্তব্য নেই।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে গিয়ে ভাসানি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেছেন ফারুক ওয়াসিফ।

তারিক আলি ভাসানি প্রসঙ্গে একটু ঠিক বলেছেন যে ভাসানি পাকিস্তানি রাষ্ট্রের সংকট বুঝতে পারেননি। তবে শেষে তিনি "স্বাধীনতাসংগ্রাম যদি মুজিব ও ভাসানীর যৌথ নেতৃত্বে পরিচালিত হতো, তাহলে হয়তো ইতিহাস অন্য রকম হতো। " বলে উল্লেখ করেছেন।
পাকসেনাপতি আইয়ূব খান সমর্থক ভাসানি বাংলাদেশের রাজনীতির মূল মঞ্চে আসার সুযোগ পাননি এটা একদিক দিয়ে ভালো। এই লোকের গুরুত্ব বঙ্গবন্ধুকে অপছন্দ করার মধ্যে নিহিত।

এর বেশি নয়।
সাক্ষাৎকার শেষ হয়েছে তারিক আলির নিজস্ব এ্যাপলজির মধ্য দিয়ে। উনি হে ফেস্টিভাল বৈশ্বিক কর্পোরেট কালচারের অংশ বলে উনি এটা পছন্দ করেন না। কিন্তু তবুও তিনি এসেছেন কারণ তিনি "ঢাকায় আসতে চেয়েছি"লেন। ভাবখানা এরকম যে হে ফেস্টিভালের মাধ্যমটা না থাকলে উনি ঢাকা আসতে পারতেন না।

চরিত্র ও কাজকর্মে সততা থাকলে উনি হে ফেস্টিভাল বাদ দিয়েই টিকেট কেটে ঢাকা ঘুরে যেতে পারতেন। সেটার বদলে উনি উনার উনার কর্পোরেট স্পনসর্ড কলোনিয়াল সাহিত্যচর্চা সম্মেলনে আসা হালাল করতে চাচ্ছেন "ঢাকায় আসতে চেয়েছি" এই বলে!
বাংলাদেশ সম্পর্কে এহেন বকলম ধারণার ভিনদেশী যোগাড় করে মাথায় তোলার মধ্যে প্রথম আলোর রাজনীতি আছে। এই রাজনীতি চিহ্নিত করে প্রতিরোধ করাই হবে প্রথম পদক্ষেপ। বাংলাদেশ এইসব ভিনদেশী বুদ্ধিজীবি ছাড়াই এগিয়ে যাবে। সেটা ওরা স্বীকার করুক আর না করুক।


সূত্রঃ
১. বিশেষ সাক্ষাৎকার: তারিক আলি নতুন রাজনীতি ছাড়া পরিবর্তন আসবে না প্রথম আলো লিংক
২. The Leopard and the Fox: A Pakistani Tragedy
৩. Tariq Ali on Obama: Imperialism with a human face
৪. বিবিসি জরীপ ফলাফল। প্রশ্ন ১০ দ্রষ্টব্য।

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.