শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওঠা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগজনিত বিভাজনকে কোনোমতে চাপা দিয়ে ঐক্যের অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে গতকাল রোববার শেষ হয়েছে ৫৩টি দেশের এই জোটের কলম্বো শীর্ষ সম্মেলন।
সম্মেলন শেষে মতৈক্য হওয়া বিষয়গুলোর ওপর একটি যৌথ ঘোষণা দেওয়া হয়। শ্রীলঙ্কার মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়টি পুরো সম্মেলনের ওপর ছায়া ফেললেও ঘোষণাপত্রে এ বিষয়ে সরাসরি কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এতে শুধু বলা হয়, কমনওয়েলথের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মতো মৌলিক মূল্যবোধকে এগিয়ে নেওয়া হবে।
সম্মেলনে মতৈক্য হওয়া বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে উচ্চ ঋণ ও দারিদ্র্যের সমস্যা মোকাবিলা, প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রচেষ্টায় সাম্যের বিষয়টিকে উপেক্ষা না করা এবং ছোট ছোট দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত হুমকি মোকাবিলায় সহায়তা করা।
পর্যবেক্ষকদের মতে, তিন দিন ধরে সম্মেলন চলাকালে নেতাদের মধ্যে যে বিভেদ সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে, তাকে দায়সারাভাবে আড়াল করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছে না ঐক্যের এই প্রদর্শন। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার ২৬ বছরের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের অবসানের সময় সংঘটিত ‘যুদ্ধাপরাধ’ নিয়ে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ উত্থাপন ম্লান করে দিয়েছে এবারের সম্মেলনের অন্য সব আলোচ্য বিষয়কে।
কমনওয়েলথের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব শ্রীলঙ্কার হাতে তুলে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, অস্ট্রেলিয়া শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়তে চায়। তবে দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যে উদ্বেগ রয়েছে, তা প্রশমনে আরও অনেক কিছু করতে হবে।
আর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সম্মেলনের প্রথম দিনেই গৃহযুদ্ধের সময়ের উত্তপ্ত অঞ্চল জাফনা সফরে গিয়ে আলোচিত হন। সেখানে তিনি গৃহযুদ্ধের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
২০০৯ সালের মে মাসে শেষ হওয়া শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের লড়াইয়ের চূড়ান্ত মাসগুলোতে জাতিসংঘের হিসাবে ৪০ হাজারের বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়। ওই সময় সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। এবারের কমনওয়েলথ সরকারপ্রধানদের সম্মেলনজুড়েই ঘুরেফিরে এসেছে এই যুদ্ধাপরাধের প্রসঙ্গটি।
সম্মেলনের আয়োজক শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষেকে তিন দিন ধরেই এ নিয়ে প্রশ্ন সামাল দিতে হয়েছে। মানবাধিকার বিতর্কের কারণে ৫৩টি সদস্য দেশের মধ্যে মাত্র ২৭টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানেরা এবারের সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। কানাডা, ভারত, মরিশাসসহ বেশ কয়েকটি দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানেরা সম্মেলনে যোগ দেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন।
তবে এবারের সম্মেলন ব্যর্থ হয়েছে, এ কথা মানতে নারাজ কমনওয়েলথের মহাসচিব কমলেশ শর্মা। তাঁর ভাষ্য, এই সম্মেলন যে খুবই অর্থবহ ও সফল হয়েছে, তার নেতাদের মধ্যে মতৈক্য হওয়া বিষয়গুলোতেই স্পষ্ট।
মতৈক্য হওয়া বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে ছোট দেশগুলোকে সহায়তার জন্য ধনী দেশগুলোর প্রতিশ্রুত তহবিল পাইয়ে দেওয়া। সবচেয়ে বেশি হুমকিতে থাকা দেশগুলোর একটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র সামোয়ার প্রধানমন্ত্রী টুইলেপা সেইলিলি মালিলিগাওই বলেন, ‘কারণগুলো আমরা সবাই জানি, সমাধানও জানি...এখন যেটা প্রয়োজন, তাহলো জলবায়ু পরিবর্তন থামাতে প্রভাবশালী দেশগুলোর রাজনৈতিক সদিচ্ছা। ’
শ্রীলঙ্কায় এবারের সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রতিবাদে মরিশাস নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় পরবর্তী শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে দক্ষিণ ইউরোপের ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ দেশ মাল্টায়। এএফপি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।