সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেওয়া জাতীয় পার্টির মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ২৬ ঘণ্টা আত্দপোগনে থাকার পর গতকাল বিকাল সোয়া ৩টায় প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবনে ফিরে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। একইসঙ্গে নির্বাচনে না যাওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, সব দল না এলে তার দল নির্বাচনে যাবে না, যাবে না, যাবে না। এটাই ফাইনাল কথা। দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহরেরও নির্দেশ দেন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি।
বিএনপির সঙ্গে যাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে সাংবাদিকদের উল্টো প্রশ্ন রেখে বলেন, বিএনপির সঙ্গে যাওয়া কি উচিত হবে। আত্দগোপনে থাকার সময় বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে আপনার বৈঠক হয়েছে এমন প্রশ্ন করলে কিছুক্ষণ চুপ থাকেন তিনি। ২৬ ঘণ্টা কোথায় ছিলেন। জবাবে বলেন, এক বন্ধুর বাসায় ছিলাম। নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো চাপ আছে কিনা। জবাবে বলেন, আমাকে হুমকি দেবে। কোনো চাপ নেই। আতঙ্ক নেই। পালিয়ে ছিলেন জানতে চাইলে সাংবাদিকদের বলেন, পালিয়ে ছিলাম তোমাদের (সাংবাদিকদের) ভয়ে। এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি একক নির্বাচন করবে। সব দল না এলে নির্বাচনে অংশ নেব না। এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া কঠিন। মন্ত্রী-উপদেষ্টারা পদত্যাগ না করলে কী ব্যবস্থা নেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই সবাই পদত্যগ করবে। এরশাদ বলেন, দেশের অবস্থা ভালো না। প্রতিদিন মানুষ আগুনে পুড়ছে। এ অবস্থায় প্রার্থীরা এলাকায় যেতে পারবেন না। দেশের অবস্থা সামনে আরও খারাপ হবে। দেশের ১০০ ভাগ লোকই নির্বাচনের বিপক্ষে। পথে নেমে লোকজনকে জিজ্ঞাসা করেন, তারা প্রত্যেকেই বলবে নির্বাচনের বিপক্ষে তারা। শেষ কথা নির্বাচনে যাব না। দলের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করো, নিজেদের জীবন বিপন্ন করো না।
দিনব্যাপী এরশাদের বাসার সামনে নেতা-কর্মীদের ভিড় : এরশাদ বেলা ৩টায় বাসায় ফিরবেন এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবনের সামনে অবস্থান করতে থাকেন। ঢাকা-৫ আসনের প্রার্থী মীর আবদুস সবুর আসুদ, ঢাকা-৪ আসনের সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা-৯ আসনের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেনসহ অসেনেই মিছিল নিয়ে আসেন। তারা স্লোগান দেন_ এরশাদের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে-ঘরে। কয়েক হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিত হন প্রেসিডেন্ট পার্কের সামনে।
মন্ত্রী-এমপিরা রিসিপশনে : এরশাদ প্রেসিডেন্ট পার্কে ফেরার পর তার ৫ম তলার বাসভবনে পার্টির মন্ত্রী-উপদেষ্টা, প্রেসিডিয়ামসহ কাউকেই উপরে ওঠার অনুমতি দেননি সাবেক এ রাষ্ট্রপতি। নিচতলার রিসিপশনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে দেখা গেছে পার্টির মহাসচিব ও বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম ও মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন বাবলু, আরেক মন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়ামের সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, আহসান হাবিব লিংকন, নূরে হাসনা লিলি চৌধুরী এমপি, মীর আবদুস সবুর আসুদ, ইকবাল হোসেন রাজু, লিয়াকত হোসেন খোকা, ইসহাক ভূঁইয়া প্রমুখ। নেতা-কর্মীরা বলাবলি করছিলেন, আনিস-বাবলু এই প্রথম স্যারের (এরশাদ) বাসায় উঠতে পারলেন না। এ সময় রওশন এরশাদ, জিএম কাদের, সালমা ইসলামকে দেখা যায়নি।
২৬ ঘণ্টা পর প্রকাশ্যে এরশাদ : মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় এরশাদ সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এরপর থেকেই লাপাত্তা এরশাদ। গতকাল বিকাল সোয়া ৩টায় এরশাদ সাদা রংয়ের শ-৪৬৯-এর একটি গাড়িতে করে বাড়ির পেছনের গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। সূত্র জানায়, গুলশানের একটি বাড়িতে ছিলেন তিনি।
এরশাদ-সুজাতার ৪০ মিনিট বৈঠক : হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের সঙ্গে ৪০ মিনিট একান্ত বৈঠক করেন। ৪টা ১০ মিনিটে বারিধারার বাসভবনে বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা সুজাতা সিংকে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করলেও তিনি এসবের কোনো উত্তর দেননি। বৈঠক প্রসঙ্গে এরশাদ নিচে নেমে বলেন, সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং তাকে নির্বাচনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে তিনি তাকে জানিয়েছেন, দেশের এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। এরশাদ বলেন, ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব আমার কাছে জানতে চেয়েছেন আমি নির্বাচনে না গেলে যদি জামায়াত-শিবির ক্ষমতায় যায়। আমি তাকে স্পষ্ট করে বলেছি, কোন দল ক্ষমতায় আসবে তা আমার দেখার বিষয় নয়। পরিবেশ না হলে এবং সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না হলে সে নির্বাচনে আমি অংশ নেব না। কোনো পাতানো নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে না। সুজাতা সিংকে জানিয়েছি, সরকার সবাইকে শত্রু (হোসটাইল) বানিয়েছে। দেশের জনমত ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য, বর্তমান মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টি থেকে রয়েছেন জিএম কাদের, রওশন এরশাদ, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, মুজিবুল হক চুন্নু এবং সালমা ইসলাম। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলু।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।