আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ নৈরাজ্য কাম্য নয়

এ পৃথিবীতে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। তবে যেসব না হলেই নয়, তার মধ্যে অন্যতম আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নিরাপত্তা। যে সমাজে নিরাপত্তা নেই, তা বন্যদের ভাগাড়ে পরিণত হয়। সর্বময় কল্যাণ ও সুন্দরের ধর্ম ইসলাম মানবজীবনের সর্বত্র এ নিরাপদ পথচলার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। নিছক নিজের জন্য নয়, বরং অন্যের সম্মান ও সম্পদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে।

শুধু আইন রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব নয়, ইসলাম বলেছে, আমরা প্রত্যেকে ভাই ভাই। যার হাত এবং মুখ থেকে অন্য ভাই নিরাপদ নয়, সে তো মুমিন হতে পারে না। প্রিয় পাঠক, সামান্য ভূমিকার পর আমরা মূল প্রসঙ্গে আসতে চাচ্ছি। আমাদের দেশে কিছুদিন পর পর ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও ঘটনা ঘটছে। রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমরা রাস্তায় নেমে পড়ি এবং কখনো কখনো তা ইসলামের নামেও।

তারপর নির্বিচারে মানুষের গাড়ির কাঁচ ভাঙতে শুরু করি, টায়ারে কিংবা মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে নিজেদের প্রতিবাদ জানাই। এই যে অন্যের সম্পদে আগুন ধরিয়ে আমরা নিজেদের ক্ষোভ ভাষা প্রকাশ করছি, আদৌ কি এসবে কোনো সমাধান হচ্ছে? নাকি এমন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে নিজেদের কাঁধে তুলে নিচ্ছি পরকালের অশোধ্য দেনার বোঝা? আসুন, বিদায় হজ্জে দেওয়া মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের (সা.) সেই ঐতিহাসিক ভাষণ একবার পড়ে দেখি। এর প্রথম দিকেই মানবতার মুক্তিদূত রাসূলে করীম (সা.) আরাফাতের মাঠে সমবেত লাখ লাখ সাহাবাদের উদ্দেশ্য করে বলে চলেছেন, ‘‘তোমরা মনে রেখো, তোমাদের পরস্পরের ধন সম্পদ এবং তোমাদের রক্ত একে অপরের কাছে তেমনই সম্মানিত যেমন আজকের এ মাসের এ মহান দিনটি এবং এ পবিত্র নগরী তোমাদের কাছে সম্মানিত। এ আদেশ এবং সিদ্ধান্ত তোমাদের রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়া পর্যন্ত কার্যকর। ’’ আমরা হজের মাসকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, আরাফাতের পবিত্র দিন এবং মক্কা নগরীকে কতোই না সম্মানিত ও পবিত্র ভেবে থাকি, অথচ আমাদের প্রিয়তম নবী করীম (সা.) আমাদের মধ্যে একে অন্যের যে জীবন ও সম্পদকে এরকম সম্মানিত ও স্পর্শকাতর বলে গেলেন, সে বিষয়ে আমরা যথেষ্ট উদাসীন।

মুসলমান হিসেবে এ উদাসীনতা আমাদের কাম্য নয়। আবেগ কিংবা উত্তেজনাবশত যে কোনো বিশৃঙ্খলা কিংবা সীমালঙ্ঘন ইসলামে স্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছে। মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা রক্ষায় এর চেয়ে অন্য কোনো বিকল্প নেই। সমাজে বিদ্যমান আল্লাহপাকের নেয়ামতসমূহের মধ্যে নিরাপত্তা অন্যতম। আর সেজন্যই তৎকালে কুরাইশ বংশকে আল্লাহপাক স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘তারা যেন এ কাবা ঘরের মালিকের ইবাদত করে।

যে মালিক তাদের ক্ষুধা থেকে রেহাই দিয়ে খাদ্য দিয়েছেন এবং ভয়-ভীতি থেকে নিরাপত্তা দান করেছেন। ’’ (সূরা কুরাইশ) অন্যায় সহ্য করে মুখ বুঁজে বসে থাকা ইসলামের শিক্ষা নয়, বরং মানুষের অধিকার এবং দাবি আদায়ে ইসলামের ভূমিকা এবং নির্দেশনা সর্বোৎকৃষ্ট। তেমনিভাবে নির্বিচারে যে কারোর সম্পদ বিনষ্ট করা সম্পর্কেও কঠিন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ইসলামে। শাসক এবং শোষিত, আল্লাহপাকের কাছে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতেই হবে। জনগণের অধিকার সম্পর্কে প্রতিজন দায়িত্বশীলকে প্রশ্ন করা হবে।

যে কোনো স্বার্থে রাষ্ট্রের কিংবা ব্যক্তিগত সম্পদ বিনষ্ট করা নিয়ে জবাব দিতে হবে আমাদেরও। রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক যে কোনো দাবি আদায়ের জন্য নিরীহ মানুষকে কষ্ট দেওয়া আমাদের অজান্তে ধ্বংস করে দিচ্ছে পরকালের সঞ্চিত পূণ্যকে। এর দায় শোধ না করা পর্যন্ত সেদিন মুক্তি মিলবেনা কারো। পবিত্র কাবা ঘরের সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করার জন্য মহান আল্লাহ কাবার আঙিনায় সব ধরনের রক্তপ্রবাহ এবং যুদ্ধ-বিগ্রহকে হারাম ঘোষণা করেছেন। ভূমণ্ডলের সবচেয়ে দামি এ কালোঘরের চেয়েও মহান আল্লাহপাকের কাছে একজন মুসলমানের দাম বেশি।

কোনো মুসলমানকে অপদস্থ করা কিংবা তাকে আহত করার অপরাধ আল্লাহপাকের কাছে মার্জনীয় নয়। হাদীসের সুবিখ্যাত গ্রন্থ নাসাঈ শরীফে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল (সা.) বলেছেন, শপথ ওই মালিকের যার হাতে আমার প্রাণ, একজন মুসলমানকে হত্যা করা আল্লাহপাকের কাছে পুরো দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাওয়ার চেয়ে বেশি ভয়াবহ গুনাহ। আরেক হাদীসে তিনি বলেছেন, কিয়ামতের মাঠে অন্যায়ভাবে নিহত ব্যক্তি তার কর্তিত মাথা হাতে নিয়ে রক্তমাখা অবস্থায় আল্লাহপাকের কাছে নালিশ করবে, হে আল্লাহ, তাকে জিজ্ঞেস করো, কেন সে আমাকে মেরে ফেলেছিল? আল্লাহপাক তাকে আরশের কাছে টেনে নিবেন। পবিত্র কুরআনের কয়েক আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহপাক নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীকে পছন্দ করেন না। তাই, আন্দোলনের নামে মানুষের সম্পদ কিংবা রাষ্ট্রীয় বস্তু ধ্বংস করা সভ্য সমাজের কর্মসূচি হতে পারে না।

নিজেদের স্বার্থে আরও দশজনকে বিপদে ফেলার এ অসহনীয় দুরাবস্থার নাম রাজনীতি নয়। বরং সুচিন্তিত ও সুনিয়ন্ত্রিত কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের বলিষ্ঠ আওয়াজ সমাজ ও শাসকের কানে পৌঁছে দিতে পারাই সুস্থ রাজনীতির পরিচায়ক। এটুকু সুস্থতা হারিয়ে ফেলেছি বলেই কি আমাদের চারিদিকে আজ এতো অশান্তি ও অস্থিরতা? আমাদেরই কোনো কর্মকাণ্ডে যদি নির্দোষ সাধারণ মানুষ কষ্ট পায়, আল্লাহপাকের কাছে এমন বিশৃঙ্খলা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। হুটহাট করে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে যে বীরত্ব আমরা প্রদর্শন করছি, কি লাভ এটুকু সাহসিকতা দেখাতে গিয়ে যদি পরকালের মাঠে আমার নাম মানুষের অধিকার বিনষ্টকারীদের কালো তালিকায় লেখা হয়?  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।