বিএনপির কর্মসূচির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা মনে করছেন, ঢাকা অভিমুখে 'গণতন্ত্রের জন্য অভিযাত্রা' কর্মসূচি ঘিরে কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে বিএনপি। আর তাকে নিয়েই মূলত এ সতর্ক অবস্থান। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রগুলো বলছে, নৈরাজ্যের সৃষ্টি হলে তা প্রতিরোধে পুলিশ প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছেন মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
গত মঙ্গলবার বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া ওই কর্মসূচি ঘোষণা করার পর রাতেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেখানে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সূত্রমতে, ২৯ ডিসেম্বর ঢাকার আশপাশের সব প্রবেশমুখ দখলে রাখার চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ। দলটির কেন্দ্রীয় পরিষদ ঢাকার বাইরে বিশেষ করে আশপাশের জেলাগুলোতে দলীয় এমপিদের শক্ত অবস্থানে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। বিএনপির কর্মসূচির জবাবে আজ বিকালে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ঢাকার আশপাশের সব জেলার দলীয় নেতাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক বসছে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। মহানগর আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপির কর্মসূচি প্রতিহত করতে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ এবং ছাত্রলীগও প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, হেফাজতে ইসলামের ৫ মের ঘটনা মাথায় রেখে যে কোনো মূল্যে এই কর্মসূচি প্রতিহত করতে চান দলের নেতারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি' কর্মসূচি পালন করলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু মার্চ ফর ডেমোক্রেসির নামে মার্চ ফর টেরোরিজম, মার্চ ফর তালেবানি, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগও কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। তবে আমরা আশা করি প্রশাসন ঢাকা শহরকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, তাদের কাছে তথ্য আছে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৯ তারিখ নয়াপল্টনে জড়ো হয়ে বিএনপি নেতারা আর ঘরে ফিরবেন না। তারা সেখানেই রাস্তা অবরোধ করে বসে থাকবেন। বিষয়টি নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন সরকার দলীয় নেতারা। সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে বিএনপি এই কর্মসূচি দিয়েছে বলে ধারণা করছেন তারা।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, সারা দেশে জামায়াত-শিবিরি যেভাবে নৈরাজ্য করছে তাতে তারা ঢাকায় ঢুকতে পারলে পরিস্থিতি ভয়াবহ করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় জনগণের সঙ্গে ওইদিন আমরাও থাকব। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের সব অঙ্গসংগঠন মাঠে থাকবে। সংবিধান অনুযায়ী সমাবেশ তারা করতেই পারে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন করার অধিকার তাদের কেউ দেয়নি।
তবে বিএনপির কর্মসূচির ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম মন্তব্য করেছেন, খালেদা জিয়ার ঘোষিত 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি'র আহ্বানে জনগণ সাড়া দেবে না। তার নিজের দলের কর্মীরাই আসবে না। তাছাড়া তার এই কর্মসূচি অগণতান্ত্রিক। এটা হতে দেওয়া যায় না। কারণ স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের হাতে দেশের পতাকা তুলে দিয়ে জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা। তাই তার মুখে জাতীয় পতাকার কর্মসূচি ঘোষণা মানায় না।
গতকাল চাঁদপুরে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ঢাকামুখী অভিযাত্রার নামে সহিংসতা ও নৈরাজ্য সহ্য করা হবে না।
আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, যে কোনো মূল্যে এ কর্মসূচি প্রতিহত করা হবে। মার্চ ফর ডেমোক্রেসির নামে মার্চ ফর জঙ্গিবাদী, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হবে না।
২৮ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ইশতেহার ঘোষণা : ২৮ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার। এতে বড় কোনো চমক থাকছে না। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ইশতেহার জাতির সামনে প্রকাশ করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আগামী শনিবার বিকাল ৩টায় এ অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, দলের একজন শীর্ষ নেতার প্রেসে ইশতেহার ছাপার কাজ চলছে। আগামী দুই দিনের মধ্যেই সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রণীত এই ইশতেহারে আগামীতে দল ক্ষমতায় গেলে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কি করা হবে তার বিবরণ তুলে ধরা হবে। এবারের স্লোগান হচ্ছে- শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন এই সনদে ২০০৮ সালের মতো কোনো বড় ধরনের চমক থাকছে না। তবে দেশকে এগিয়ে নেওয়া এবং ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্য পূরণের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চমক দিনবদলের সনদের অসমাপ্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সনদে যেসব প্রতিশ্রুতি ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের কথা ছিল, সেগুলোর ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর আরও মনোযোগ দেওয়া হবে বলে নতুন ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচটি ইমামের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি এই ইশতেহার প্রস্তুত করেছেন। কমিটির বাকি সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন_ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন ও অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত।
ইশতেহারে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, যুদ্ধাপরাধের বিচার, ডিজিটাল বাংলাদেশ, স্থানীয় সরকার কাঠামো ও নারী উন্নয়ন খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে থাকছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, দারিদ্র্য বিমোচন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তির উন্নয়ন, কর্মসংস্থান এবং দক্ষ মানবশক্তি গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।