আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খোলাচিঠি : হাসান ফেরদৌসকে

ভূমিকা: আজকের প্রথম আলো তে "কূটনীতি বনাম রাজনীতি" শিরোনামে হাসান ফেরদৌসের লেখা একটি মতামত প্রকাশিত হয়েছে। লেখাটিতে হাসান ফেরদৌস পাকিস্তানের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক রাখার পেছনে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরার পাশাপাশি কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পর পাকিস্তান পার্লামেন্টের রেজলুশন বিষয়টিকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রস্তাব হিসেবে বিবেচনা করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে হাসান ফেরদৌসকে একটি খোলা চিঠি দিতে চাই। অবশ্য আমি মনে করি না এই চিঠি তাঁর বোধোদয় ঘটাবে, কারণ আমার মনে হয় না তিনি না বুঝে এ সব হাস্যকর যুক্তি অবতারণা করেছেন, বরং এটি প্রথম আলোর "পাকিরাও ভালু" বৃহত্তর প্রজেক্টের সাম্প্রতিক পিছিয়ে পড়াকে সামাল দিতে সুচিন্তিত পরিকল্পনার অংশ। কিন্তু তাঁর এই লেখাটি সাধারণ পাঠক মনে বিভ্রান্তি যাতে না ছড়ায়, সে উদ্দেশ্য নিয়েই লিখলাম।


হাসান ফেরদৌস সাহেব,
কূটনীতি বা রাজনীতি, কোনো বিষয়েই পান্ডিত্যের বিচারে আপনাকে চালেঞ্জ করার যোগ্যতা আমার নেই। কিন্তু আপনার লেখা "কূটনীতি বনাম রাজনীতি" মতামত প্রতিবেদনটি আপনার বিবেচনাবোধের বিষয়ে তীব্র সন্দেহ জাগিয়ে তুলল। লেখার শুরুতেই ভিন্ন দেশের একটি রায়ের বিষয়ে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট রেজলুশনকে আপনি "রুটিন ব্যাপার" হিসেবে অভিহিত করলেন। কিন্তু এই রুটিন ব্যাপারটি বাংলাদেশ অন্য কোনো দেশের ব্যাপারে ঠিক কয় বার করেছে, সে তথ্য দিলেন না। ১৯৭১ প্রসঙ্গে পাকিস্তান যে আর দশটা দেশের মত কেবল একটা দেশ না, বরং গণহত্যার মূল অভিযুক্ত পক্ষ এবং যুদ্ধে পরাজিত একটি পক্ষ, সেটাও ধর্তব্যে নিলেন না।

শুধু তাই না, কাদের মোল্লাকে সমর্থন করতে পাকিস্তানের মূল যুক্তি, শেষ দিন পর্যন্ত পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়ে যাওয়া, সে বিষয়টিকেও আপনি বিবেচনা করলেন না।
সব বুঝলাম, তার পর একটা হাস্যকর তত্ত্ব দিলেন, কূটনীতির সাথে নাকি রাজনীতি মেশানো যাবে না। এত দিন শুনতাম খেলার সাথে রাজনীতি না মেশানোর কথা। কূটনীতি রাজনীতির উর্ধ্বে ছিল কবে? পাকিস্তানের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে গৃহীত প্রস্তাব আপনার কাছে রাজনীতি না, কিন্তু বাংলাদেশের কোনো এক মন্ত্রীর একটি বক্তব্য আপনার কাছে রাজনীতি। পাকিস্তান প্রসঙ্গে সেই মন্ত্রীর "বর্বর" শব্দ উচ্চারণ করা নিয়ে আপনার বিশাল আপত্তি।

কোন মন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে কি বলেছেন আমি জানি না, কিন্তু ভারত-আমেরিকার সাম্প্রতিক বিরোধে কিন্তু ভারতের ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানীর প্রতি আমেরিকার কর্তৃপক্ষের আচরণকে বর্বর বলা হয়েছে ভারতের সরকারী তরফ থেকেই। কূটনীতি মানে পুতু-পুতু নীতি নয়, বরং নিজের অবস্থানকে বোঝাতে প্রয়োজনে শক্ত হওয়াও কূটনীতিরই অংশ।
পাকিস্তানের সাথে সুসম্পর্ক রাখার কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন যদি আমরা বৈরী হই, তাহলে সে সুযোগে নাকি পাকিস্তান সন্ত্রাসী 'রপ্তানি' করতে পারে। ভাই আপনি কোন দেশে ছিলেন? সন্ত্রাসী রপ্তানি না, পাকিস্তানের বাংলাদেশে সন্ত্রাসী তৈরির ফ্যাক্টরি আছে, যার নাম জামাতে ইসলামী। নতুন করে আর কিসের ভয় দেখান আপনি? এর পর দুর্বল গলায় তুলে আনলেন বানিজ্যিক সম্পর্কের বিষয়।

যদিও স্বীকার করে নিলেন দুই দেশের মধ্যে এমন কোনো বানিজ্য হয়না, তবে ভবিষ্যতে হতে পারে এই আশা নিয়ে কুটনৈতিক সম্পর্ক বানচাল করতে দেয়া যাবে না। তাছাড়া আমাদের অনেক মা বোনেরা নাকি পাকিস্তানি কাপড় ছাড়া ঈদ করতে পারেন না, তাদের জন্য এই সম্পর্ক রাখতে হবে। বলিহারি, পাকিস্তানের কাপড় অনেকের পছন্দ হতে পারে, কিন্তু পাকিস্তানি কাপড় ছাড়া ঈদ করতে পারবে না, এমন মানুষের কান্নার ভয়ে দেশের অপমান সহ্য করতে হবে, এই শিক্ষা দেয়ারই বা ধৃষ্টতা আপনি কিভাবে পেলেন?
এরপর বললেন পাকিস্তান নাকি বাংলাদেশের টি ২০ বিশ্বকাপ বয়কট করতে পারে। যে দেশে প্রতিনিয়ত বোমা হামলায় হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, যে দেশে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়না গত পাঁচ বছর ধরে, তারা নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে বিশ্বকাপ বয়কট করবে, যেখানে অন্য সকল দল খেলতে আসবে, এর চেয়ে হাস্যকর আর কি হতে পারে? এরপর তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে যে আমরা ভাই ভাই, ফালতু এক যুক্তি দিলেন। ভাবখানা এমন, যেন পাকিস্তান প্রথম বিশ্বের দেশ হলে ওদেরকে দেখে নেয়া যেত, কিন্তু তৃতীয় বিশ্ব বলে কিছু করা যাবে না।

এই যুক্তি যে কতখানি সারহীন, তা না হয় আর নাই বললাম।
সবশেষে চার্চিল আর সান জুর দুটি মহত বাণী দিয়ে বুঝিলেন কূটনীতি মানেই শান্তি আর কথার মারপ্যাঁচ। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকেরা কেউ সান জুর বাণী পড়েননি বলে আক্ষেপ করলেন, কিন্তু চার্চিল নিজেও কি সান জুর বাণী পড়েছিলেন? কারণ ইতিহাস থেকেই জানতে পারি হিটলারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ে চার্চিল গুলি খরচ করার বিষয়ে কখনই দ্বিধা দেখাননি। তবে আড়াই হাজার বছর আগেই "গুলি"র কথা সান জু কোন ঐশী ফরমান বলে জেনেছিলেন, সেটাও ঠিক বোধগম্য হলো না।
সবশেষে আপনার কাছে আমার অনুরোধ, কলম বেচে চলেন ভালো কথা, দেশের ইজ্জত বেচার নসিহত দেবেন না।

ধন্যবাদ।

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.