নিবেদিতপ্রাণ এক প্রধান শিক্ষকের পয়মন্ত হাতের স্পর্শে পাল্টে গেছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের চালচিত্র। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার দারিদ্র্যপীড়িত প্রত্যন্ত জনপদ জুগিন্দা। অভাবগ্রস্ত এ গ্রামের অধিকাংশ পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তাই অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে লেখাপড়া করাতে খুব একটা উৎসাহী নয়। এ কারণে গ্রামের জুগিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও শিক্ষার্থী পায় না। এ অবস্থা চলেছে অনেক বছর ধরে। বছর চারেক আগে এ স্কুলে প্রধান শিক্ষক হয়ে আসেন তোরিফা নাজমিনা। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া দেখে তিনি বিচলিত হয়ে পড়েন। এ দরিদ্র গ্রামের শিক্ষার উন্নয়নে শ্রেণীকক্ষের বাইরেও নিবিড় পরিচর্যার তাগিদ অনুভব করেন তিনি। উদ্দেশ্য একটাই- শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করা। কিন্তু এ জন্য বাড়তি টাকার দরকার। তার এ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। ব্যাস, এ মহৎ চিন্তার সঙ্গে একাত্দতা ঘোষণা করেন অনেকে। তারা আর্থিক সমস্যা সমাধানের জন্য বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। তারপর থেকে ফেসবুক বন্ধুদের দেওয়া সহযোগিতায় বছরে ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে চলছে শিশুদের স্কুলমুখী কার্যক্রম। নিয়োগ দেওয়া হয় একজন প্যারা শিক্ষককে। এখন গ্রামের শতভাগ শিশু স্কুলমুখী, পাসের হারও শত ভাগ। এ অবস্থা ধরে রাখার জন্য প্রতি মাসে স্কুলে ডাকা হয় অভিভাবক ও মা সমাবেশ। স্কুল ছুটির পর প্যারা শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়ে আরও দুই ঘণ্টা ক্লাস করান। শিক্ষার্থীরা যাতে স্কুলে যেতে ভয় না পায় সে জন্য তাদের হোমওয়ার্ক সুসম্পন্ন করতে সহায়তা করেন তিনি। প্রধান শিক্ষক তার নিজের টাকা এবং ফেসবুক বন্ধুদের দেওয়া অর্থ থেকে প্যারা শিক্ষককে মাসে চার হাজার টাকা করে বেতন দেন। আগে পরীক্ষার সময় ৫০ ভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ত। এখন সেটি অতীতের ঘটনা। প্রধান শিক্ষকের আন্তরিকতায় অন্য শিক্ষকরাও নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করছেন। অভিভাবকদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে দায়িত্বশীলতা। এ বছর অভিভাবকরা ঘোষণা করেছেন তারাও প্রধান শিক্ষকের কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা জোগাবেন। এ জন্য আরও চারজন প্যারা শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। জুগিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রমাণ করেছেন শিক্ষকতা নিছক চাকরি নয়, এটি এক মহৎ পেশার নাম। আমাদের দেশে এ পেশাদারিত্বের অভাব এখন প্রকট। এদিক থেকে প্রধান শিক্ষক তোরিফা নাজমিনা অভিনন্দন পাওয়ারই যোগ্য। সব শিক্ষকের কাছে অনুকরণীয় হয়ে উঠুন তিনি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।