বাংলাদেশে ভারতের সেনা নিয়োগের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। এ জন্য সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দলিলের মতো করে 'ভুয়া চিঠি'র ফ্যাঙ্ ও ই-মেইলের অনুলিপি বানানো হয়েছে। তা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সারা বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়েও পড়েছে। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে কর্মকর্তাদের নাম ও স্বাক্ষর বানানো হয়েছে তাদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে এটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ফ্যাঙ্ ও ই-মেইল। আর যাদের নাম ও স্বাক্ষর নকল করা হয়েছে তারা ভারতের বিষয়ে সংশ্লিষ্টও নন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ধরনের অপপ্রচার থেকে সাবধান থাকতে আহ্বান জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকসহ ইন্টারনেটে 'বাংলাদেশে ভারতীয় বাহিনীর উপস্থিতি'-সংক্রান্ত তথ্য প্রচার করা হচ্ছে যা সম্পূর্ণ অসত্য এবং বানোয়াট। এতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দিলি্লতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মধ্যকার কিছু কাল্পনিক যোগাযোগ উদ্ধৃত করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ অবস্থায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাচ্ছে যে উপরোলি্লখিত তথ্যগুলোর সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অথবা অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের অথবা বিদেশে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাসের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। এ ধরনের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হতে সবাইকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।
ফাঁস হয়েছে দাবি করে প্রচার করা দুটি দলিলের একটি ফ্যাঙ্ ও একটি ই-মেইলের কপি। এতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তা ও নয়া দিলি্লর বাংলাদেশ হাইকমিশনের মধ্যে দাফতরিক আলোচনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত বছরের ৬ নভেম্বর এ চিঠি দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, দেবহাটা, আসাশুনি, কলারোয়া ও সদর উপজেলায় ভারতের সেনা নিয়োগের জন্য বলা হয়েছে। এ চিঠিসংবলিত ফ্যাঙ্টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তৌফিক ইসলাম শাতিল, নয়া দিলি্ল মিশনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নুর ইসলাম, ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের সুজিত ঘোষের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সিল। সিলের ওপর স্বাক্ষরও আছে। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অনুবিভাগের দায়িত্ব অনুসারে তৌফিক ইসলাম শাতিল দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতের দায়িত্বে নেই। তিনি পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক অনুবিভাগের দায়িত্বে আছেন। ভারতসংশ্লিষ্ট দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের দায়িত্বরত শাহ আহমেদ শফির নাম উল্লেখ করা হয়নি কোথাও। অথচ তিনি চিঠিতে উল্লেখিত সময়ে নয়া দিলি্লসংশ্লিষ্ট বিষয়ের দায়িত্বে ছিলেন। এ ছাড়া কাল্পনিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকী, পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হকের নানান যোগাযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করা সিনিয়র কর্মকর্তা বর্তমানে বহিঃপ্রচার অনুবিভাগের মহাপরিচালক শামীম আহসান জানিয়েছেন, দলিল দুটির বিষয়ে সর্বোচ্চ পর্যবেক্ষণ করে দেখা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নিশ্চিত যে কম্পিউটার প্রোগ্রাম 'ফটোশপ' ব্যবহার করে এগুলো বানানো হয়েছে। হাতের লেখা-স্বাক্ষরসহ যাবতীয় বিষয় আজকাল ফটোশপের মাধ্যমে নকল করে তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করিয়ে দেন এই কর্মকর্তা।
চিঠিতে নাম এসেছে পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক উইংয়ের সহকারী সচিব হাসান আবদুল্লাহ তৌহিদেরও। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিদেশ মোতাবেক ঊধর্্বতন কর্মকর্তা তৌফিক ইসলামের জন্য তিনি চিঠির খসড়া প্রস্তুত করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হাসান আবদুল্লাহ তৌহিদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এটি সম্পূর্ণরূপে ভুয়া। কারণ ভারতের বিষয়ে আমাদের পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক অনুবিভাগের কোনো দায়িত্বই নেই। আবার সিল থেকে স্বাক্ষর আলাদা করলে বোঝা যায় এটি ড্রইং করে বানানো হয়েছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।