আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাংগঠনিক ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাজে সাংগঠনিক সম্পাদকদের ব্যর্থতা এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষুব্ধ দলটির সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরপর দুই মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতাই দলীয় কার্যক্রমে উদাসীন। ক্ষমতার চারপাশে ভর করা দলীয় নেতারা যতটা সক্রিয় সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ও প্রকল্প বাস্তবায়নে দলীয় কর্মকাণ্ডে যেন তার বিপরীত চিত্র। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বারবার উদ্যোগ নিলেও কেন্দ্রের নেতারা গণসংযোগে মনোযোগী নন। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রের সেতুবন্ধনেও দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সীমাহীন ব্যর্থতার সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি মনে করেন উপজেলা নির্বাচনে প্রথম দুই দফায় আওয়ামী লীগের ভরাডুবির জন্যও দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরাই দায়ী। শনিবার গণভবনে অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচনের বিশ্লেষণে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিষ্ক্রিয়তা ও উদাসীনতার চিত্র তুলে ধরে সবাইকে সতর্ক করেন। তিনি কেন্দ্রের অধিকাংশ নেতাকে ইঙ্গিত করে বলেন, সংগঠনে সময় দিতে হবে। সংগঠনের পরিবর্তে কেন্দ্রের যেসব নেতা ব্যস্ত তাদের দলকে সময় দিতে হবে, নইলে পদ ছাড়তে হবে।

সূত্রমতে, বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনের প্রথম দুই দফায় আওয়ামী লীগের ভরাডুবির বিশ্লেষণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী অনেকটা বিরক্তির ভাষায় কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সাংগঠনিক ব্যর্থতার সমালোচনা করেন।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সাংগঠনিক সম্পাদকরা ঠিকমতো কাজ করলে দল সমর্থিত প্রার্থীদের এভাবে ভরাডুবি হতো না। দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা বিভাগ ও জেলা ওয়ারি উপজেলা প্রার্থীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেননি বলে তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে অবহিত হয়েছেন। প্রথম দুই দফায় অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিষ্ক্রিয় করতে বা দমনে সাংগঠনিক সম্পাদকরা কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ বলেও দলের অভ্যন্তরে আলোচনা রয়েছে। এমনকি এ ক্ষেত্রে সাংগঠনিক সম্পাদকরা দলের সিনিয়র নেতাদেরও কাজে লাগাতে পারেননি বলে মন্তব্য প্রধানমন্ত্রীর। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী মনে করেন প্রথম দুই দফায় কেবল কেন্দ্রের মনিটরিং না থাকা এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের সাংগঠনিক ব্যর্থতায় আওয়ামী লীগ প্রত্যাশিত ফল পায়নি।

সূত্রমতে, প্রথম দুই দফায় ভরাডুবির পর আওয়ামী লীগ অব্যাহত বিপর্যয় এড়াতে উপজেলা নির্বাচন মনিটর করতে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানককে বিশেষ দায়িত্ব দেয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও এই দুই সিনিয়র নেতা দলের বিদ্রোহী প্রার্থী দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখেন। তৃতীয় দফা থেকেই ঘুরে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগ। জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে দলে আলোচিত হন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, দলের সাংগঠনিক স্থবিরতা কাটাতে শেখ হাসিনা কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন।

সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সংগঠনে সক্রিয় হতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সারা দেশে তৃণমূলের সম্মেলনের মাধ্যমে দলীয় নেতৃত্বে নতুন রক্ত সঞ্চালনের কথা ভাবছেন শেখ হাসিনা। বয়সের ভারে অচল ও ব্যর্থ নেতৃত্ব সরিয়ে যোগ্য ও পরিশ্রমী নেতৃত্ব নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সূত্রমতে, দলে নিষ্ক্রিয় প্রেসিডিয়াম সদস্যদেরও ডেকে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। সিনিয়র নেতাদেরও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দল সাজানোর কথা।

যারা সংগঠনে সময় দিতে পারবেন না তাদের কেন্দ্রে প্রয়োজন নেই বলেও নেতাদের ইঙ্গিত দিয়েছেন। সূত্রমতে, দশক, যুগ পেরিয়ে গেলেও যেসব জেলায় সম্মেলন হয়নি তার তালিকা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এসব জেলায় দ্রুত সম্মেলন করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলায় জেলায় সাংগঠনিক সফর কেন হচ্ছে না তারও জবাব চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশে সম্মেলনের খবর নেই প্রায় এক দশক ধরে।

কোনো কোনো জেলায় যুগ পেরিয়ে গেছে। আগামী মাসের মাঝপথে আবার সম্মেলনের তাগিদ কেন্দ্র থেকে। এ বছরই অধিকাংশ জেলার সম্মেলন করতে শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ভাবছেন দলের সিনিয়র ও অভিজ্ঞ নেতাদের দিয়ে এবার কেন্দ্রীয় সফর করাতে। রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে দলকে আরও সংগঠিত করার লক্ষ্যে বেশকিছু সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন।

এ ক্ষেত্রে প্রেসিডিয়াম সদস্য, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে কাজে লাগাতে চান প্রধানমন্ত্রী। উত্তরাঞ্চলে এবার উপজেলা নির্বাচনের ফল বিপর্যয়ে কিছুটা চিন্তিত আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। আগামী জাতীয় নির্বাচনে যাতে একই অবস্থা দেখতে না হয় সে জন্য এখন থেকেই দল সাজাতে চান তিনি। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের দলে সক্রিয় করতেও প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নিতে পারেন বলে সূত্রের আভাস।

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.