আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাংগঠনিক সংকটে বিএনপি

সাংগঠনিক সংকটে দেশের অন্যতম দল বিএনপি। দলের ভেতরে বাইরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও প্রায় তিন বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবই রয়ে গেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর কাউন্সিল করার কথা থাকলেও প্রায় এক বছর ধরে বিএনপির নির্বাহী কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র ঢাকা মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি আড়াই বছরেও। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দলসহ বেশ কয়েকটি অঙ্গ সংগঠনও মেয়াদোত্তীর্ণ।

তা ছাড়া ঢাকার বাইরে অধিকাংশ অঙ্গ সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। নিষ্ক্রিয় ছাত্রদলের কমিটি পুনর্গঠন করার কথা থাকলেও কবে নাগাদ তা হবে তা এখনো অনিশ্চিত। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আন্দোলনে সক্রিয় থাকলেও হামলা-মামলাসহ সাংগঠনিক দুর্বলতায় তারা এখন অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। এ অবস্থায় দলকে সম্পূর্ণরূপে গতিশীল না করে আগামী দিনে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অবশ্য সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, দল গুছিয়েই আন্দোলনে যাবেন তিনি।

উপজেলা নির্বাচনের পর পরই দল ও অঙ্গ সংগঠনগুলো পুনর্গঠনের ইঙ্গিত দেন। জানা গেছে, সর্বশেষ দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপির কাউন্সিল করার বিষয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন বেগম জিয়া। এদিকে লন্ডনে থেকেও দলের সার্বিক বিষয় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের দুর্বল অবস্থা কাটিয়ে ওঠাতে সংশ্লিষ্টদের নানাভাবে পরামর্শও দিচ্ছেন তিনি।

দলের সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা এখন অনেক শক্তিশালী।

নইলে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে হামলা-মামলাসহ নানা প্রতিবন্ধতার পরও উপজেলা নির্বাচনে এভাবে জয়লাভ করা সম্ভব হতো না। উপজেলা নির্বাচনের পর পরই আমরা দলের কাউন্সিল করার কথা ভাবছি। মহানগর বিএনপি, অঙ্গ সংগঠনগুলোও পুনর্গঠন করা হবে। সংগঠন গুছিয়েই আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলব। বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর।

সে অনুযায়ী জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল ২০১২ সালের ৮ ডিসেম্বর। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে প্রতি তিন বছর পর রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় কাউন্সিল করার কথা। জানা গেছে, সারা দেশে বিএনপির সাংগঠনিক জেলা ৭৫টি। তৃণমূল সংগঠনের চালচিত্র দেখভালের ঘোষণা দিয়েও উপজেলা নির্বাচনের অজুহাত দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত সাংগঠনিক সফর স্থগিত করে বিএনপি। কবে নাগাদ সেই সাংগঠনিক সফর হবে তাও অনিশ্চিত।

৫ জানুয়ারি সরকারের একতরফা নির্বাচনের পর দলের ভেঙে পড়া সাংগঠনিক কাঠামো পুনরুদ্ধারে সাংগঠনিক সফর করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি। দলের সিনিয়র নেতাদের নেতৃত্বে কমিটিও গঠন করা হয়। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে কমিটিগুলোর সাংগঠনিক সফর শুরুর কথা ছিল। ভেঙে পড়া সাংগঠনিক কাঠামো পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রাম জোরদার ছিল মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে তা পরে বাতিল করা হয়।

তবে বিএনপির সংশ্লিষ্টরা জানান, কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই তৃণমূলে গেলে নানাভাবে নাজেহাল হতে পারেন। কারণ, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে তৃণমূলের নেতা-কর্র্মীরা মাঠে থাকলেও অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতাই ছিলেন আত্দগোপনে।

কত দিন ভারপ্রাপ্ত থাকবেন মির্জা ফখরুল? : মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মারা যাওয়ার পর ২০১১ সালের ২০ মার্চ মির্জা ফখরুলকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেন বেগম জিয়া। এর পর থেকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতে শক্ত হাতে হাল ধরেন বিএনপির ক্লিন ইমেজের এই নেতা। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও দলের মূলধারা ও সংস্কারপন্থিদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

দলের ভেতরে বাইরে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। চার দল থেকে ১৯-দলীয় জোট সম্প্রসারণেও তার অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। নানা লোভ দেখিয়ে জোট নেতাদের নির্বাচনকালীন সরকারে না নেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেন তিনি। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গেও তার সুসম্পর্ক রয়েছে। বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে মির্জা ফখরুলকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করা হবে।

অচল ঢাকা মহানগর সচল হবে কবে? : দীর্ঘ দিন ধরে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে মহানগর বিএনপি অচল। বিশেষ করে ২৯ ডিসেম্বরের 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি' কর্মসূচিতে ঢাকার নেতারা আত্দগোপনে চলে যান। অবশ্য মহানগর বিএনপির পাশাপাশি ঢাকার অন্য সব অঙ্গ সহযোগী সংগঠনও ব্যর্থ বলে মনে করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব, থানা ও ওয়ার্ডে কমিটি না থাকায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয় ঢাকা মহানগর বিএনপি। অবশ্য এর পুরো দায়ভার এসে পড়ে সংগঠনের ওপর।

এদিকে নিজেদের ব্যর্থতাসহ নানা যুক্তি তুলে ধরে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা মহানগরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিও চেয়েছেন। তবে এভাবে সংবাদ সম্মেলন করে তার অব্যাহতি চাওয়া নিয়েও দলের মধ্যে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপিতে সাংগঠনিক ব্যর্থতার এটা আরেক দৈন্যদশা বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ জানান, আন্দোলন সংগ্রামে ব্যর্থ হলেও সাদেক হোসেন খোকা বিএনপির কর্মকাণ্ডে ব্যাপক আর্থিক সহায়তা করেন। দায়িত্বে না থাকলেও ভবিষ্যতে যারা মহানগরের নেতৃত্বে থাকবেন তাদেরও নানাভাবে সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছেন তিনি।

২০১১ সালের ১৪ মে বিএনপি চেয়ারপারসন সাদেক হোসেন খোকার নেতৃত্বে ঢাকা মহানগরে ২১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করেন। এ সময় বেগম জিয়া নির্দেশনায় বলেন, এ আহ্বায়ক কমিটি আগামী ছয় মাসের মধ্যে সর্বস্তরের কাউন্সিল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি নির্বাচন করবে। কিন্তু আড়াই বছরেও বেগম জিয়ার এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়নি। অবশ্য খুব শীঘ্রই ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহর নেতৃত্বে এ কমিটির সংখ্যা হতে পারে ২১ সদস্যবিশিষ্ট।

তাদের মেয়াদ হবে এক মাস। এর মধ্যেই দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ওয়ার্ড, থানা ও মহানগরে কাউন্সিল করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন বলে সূত্র জানায়।

রাজপথে নেই বিএনপির অঙ্গ সংগঠনগুলোও : সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঢাকা মহানগর বিএনপির পাশাপাশি পুরো নিষ্ক্রিয় ছিল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। বিশেষ করে বিএনপির প্রাণ বলে খ্যাত ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। এ নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা চরম হতাশ।

অবশ্য যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, ওলামা দলসহ প্রায় সব সংগঠনই মেয়াদোত্তীর্ণ। ছাত্রদলের মেয়াদ শেষ না হলেও সংগঠনটির নেই চেইন অব কমান্ড। শীর্ষ নেতৃত্বে এখনো রয়েছে কোন্দল। দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক জেলে থাকলেও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে মানতে নারাজ সংগঠনের বড় একটি অংশ। সর্বশেষ এক জরুরি সভায় প্রকাশ্যে নেতাদের বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে।

শ্রমিক দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল, জাসাসেরও আন্দোলন সংগ্রামে তেমন কোনো ভূমিকা নেই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বড় দলে নানা ধরনের প্রতিযোগিতা হয়। এটাকে কোন্দল বা বড় কোনো সমস্যা বলা ঠিক হবে না। আমরা আন্দোলনের পাশাপাশি দলকে শক্তিশালী করছি। শীঘ্রই সংগঠনকে শক্তিশালী করে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.