আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়

নিঃসন্দেহে বলা যায় বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশ একটি 'মর্ডারেট মুসলিম কান্ট্রি' হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বিষয়টি ভাবতে যেমনি ভালো লাগে তেমনি একটা আত্দতৃপ্তিবোধও কাজ করে আমাদের মধ্যে। গর্বিত হই এই ভেবে, পাকিস্তানের মতো সাম্প্রদায়িক বা জঙ্গিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব নেই এখানে। কষ্টার্জিত সোনার বাংলাকে নিয়ে আমাদের অহংকারের কমতি নেই। কমতি নেই মমতারও। এখানকার উর্বরা মাটি, জলবায়ু ভোগের অধিকার রয়েছে দেশের প্রতিটি নাগরিক তথা প্রতিটি ধর্মাবলম্বীদের। তাদের এ ন্যায্য অধিকারকে কেউ যদি করুণার দৃষ্টিতে দেখেন তাহলে সেটি হবে নির্বোধের প্রমাণ। কারণ এ দেশটাকে রক্তচোষা পিশাচের কবল থেকে মুক্ত করতে প্রাণপণে লড়াই করেছেন দেশের প্রতিটি ধর্মাবলম্বী মানুষ। যে যেভাবে পেরেছেন শামিল হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। কাজেই কারও অবদানকে খাটো করে দেখার কোনো ফুরসত নেই। বরং ধর্মের দোহাই দিয়ে মুসলাম সম্প্রদায়ের কিছু উগ্রপন্থি বিপথগামী হয়ে রাজাকারের ভূমিকায় নিজেদের ঠেলে দিলেও অমুসলিম কাউকে খলের ভূমিকায় দেখা যায়নি তখন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঘেঁটেও সেই রকম নজির পাওয়া যায়নি অদ্যাবধি। আমরা লক্ষ্য করেছি, তথাকথিত সমাজপতি বা রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে নির্বাচন ঘনিয়ে এলে সংখ্যালঘুপ্রীতি উথলে ওঠে। তার প্রধান কারণ বা সহজ-সরল সমীকরণটি কারও অজানা নয়। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংখ্যা প্রায় দুই কোটিরও উপরে। তারা ইচ্ছা করলে মেয়াদান্তে সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখেন। এর আগে আমরা সে রকম নজির দেখেছিও। যার ফলে রাজনৈতিক নেতারা পাঁচ বছর পর পর তাদের ক'দিনের জন্য কাঁধে নিয়ে নাচানাচি করতে ইতস্ততবোধ করেন না। আবার নির্বাচন ফুরিয়ে গেলে ধপাস করে মাটিতে ফেলে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। দীর্ঘদিন এ ধরনের প্রতারণা দেশে চলছে, যা অবশ্যই ক্ষমার অযোগ্য। বিষয়টি মাথায় এনে দলীয় প্রধানরা মাঠপর্যায়ের নেতাদের সতর্ক করে দিলে হয়তো এ অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঠেকানো যেতে পারে। এতে দলের ইমেজ বাড়ার পাশাপাশি নেতাদের প্রতি আস্থা বেড়ে যাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।

অবধারিত সত্য কথাটি হচ্ছে, এ দেশে সংখ্যালঘুদের ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। হজম করতে হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপশক্তির অশোভন আচরণকে। এ ধরনের আলামত আমরা সব সরকারের আমলেই লক্ষ্য করছি। আমরা লক্ষ্য করছি ২০০১ সালে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র। যে চিত্র অবলোকন করে দেশবাসী যেমন অাঁতকে ওঠে তেমনি বিশ্ববাসীও অসন্তোষ জানিয়েছেন তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের ওপর। অতীতের সেই ভয়াবহ রেকর্ডকে হার মানিয়েছে ২০১৪ সাল। সেই তারাই আবার মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে।

পাকিস্তান আমলে এপার বাংলা থেকে অনেক হিন্দু দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন আইয়ুব খানের অপশাসনের কারণে। পাকিস্তানের অবসান হলে সে ধারাবাহিকতায় কিছুটা ভাটা পড়েছে। হিন্দুরা উজ্জীবিত হয়েছেন খানিকটা। নিজ দেশের ভিটেমাটি ফেলে ওপার বাংলায় বসত গড়ার চিন্তারোধ করে ফেলেছেন পর্যন্ত। কিন্তু সেটি আবার মাথায় ঢুকে ২০০১ সালে। বর্তমান সরকার দ্বিতীয়বার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কিছুটা স্বস্তি পেলেও রামুর ঘটনায় তারা হতচকিত হয়ে পড়েন। সেই ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই দেশে তখন ঘটেছিল সংখ্যালঘু নির্যাতনের হিড়িক। নির্বিচারে জ্বালাও-পোড়াওসহ হত্যাযজ্ঞের মতো ঘটনা ঘটেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ের ফলে। জানা গেছে, ১৯টি জেলার ৪২টি স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তাতে তখন প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় পাঁচজন। ধর্মীয় উপাসনালয় ভাঙা হয়েছে অর্ধশতাধিক। অপরদিকে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন শেষ হলে দেশবাসী দেখেছেন এক হৃদয়বিদারক কাণ্ড। যশোরের অভয়নগরের চাপাতলির মালোপাড়ায় অসংখ্য বাড়িঘর ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে ছারখার করে দেওয়া হয়েছে। যশোরের মণিরামপুরে ঘটেছে আরেক নারকীয় তাণ্ডব। ধর্ষণের মতো ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে সেখানে। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার পাশাপাশি মন্দিরে আগুন দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। যা কোনোমতেই কাম্য নয়। এ ধরনের পৈশাচিক তাণ্ডবের ফলে প্রচুর সম্পদহানিও ঘটেছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের। ফলে তারা আতঙ্কিত হয়ে আবারও দেশ ত্যাগের কথা ভাবছেন। উল্লেখ্য, কোনো সভ্য দেশ থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিতাড়িত হতে পারেন না। আর সংখ্যালঘুরা কতটুকু ভালো আছেন তার ওপর নির্ভর করে একটা দেশের ভাবমূর্তি। এ বিষয়টি আমাদের অনেকেরই অজানা রয়ে গেছে অদ্যাবধি। এটি জেনে রাখা উচিত দেশের প্রতিটি নাগরিকেরই। তাহলে অন্তত আর এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানোর সাহস পাবে না দুষ্কৃতকারীরা। হালে এসব ঘটেছে শুধু দুটি কারণেই। আর তা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় ও রায় কার্যকরের ফলে এবং গত ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে। যে ঘটনার ফলে অনেকটাই একাত্তরের চিত্র অবলোকন করেছেন দেশবাসী। একাত্তর আর তের-চৌদ্দের মধ্যে পার্থক্য শুধু একটিই। তখন আমরা পরাধীন ছিলাম আর এখন আমরা স্বাধীন! আরেকটু সামান্য পার্থক্য লক্ষ্যণীয়, সেটি হচ্ছে ২০০১ সালে যে সরকার ক্ষমতায় ছিল ঠিক সম্পূর্ণ বিপরীত ধারার সরকার ক্ষমতায় রয়েছেন ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত। অথচ এই নিরাপদ সময়ই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা নির্যাতিত হচ্ছেন আগের চেয়ে বেশি। এটি কোনো মতেই কাম্য নয় দেশবাসীর কাছে। আমরা তাই এর প্রতিকার কামনা করছি সরকারের কাছে। পাশাপাশি কামনা করছি দুষ্কৃতকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের পৈশাচিক কাণ্ড ঘটাতে সাহস না পায়।

লেখক : প্রবন্ধকার।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.