সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার প্রতাপপুর এলাকায় রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে যাত্রীবাহী ইঞ্জিন নৌকায় আগুন লাগার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে রুপিয়া বেগম (৩০) নামের এক নারীর পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। তার বাড়ি নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি উপজেলার পাঁচহাট বড়হাটি গ্রামে। বাকিদের পুড়ে যাওয়া দেহাবশেষ উদ্ধার করেছে দমকল বিভাগের কর্মীরা।
উদ্ধার হওয়া যাত্রীরা জানান, নৌকাটিতে অন্তত ১৫০ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের সবার বাড়ি কিশোরগঞ্জের নিকলী ও মিঠামইন এবং নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারিতে শ্রমিকের কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন।
অগি্নকাণ্ডের ঘটনায় নৌকায় থাকা অন্তত ৩০ যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। প্রশাসন বলেছে, উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে।
এই ঘটনায় অন্তত গুরুতর অগি্নদগ্ধ অন্তত ১৮ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া যাত্রীরা জানান, রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রান্নার চুলা থেকে যাত্রীবাহী নৌকাটিতে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এ সময় অধিকাংশ যাত্রী ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। প্রতাপপুর এলাকায় আসার পর মুহূর্তেই আগুন পুরো নৌকায় ছড়িয়ে পড়লে হুড়োহুড়িতে নৌকাটি ডুবে যায়। তাদের মধ্যে অন্তত ৬০ জন সাঁতরে তীরে ওঠতে সক্ষম হন। প্রাথমিক উদ্ধার কাজে নিয়োজিত দোহালিয়া ইউপি সদস্য নানু মিয়া জানান, সুরমা নদীতে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় আগুন জ্বলতে দেখে এলাকাবাসীকে নিয়ে ডুবে যাওয়া নৌকা থেকে এক নারীর মৃতদেহ ও অগি্নদগ্ধ ১৮ জন উদ্ধার করে হাসপাতলে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। ওইদিন রাত ১২টা থেকে দমকল বিভাগের কর্মীরা উদ্ধার অভিযান শুরুর পর নৌকা থেকে দশজনের পুড়ে যাওয়া দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দেবজিৎ সিংহ জানান, তাদের শনাক্ত করতে ডিএনএ টেস্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, নিহতদের মধ্যে অন্তত দুটি শিশু রয়েছে।
এদিকে, দুর্ঘটনার পর থেকে স্বজন হারাদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠেছে সুরমাপাড়ের প্রতাপপুর গ্রামের আকাশ-বাতাস। আহত ও উদ্ধার হওয়া যাত্রী ও তাদের স্বজনদের গগনবিদারী কান্নায় চারপাশ বিরাজ করছে শোকবিহ্বল পরিবেশ। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা ছিল না কারোরই। আহত ও উদ্ধার হওয়াদের সার্বিক দেখভালে তাৎক্ষণিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন প্রতাপপুর, গোয়ারাই, চৌমুনা, গোরেশপুরসহ আশপাশের গ্রামের লোকজন। এদিকে গতকাল সকাল থেকে কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা থেকে আহত, নিহত ও নিখোঁজ যাত্রীদের স্বজনরা ভিড় জমান সুরমা তীরে। তাদের কান্নাভেজা চোখ সুরমা নীল জলে বার বার খুঁজে ফিরছিল স্বজনের মুখ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।