দেশের আলু চাষিরা এখন বিপাকে। এ বছর আলুর ফলন হয়েছে গত কয়েক বছরের চেয়ে বেশি। বাড়তি ফলন আলু চাষিদের জন্য সৌভাগ্যের বদলে দুর্ভাগ্য বয়ে এনেছে। আলুর দাম এতই কম যে, তা বিক্রি করে উৎপাদন খরচের অর্ধেক পাওয়াও দুষ্কর হয়ে উঠছে। প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ছয় থেকে সাত টাকা। অথচ সে আলু এখন কৃষক পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে চার টাকা। আলু সারা দুনিয়ায় অন্যতম প্রধান সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কোনো কোনো দেশে তা প্রধান খাদ্য হিসেবেও বিবেচিত। দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণে আলু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও আলু চাষিদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন নেই। হরতাল-অবরোধের রাজনীতি তাদের জন্য সমূহ সর্বনাশ বয়ে এনেছে। গত বছরের বেশি সময়জুড়ে এই গণবিরোধী রাজনীতি সারা দেশের মানুষের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছে। ফলে দেশের হিমাগারগুলোতে যে আলু ছিল তা ঠিকমতো বাজারজাত করা যায়নি। দেশের বিভিন্ন হিমাগারে এখনো ১০ থেকে ১৫ লাখ টন আলু রয়ে গেছে। এর সঙ্গে নতুন মৌসুমের ফসল যোগ হওয়ায় দেখা দিয়েছে সমূহ সংকট। দেশে আলু সংরক্ষণের হিমাগারের সংখ্যা এমনিতেই কম। আগের বছরের বিপুল পরিমাণ আলু বাজারজাত না হওয়ায় নতুন আলু উৎপাদন করে চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। সারা দুনিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে আলুর দাম সবচেয়ে কম। এ বছরের শুরুতে তার দাম উৎপাদন খরচের অর্ধেকে নেমে আসায় কৃষকরা চোখে শর্ষে ফুল দেখছে। ত্রুটিপূর্ণ বিপণন ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগার না থাকা এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের অভাবে দেশের আলু চাষিরা বাম্পার ফলনেও বার বার মার খাচ্ছে। উল্লেখ্য, চলতি বছর চার লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বাস্তবে ৯০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে আলু চাষ হয়। আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৮৬ লাখ ৫০ হাজার টন নির্ধারণ করা হলেও প্রকৃত উৎপাদন ছিল আরও সাড়ে তিন লাখ টন কিংবা তার চেয়েও বেশি। স্মর্তব্য, দেশে মোট ৩৭০টি হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারে ৪৫ থেকে ৪৬ লাখ টন আলু সংরক্ষণ করা যায়। গত বছর সংরক্ষিত আলুর এক-চতুর্থাংশ বাজারজাত করা সম্ভব হয়নি হরতাল-অবরোধের কারণে। আমাদের মতে, আলু চাষিদের স্বার্থে দেশে আরও বেশি হিমাগার নির্মাণের পাশাপাশি আলু রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া দরকার। রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে আলু রপ্তানির যে সুযোগ রয়েছে তা দ্রুত কাজে লাগিয়ে আলু চাষিদের বিপর্যয় রোধ করতে হবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।