আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পেশাগত মর্যাদার প্রশ্নে আপোষ নয়

সুজায়েত শামীম
পেশাগত দিক বিবেচনায় সম্ভাবত ব্যাংকাররা সবচেয়ে নিরীহ পেশাজীবী। অধিকাংশজনই সচারচার কোন কিছুর সাথে পাছে থাকেন না । এড়িয়ে চলেন ঝামেলা ঝঞ্জাট। ভয় পায় মানুষের জটলায়।

ব্যাংকারদের কাজের ক্ষেত্রেও নেই কোন বৈচিত্র ।

বরং করতে হয় গদবাধা একই ধরণের কাজ। এতে করে একঘেয়েমিতাই ভোগেন কম বেশী সকলে।
আসলে আর্থিক বলয়ের মধ্যে রুটিন মাফিক জীবন কাটাতে গিয়ে কিছুটা আত্নকেন্দ্রিক, হিসাবি ও সঞ্চয়ী মানসিকতার হয়ে যেতে বাধ্য হন অনেকেই।

আজকের এই লেখাটি অবশ্য ব্যাংকারদের স্বভাব-বৈশিষ্ট্যর বিশ্লেষণ করা নয়। বরং এ্ই পেশাজীবীর একজন মানুষের প্রতি সহমর্মিতা এবং এক সরকারি কর্মকর্তার আচরণের ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ।



আজ একটি অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে "ফেনীতে ব্যাংক কর্মকর্তাকে থাপ্পড় দিলেন ইউএনও। "

সংবাদের তথ্য মতে, ডাচ বাংলা ব্যাংকের ফেনী ব্রাঞ্চের এক কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে থাপ্পড় মেরেছেন ফেনী সদর উপজেলার নির্বাহি কর্মকর্তা এনামুল করিম। ঘটনার বিবরণ মতে ভ্রাম্যমান আদালতের কাজ পরিচালনাকালে ইউএনও আজিজ শপিং সেন্টারের সামনের সড়কে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল অবৈধভাবে পার্কিং করা অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় তিনি মোটরসাইকেলগুলোর মালিকদের কাছে পার্কিংয়ের কারণ জানতে চান। ইউএনও'র প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে লেনদেন করতে এসেছেন বলে এখানে মটরসাইকেল রেখেছেন।

এ কথা জানার পর ইউএনও ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে তলব করেন । ঘটনাস্থলে ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজার সৈয়দ আবদুল মান্নান উপস্থিত হন। উল্লিখিত স্থানে ‘পার্কিং নিষিদ্ধ’ সাইনবোর্ড কেন লাগানো হয়নি তা জানতে চান ইউএনও পিকেএম এনামুল করিম। এ সময় কথাকাটির একপর্যায়ে তিনি শার্টের কলার চেপে ধরে জনসম্মুখে ওই কর্মকর্তাকে থাপ্পড় দেন। তখন ওই কর্মকর্তাসহ উপস্থিত লোকজন হতবিহ্বল হয়ে পড়েন।


আদালত চলাকালে একজন বিচারকের এমন কাণ্ডের খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে পুরো শহরে ।

ঘটনাটি অত্যন্ত দু:খজনক এবং নিন্দনীয়। ডাচ বাংলা ব্যাংক (ডিবিবিএল) ওই সিনিয়র কর্মকর্তা সৈয়দ আব্দুল মান্নান, যিনি ফেনী ব্রাঞ্চের সেকেন্ডম্যান, তাকেই তাঁর অফিস কার্যালয়ের নিচে শতশত মানুষের সামনে থাপ্পড় খেতে হলো। তাঁর অপরাধ, কেনো ডাচ বাংলা ব্যাংকের কাস্টমাররা সড়কের পাশে মটরসাইকেল পাকিং করে রেখেছে (?)

এ অপরাধে কাউকে কি থাপ্পড় মারা যায়?

জানিনা প্রথমশ্রেণীর একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসাবে এনামুল সাহেব এধরণের আচরণ কিভাবে করলেন। তাছাড়া ওই সময় তিনি ভ্রাম্যমান আদালতের একজন বিচারক।

আদালতের কাজ নিশ্চয় কাউকে চড়-থাপ্পড় মেরে শাস্তি দেয়া নয়। তাছাড়া রাস্তার ধারে বা ব্যাংকের নিচে কাস্টমাররা যদি মটরসাইকেল রেখে ব্যাংকে যান, তো সে দোষ কি ব্যাংকারের?

আমাদের বোঝা উচিৎ প্রতিটি মানুষের সম্মানবোধ আছে। প্রতিটি পেশাজীবী মানুষেরই স্ব স্ব গন্ডিতে রয়েছে আত্ন মর্যাদা। আমরা কি কারোর আত্ন মর্যাদায় আঘাত দিতে পারি?

ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এই অশোভন আচরণ এবং ধৃষ্টতার বিরুদ্ধে দেশের সকল ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সোচ্চার হওয়া উচিৎ। আজ যদি এটির সম্মানজনক কোন ফয়সালা না হয়, তাহলে আগামীতে সরকারি কর্মকর্তাদের ড্রাইভার-পিয়নরাও একই আচরণ করতে কুন্ঠাবোধ করবে না।



যদি সম্মানজনক সুরাহ না হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের উচিৎ হবে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থমন্ত্রণালয় ও সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দেয়া। প্রয়োজনে অভিযুক্ত নির্বাহি কর্মকতার বদলিসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি তুলতে হবে ।

বাস্তবতা হলো দেশের বেসরকারি ব্যাংকারদের সক্রিয় কোন সংগঠন নেইে। বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নিয়ে Bangladesh Association of Banks নামে একটি সংগঠন থাকলেও এরা মূলত ব্যাংকিং ক্যারিয়ার ডেভলপ, ব্যবসা প্রসারসহ ব্যাংকের লাভ ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে। কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা অভাব অভিযোগ, বেতন কাঠামোসহ প্রাইভেট ব্যাংকারদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা বলার মত কোন সংগঠন গড়ে ওঠেনি বা উঠতে দেয়া হয়নি।

নিজ নিজ ব্যাংকে কর্মচারি ইউনিয়ন করার সুযোগ রাখা হয়নি। পক্ষান্তরে সরকারি ব্যাংকের কর্মচারীদের রয়েছে শক্তিশালী সংগঠন। তাদের দাবিদাওয়া বা অভিযোগ নিয়ে বার্গেনীং করে সিবিএ'র নেতারা। তাদের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী এভাবে ইউএনও'র হাতে মার খেলে অবশ্যই তিব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়তেন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

ব্যাংকিং পেশায় থাকা মানুষদের ঠাট্টার ছলে বা অবজ্ঞা করে যতই বলিনা কেনো "সুদখোরের কেরানী," তবুও তাদের ভূমিকা বা পেশাগত মর্যাদাকে খাটো করতে পারিনা।

বাস্তবতা হলো একজন শিক্ষকের চেয়েও নিরীহ হলেন ব্যাংকার। কেননা একজন শিক্ষক লাঞ্ছিত বা অপমানিত হলে সোচ্চার হয়ে ওঠে গোটা শিক্ষক সমাজসহ শিক্ষাঙ্গন। সর্বত্র ওঠে সমালোচনার ঝড়। কিন্তু একজন ব্যাংকাররের ক্ষেত্রে?

মানুষের পেশাগত মর্যাদার প্রশ্নে আপোষ নয়।

 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.