আবারও সাফল্য দেখাল মৌলিক ধারার চলচ্চিত্র। এবার কামার আহমাদ সাইমন ও সারা আফরিন নির্মিত 'শুনতে কি পাও' চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একাধিক পুরস্কার জিতে নিয়েছে। তাছাড়া ২১টিরও বেশি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রণ পেয়েছে এটি। ২০০৯ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বয়ে যাওয়া প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলা বিধ্বস্ত একটি গ্রাম ও সেই গ্রামের বাসিন্দাদের দুঃখগাথা জীবনচিত্র মর্মস্পর্শীরূপে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্রটি এ পর্যন্ত সাফল্যের ঝুড়িতে পুরেছে গ্রাঁ পি ও ফিল্ম সাউথ এশিয়া জুরি পুরস্কার এবং মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের 'স্বর্ণশঙ্খ' সম্মান।
ঢালিউডের যাত্রালগ্ন থেকে বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্র ও চলচ্চিত্রকাররা সাফল্যের সঙ্গে এগিয়েছেন। কিন্তু নব্বই দশকের মধ্যভাগে এসে এ দৃশ্য পাল্টাতে থাকে। দর্শক গ্রহণযোগ্যতা, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসা কুড়াতে থাকে মৌলিক ধারার চলচ্চিত্র।
১৯৯৫ সালে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জাতীয় পুরস্কার লাভ করে শেখ নেয়ামত আলীর 'অন্যজীবন'। এটি ১১টি শাখায় এ পুরস্কার পায়। মৌলিক ধারার সাফল্যের এই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে আখতারুজ্জামানের 'পোকা মাকড়ের ঘর বসতি', ১৯৯৭ সালে মোরশেদুল ইসলামের 'দুখাই', ১৯৯৯ সালে তানভীর মোকাম্মেলের 'চিত্রা নদীর পাড়ে', ২০০০ সালে আবু সাইয়িদের 'কীর্ত্তনখোলা', ২০০১ সালে তানভীর মোকাম্মেলের 'লাল সালু', ২০০২ সালে চাষী নজরুল ইসলামের 'হাছন রাজা', ২০০৪ সালে তৌকীর আহমেদের 'জয়যাত্রা', ২০০৫ সালে সুচন্দার 'হাজার বছর ধরে', ২০০৬ সালে কাজী মোরশেদের 'ঘানি', ২০০৭ সালে তৌকীর আহমেদের 'দারুচিনি দ্বীপ', ২০০৮ সালে মুরাদ পারভেজের 'চন্দ্রগ্রহণ', ২০০৯ সালে সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ডের 'গঙ্গাযাত্রা', ২০১০ সালে খালেদ মাহমুদ মিঠুর 'গহীনে শব্দ', ২০১১ সালে নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুর 'গেরিলা' ২০১২ সালে শাহনেওয়াজ কাকলীর 'উত্তরের সুর' চলচ্চিত্রগুলো শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে।
এ চলচ্চিত্রগুলো শুধু রাষ্ট্রীয় সম্মানই অর্জন করেনি, দর্শক গ্রহণযোগ্যতাসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পুরস্কৃত ও প্রশংসিত হয়েছে। এসব চলচ্চিত্র ছাড়াও এ সময়ে মৌলিক ধারার অন্য যে চলচ্চিত্র দর্শক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে সেগুলো হচ্ছে_ মুক্তির গান, হাঙ্গর নদী গ্রেনেড, হঠাৎ বৃষ্টি, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, মেঘলা আকাশ, মাটির ময়না, আধিয়ার, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি, ব্যাচেলর, শঙ্খনদ, একখণ্ড জমি, রানী কুঠির বাকি ইতিহাস, আহা, মেঘের কোলে রোদ, আমার আছে জল, মনপুরা, লালটিপ, টেলিভিশন, ঘেঁটুপুত্র কমলা, অন্তর্ধান, নীল অাঁচল ইত্যাদি। চলচ্চিত্র গবেষকদের মতে, মূলত নব্বই দশকের শেষ দিক থেকেই বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রগুলো নানা কারণে সর্বজনীনতা হারায়। অথচ ১৯৭৫ সালে জাতীয় পুরস্কার প্রবর্তন থেকে নব্বই দশকের মধ্যভাগ পর্যন্ত বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্ররই ছিল জয়জয়কার। ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পায় নারায়ণ ঘোষ মিতার 'লাঠিয়াল'। এরপর একে একে 'মেঘের অনেক রং', বসুন্ধরা, গোলাপী এখন ট্রেনে, সূর্য দীঘল বাড়ী, এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী, বড় ভালো লোক ছিল, পুরস্কার, ভাত দে, শুভদা, দায়ী কে, দুই জীবন, গরীবের বউ, পদ্মা মেঘনা যমুনা, পদ্মা নদীর মাঝি, দেশপ্রেমিক ইত্যাদি বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রগুলো জাতীয় পুরস্কার এবং সব শ্রেণীর দর্শক আনুকূল্য পায়।
গবেষকদের মতে, নকল, অশ্লীলতা, পাইরেসি, শিক্ষিত নির্মাতার অভাব ইত্যাদি কারণে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে একসময় ধস নামে। ফলে এ সময়ে সুনির্মাণের কারণে সব শ্রেণীর দর্শক হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে মৌলিক ধারার চলচ্চিত্র। বেশকিছু শিক্ষিত তরুণ এগিয়ে এসেছে এ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণে এবং তারা সফল হচ্ছে। দেশ-বিদেশে আকাশছোঁয়া সাফল্য পাচ্ছে তাদের নির্মিত চলচ্চিত্র। এ জয়যাত্রা এখনো অব্যাহত রয়েছে। চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের মতে, এটি শুভ লক্ষণ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।