ব্যাংক ঋণ নিয়ে চলছে নজিরবিহীন জালিয়াতি। হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র। কিছু ব্যাংক কর্মকর্তা ও প্রতারক চক্র ভুয়া কাগজপত্র, ডকুমেন্ট, ভুয়া জমির দলিল দিয়ে ঋণ নিয়ে ব্যাংকের অর্থ আত্দসাৎ করছে। বর্তমানে গ্রুপ অব কোম্পানি বা নানা ধরনের প্রকল্প বানিয়েও ঋণ নিচ্ছে। সম্প্রতি পরিবেশবান্ধব প্রকল্প দেখিয়ে শত শত কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা বাড়ছে। জালিয়াতির মাধ্যমে এসব কোম্পানি বা প্রকল্পের কাগজপত্র তৈরি করে ব্যাংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যেসব কাগজপত্র বা দলিল দেওয়া হয় এর সব কিছুই ভুয়া। ওইসব দলিলের জমি কিংবা ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর অফিস খুঁজে পাওয়া যায় না। এমন ঘটনায় ব্যাংক খাতে চরম অস্থিরতার সৃষ্টি করছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে এ ধরনের জালিয়াতির ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ব্যাংকিং খাতে ভুয়া ঋণের ঝুঁকি বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নানা সময়ে পরিদর্শনে গিয়ে অভিযোগ পেলেও কোনো পদক্ষেপ নেয় না।
সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের ব্যাংকে অনিয়মের প্রবণতা বাড়ছে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে একাধিক ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদানের অভিযোগও রয়েছে অনেক ব্যাংকের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে নানা অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে এলেও ব্যাংকগুলো কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গুরুতর অনিয়ম উদ্ঘাটিত হলেও অদৃশ্য কারণে কারও বিরুদ্ধে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি একাধিক অনুসন্ধান চালিয়ে ডজনখানেকেরও বেশি ব্যাংকের বিনিয়োগে জালিয়াতি ও অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংককে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা আমলেই নিচ্ছে না ব্যাংকগুলো। এমনকি অনিয়ম নিয়মিতকরণের লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর নেওয়া পদক্ষেপও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানোর প্রয়োজন মনে করছে না। এসব অনিয়ম বেশি চলছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে। ভুয়া ঋণ ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি তিন মাসের ঋণের তথ্য দিতে বললেও অনেক ব্যাংক এ নির্দেশনা মানে না।
সম্প্রতি অগ্রণী ব্যাংকের সিরাজগঞ্জ শাখা থেকে ব্র্যান্ড অটোমেটিক ব্রিক ফিল্ডস নামের ভুয়া এক কোম্পানিকে ২৪ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন দেয়। পরে বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরে আসায় ঋণের অর্থ ছাড় না করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটির মালিক অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের আত্দীয় হওয়ায় কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ মঞ্জুরি দেওয়া হয়েছে। একই প্রতিষ্ঠান পরবর্তীতে পরিবেশবান্ধব প্রকল্প দেখিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এই ঋণের বিপরীতে ১১ কোটি ৯ লাখ টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল চাওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক একাধিক ব্যাংকের শাখায় এ ধরনের অভিযোগে তদন্ত করেছে। পরিদর্শন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরে সারা দেশে বিতরণকৃত প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে জমা দেওয়া জমির কাগজপত্র ছিল পুরোপুরি ভুয়া। ফলে এসব টাকা আর আদায় হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। একইভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংক থেকে গত বছর শিল্প ঋণ নিয়েছে বেশ কয়েকটি ভুয়া গ্রুপ অব কোম্পানি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব কোম্পানির আদৌ কোনো অস্তিত্ব নেই। নানা সময়ে ভুয়া ঋণের কারণে গত বছরে মূলধন ঘাটতিতে চরম সংকটের মুখে পড়ে সোনালী ব্যাংক। অন্য ব্যাংকগুলোও মূলধন ঘাটতি এখনো মেটাতে পারেনি। মূলধন ঘাটতি মেটাতে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা সরবরাহ করে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিভিন্ন সংকটের কারণে অর্থনীতিও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বর্তমান সংকট কাটাতে ব্যাংকিং খাতে জোরালো চাপ পড়বে। সেক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে আরও সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। জালিয়াতির ঘটনা অতীতেও ছিল। তবে এ ঘটনা ক্রমান্বয় বাড়ছে, যা আমাদের জন্য খুবই হুমকি। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, বিশাল ব্যাংকিং খাতের পরিদর্শন করা বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারা সম্ভব নয়। এ জন্য আলাদাভাবে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে সুশাসন থাকতে হবে। কিন্তু ব্যাংকিং খাতে বড় দুর্বলতা সুশাসনের অভাব। পরিচালনা বোর্ডে রাজনৈতিক বিবেচনায় যারা আসেন তাদের অধিকাংশ সম্পর্কে নানা ধরনের অভিযোগ আছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।