বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আবারও পুঁজিবাজারে ঠেলে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য আইনি অব্যাহতি দেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে। ২ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান এ ব্যাপারে সরকারের সম্মতি চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সচিব ড. এম আসলাম আলমের কাছে চিঠি পাঠান।
সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী তফসিলি ব্যাংকগুলো সরাসরি শেয়ারবাজারে ব্যবসা করতে পারে না। পৃথক সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করে পুঁজিবাজারে কার্যক্রম চালাতে হয়। পুঁজিবাজারে ব্যাংকের সম্পৃক্ততা কমানো এবং পুঁজিবাজার কার্যক্রম বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে পৃথক করার লক্ষ্যে আইনে এই সংশোধনী আনা হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতার স্বার্থেই দেশী ব্যাংকগুলোকে এ ধরনের আইনি অব্যাহতি দেওয়া প্রয়োজন।
গভর্নরের চিঠিতে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর ব্যবসা পরিচালনার জন্য (সিকিউরিটি কাস্টডিয়াল সেবা) পাঁচ বছরের আইনি অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে। এ ধরনের সেবার মাধ্যমে মূলত ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনা-বেচা ও সংরক্ষণসহ তাদের গ্রাহককে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রদানে সহায়তা করে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বিদেশি ৪ ব্যাংক পাঁচ বছরের জন্য এ ধরনের আইনি অব্যাহতির সুযোগ নিয়ে পুঁজিবাজারে ব্যবসা করছে। দেশি ব্যাংকগুলোকেও অনুরূপ সুযোগ দেওয়া উচিত। এ উদ্যোগ কার্যকর হলে আগের মতোই তফসিলি ব্যাংকগুলো সরাসরি পুঁজিবাজারে সিকিউরিটি কাস্টডিয়াল সেবা দিতে পারবে। এ জন্য তাদের পৃথক সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করতে হবে না।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটি হলে আবারও পেছনে ফিরে যাওয়া হবে। এর ফলে ঝুঁকিও বাড়বে। ব্যাংকের কাজ ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়নে সহযোগিতা করা। পুঁজিবাজারে ব্যবসা করা নয়। সে কারণে ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজার থেকে পৃথক করা হয়েছে। এখন আইনি অব্যাহতি দিয়ে আবারও পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোকে ঠেলে দেওয়া হলে তার ফলাফল ভালো নাও হতে পারে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারকে সতর্কভাবে এগোনোর পরামর্শ দেন তিনি।
ব্যাংকিং সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে গভর্নর যা বলেন : সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৭ ধারার উপ-ধারায় (৩) উল্লেখ করে গভর্নর ড. আতিউর রহমান ব্যাংকিং সচিবকে জানান, এই আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যাংক-কোম্পানি স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার, মার্চেন্ট ব্যাংকার, পোর্টফোলিও ম্যানেজার হিসেবে অথবা সিকিউরিটিজ ও এঙ্চেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) হতে নিবন্ধন গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে সে ধরনের কোনো ব্যবসায় অংশ নিতে পারবে না। এ ধরনের ব্যবসা করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে পৃথক সাবসিডিয়ারি গঠন করতে হবে। ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে সম্পৃক্ততা হ্রাসের উদ্দেশ্যে এটি করা হয়েছে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী 'সিকিউরিটি কাস্টডিয়াল সেবা' প্রদানের ক্ষেত্রেও পৃথক সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করতে হবে। সাবসিডিয়ারি গঠনের জটিলতা এবং পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতার স্বার্থে দেশে কার্যরত বিদেশি ৪ ব্যাংককে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১২১ ধারার আওতায় 'সিকিউরিটি কাস্টডিয়াল সেবা' প্রদানের ক্ষেত্রে একই আইনের ৭ ধারার (৩) উপধারা পরিপালন থেকে পাঁচ বছরের জন্য অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই ধরনের সেবা প্রদানের জন্য দেশি ব্যাংকগুলোকেও পাঁচ বছরের জন্য আইনি অব্যাহতি দেওয়ার লক্ষ্যে চিঠিতে সরকারের সম্মতি কামনা করেন গভর্নর।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।