রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের আধিপত্য বিস্তার বা ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে একাকার হয়ে যাওয়া ব্যবসা ও রাজনীতি দুটিরই সমূহ সর্বনাশ নিশ্চিত করছে। রাজনীতি হলো জনগণের কল্যাণের শাস্ত্র। নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিদেরই এ পেশায় আসা উচিত। ব্যবসার মূল লক্ষ্য থাকে মুনাফা অর্জন। ব্যবসা তার পথপরিক্রমায় নানা ক্ষেত্রে কল্যাণমূলক অবদান রাখলেও তার মূল লক্ষ্য নিছক কল্যাণ নয়। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা সংগঠনে মুনাফাকেই প্রাধান্য দেয়, এক পর্যায়ে কল্যাণও তার অংশ হয়ে দাঁড়ায়। রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের আধিপত্য রাজনীতি থেকে রাজনীতিকদের উৎখাতে অবদান রেখেছে। জাতীয় সংসদের দিকে তাকালে অনুভূত হবে সংসদ সদস্যদের মধ্যে গুটি কয়েক বাদে অন্যান্যের মূল পেশা ব্যবসা। রাজনীতিকে তাদের কেউ কেউ ব্যবসার স্বার্থে ব্যবহার করেন এমন অভিযোগও প্রবল। ফলশ্রুতিতে রাজনীতিকদের হাত থেকে রাজনীতির নেতৃত্ব ক্রমেই অপসৃত হচ্ছে। রাজনীতি তার নীতিবোধ হারাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক নীতিবোধ পরিচালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতা নামধারীরা ব্যবসার নিয়ামক শক্তি হিসেবে আবিভর্ূত হলে ব্যবসার মুনাফা বাড়াতে নৈতিক-অনৈতিক সব সুযোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। ব্যবসার প্রথাসিদ্ধ প্রতিযোগিতার পথ বন্ধ হয়ে যায়। দেশের পরিবহন খাতের দিকে তাকালে এ বিষয়টি স্পষ্ট হবে। পরিবহন ব্যবসায় যারা জড়িত তাদের সিংহভাগেরই পরিচিতি তারা রাজনীতিক। ক্ষমতার সুযোগ-সুবিধাকে তারা ব্যবসায়িক সমৃদ্ধির কাজে ব্যবহার করছেন। তাদের কারসাজির কারণেই দেশের রেলওয়ে নেটওয়ার্ক বহু ক্ষেত্রে অচল হওয়ার পথে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-গাজীপুর রুটে ট্রেন যোগাযোগ বাড়িয়ে রাজধানীর যানজট কমিয়ে আনার পাশাপাশি রেলওয়ের আয় বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও তা সম্ভব হয়নি পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রক রাজনৈতিক নেতাদের কারণে। রাজধানী শুধু নয়, দেশের প্রতিটি রুটের গণপরিবহনের নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে। তারা যাত্রীদের জিম্মি করে যাত্রীভাড়া বৃদ্ধি করেন। তাদের কারণে মুখ থুবড়ে পড়ে সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি। রাজনীতিতে সাপে-নেউলে সম্পর্ক থাকলেও ব্যবসায়িক লুটপাটের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এমনকি জামায়াতের কোনো পার্থক্য নেই। জনস্বার্থেই পরিবহন খাতে তাদের
দানবিক প্রভাবের অবসান হওয়া উচিত।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।