আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জঙ্গিরা পালিয়েছিল পুলিশি ব্যর্থতায়

পুলিশের ব্যর্থতার জন্যই পালিয়েছিল জঙ্গিরা। মন্ত্রণালয়ের আদেশের দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে কাশিমপুর কারাগার থেকে দুর্ধর্ষ শীর্ষ জঙ্গিদের দুর্বল পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে ময়মনসিংহে পাঠানো হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, এ বিষয়টি সম্পর্কে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপারও অবহিত ছিলেন না। পুলিশের যথাযথভাবে দায়িত্ব অবহেলার কারণেই এমনটি হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত কমিটি। অন্যদিকে দুর্বৃত্তদের হামলার বিপরীতে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, ওই প্রিজন ভ্যানে পর্যাপ্ত পুলিশ থাকার পরও তারা আত্দরক্ষার্থে আগ্নেয়াস্ত্র কেন ব্যবহার করেননি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১১ সালের আগস্ট মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, দশ ট্রাক অস্ত্র ইত্যাদিসহ অন্যান্য মামলার শীর্ষ জঙ্গিদের নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর ও কারা কর্তৃপক্ষকে বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়। আদালত কিংবা অন্য কারাগারে স্থানান্তরের সময় এসব বন্দীর নিরাপত্তা জোরদার ও বিশেষ এসকর্টের ব্যবস্থা করার কথা। সরকারি ওই আদেশে বলা হয়, জেএমবির, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার, দশ ট্রাক অস্ত্র ও চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিসহ শীর্ষ জঙ্গিদের স্থানান্তরের সময় আসামিদের গাড়িতে একজন হাবিলদার ও চারজন কনস্টেবল এবং এসকর্ট গাড়িতে একজন ইন্সপেক্টর, একজন সুবেদার ও পাঁচজন কনস্টেবল থাকতে হবে। তাদের প্রত্যেকের মাথায় হেলমেট থাকবে।

পরনে থাকবে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। বন্দী স্থানান্তরের সময় জেল সুপার সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ সুপারকে (এসপি) চিঠি দিয়ে এ তথ্য জানাবেন। সংশ্লিষ্ট এসপি পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করবেন। পুলিশ নিরাপত্তার বিশেষ ব্যবস্থা করার পাশাপাশি র্যাবকেও বিষয়টি অবহিত করবে। এ ব্যাপারে কাশিমপুর-১ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার জামিল আহমদ চৌধুরী জানান, বন্দীরা জেএমবির শূরা সদস্য ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এ বিষয়টি উল্লেখ করে গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপারকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।

তার পক্ষ থেকে পাঠানো পুলিশ স্কটের কাছেই তারা বন্দী হস্তান্তর করেছিলেন। এখন বিষয়টি পুরোপুরি পুলিশের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্ধর্ষ তিন আসামিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহের আদালতে স্থানান্তরের সময় টাঙ্গাইল জেলা কিংবা ময়মনসিংহ পুলিশ সুপারকে (এসপি) বিষয়টি অবহিত করা হয়নি। একই সঙ্গে অবহিত করা হয়নি র্যাবকেও। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এ টি এম হাবিবুর রহমান জানান, অতীতে অনেক সময় দুর্ধর্ষ বন্দীদের অন্য কারাগারে কিংবা আদালতে হাজিরা দিতে নেওয়ার সময় র্যাবকে অবহিত করা হতো।

র্যাবের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হতো। তবে ওই তিন জঙ্গির ব্যাপারে র্যাব অবহিত ছিল না। ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু আহমেদ আল মামুন বলেন, 'গাজীপুর জেলার পক্ষ থেকে আমাদের দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের ব্যাপারে অবহিত করা হয়নি। ' এর বাইরে কোনো কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানান, প্রিজন ভ্যানের নিরাপত্তায় অবশ্যই পুলিশের ব্যর্থতা ছিল।

একই সঙ্গে মুঠোফোনে জঙ্গিদের কথোপকথনের তথ্য তারা পেয়েছেন। ঘটনার ১৫ দিন আগে ঢাকা জেলা আদালতে হাজিরার সময় বন্দুকযুদ্ধে নিহত জঙ্গি রাকিব হাসানকে একটি সিটিসেল মুঠোফোন দেওয়া হয়েছিল এমন তথ্য তারা পেয়েছেন। কারাগারে মুঠোফোনে কথোপকথনের বিষয়ে জেল সুপার জামিল আরও বলেন, 'আমার কারাগারের প্রতিটি ওয়ার্ডের ফ্লোরে জ্যামার লাগানো আছে। পুরো কারাগারে সর্বমোট ১৬টি জ্যামার ২৪ ঘণ্টা কার্যকর থাকে। কারা-অভ্যন্তর থেকে মুঠোফোনে বন্দীদের কথা বলার প্রশ্নই আসে না।

' গাজীপুরের এসপি আবদুল বাতেন বলেন, 'কমিউনিকেশন গ্যাপ হওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে। এর আগে চিঠির পাশাপাশি কারাগার থেকে টেলিফোনে বিষয়টির গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করা হতো। এবার তা করা হয়নি। ' পুলিশের পাল্টা আক্রমণের ব্যাপারে তিনি বলেন, ট্রাক দিয়ে প্রিজন ভ্যানটি থামানো হলেও পেছনে বসা পুলিশ সদস্যরা ঘটনার ভয়াবহতার বিষয়টি অাঁচ করতে পারেননি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুর্বৃত্তরা চালকসহ পাশে বসা পুলিশ সদস্যকে গুলি করেছিল।

ভ্যানের পেছনে থাকা পুলিশ সদস্যরা গাড়ি থেকে নামতেই দুর্বৃত্তরা বোমা চার্জ করে। এ কারণে পুলিশ সদস্যরা পাল্টা আক্রমণের সুযোগ পাননি। এদিকে ছিনতাইয়ের পর পলাতক দুই জঙ্গি সালাউদ্দিন সালেহীন ও জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজানকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের ধরতে ময়মনসিংহ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল জেলার কয়েকটি এলাকায় বিশেষ অভিযানে নেমেছে পুলিশ। মঙ্গলবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দুই জঙ্গির ছদ্মবেশের সম্ভাব্য নমুনা ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।

পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নমুনা ছবি দিয়ে তাদের ধরতে জনসাধারণের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.