জামায়াতে ইসলামীর দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। তারপরও চলমান উপজেলা নির্বাচনে ভালো করছে দলটি। প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও ২০টি উপজেলা পরিষদে জামায়াত সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। বিজয়ী হয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৭ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৯ জন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী। দলীয় নেতারা আশাবাদী উপজেলা পরিষদের আগামী নির্বাচনগুলোতে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা ভালো করবেন। রাজনৈতিক বৈরিতার মধ্যেও জামায়াতের এই ফলাফল অনেকটাই অপ্রত্যাশিত। তবে জামায়াত নেতারা তা মনে করেন না। তাদের মতে, মূলত সাংগঠনিক ঐক্যই জামায়াতকে বিজয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে সহায়তা করেছে। বিএনপির সঙ্গে জোটগত অবস্থান, তৃণমূল পর্যায়ে বড় দুটি দলের নেতাদের অনৈক্য, সাধারণ মানুষের সরকারবিরোধী মনোভাব, জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক ঐক্য ও জনসম্পৃক্ত রাজনীতি করার সুফল মিলেছে উপজেলা নির্বাচনের দুই ধাপে। অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে উপজেলা নির্বাচনের দুই পর্বে জামায়াতের এই ফলাফলের পেছনে প্রধানত কাজ করেছে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব। এ ছাড়াও জামায়াত প্রার্থীদের প্রতি বিএনপির অঘোষিত সমর্থন এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রার্থীদের প্রচুর অর্থ জোগান। তবে আলাপে জামায়াত নেতারা বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার কথা কবুল না করলেও জানিয়েছেন এই ফলাফলের পেছনে বড় কাজ করেছে স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও অনৈক্য। এ ছাড়া এলাকা বিশেষে ধর্মীয় আবেগ। সেসব জায়গায় জামায়াত এর সুযোগ নিয়েছে। যেসব উপজেলায় দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত সেখানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা গোপনে সফর করে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে উৎসাহ জুগিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১৯ ফেব্রুয়ারির প্রথম দফার উপজেলা নির্বাচনে ১২টিতে চেয়ারম্যান, ২৩টিতে ভাইস চেয়ারম্যান ও ১০টিতে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত প্রার্থীরা। আর ২৭ ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় দফা উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন চেয়ারম্যান ৮ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৩৪ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ৯ জন। জামায়াতের ভাষ্য অনুযায়ী, গত ৫ বছরে তাদের বিরুদ্ধে লক্ষাধিক মামলা, এসব মামলায় ৮ লাখ নেতা-কর্মীকে আসামি, ৫ লাখ নেতা-কর্মীকে অভিযুক্ত, লক্ষাধিক গ্রেফতার, বছরের পর বছর কার্যালয় বন্ধ, প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ-মিছিল করতে বাধা, মিছিলে গুলি ও হতাহতের ঘটনা, নিবন্ধন বাতিল প্রক্রিয়াসহ সরকারের প্রভৃতি দমনমূলক কর্মকাণ্ড এ বিজয়ে ভূমিকা রেখেছে। এ ব্যাপারে জামায়াতের এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, জামায়াতের ওপর দমন-পীড়নের প্রতিবাদ হিসেবেই জনগণ তাদের নেতা ও সমর্থকদের উপজেলায় বিজয়ী করেছে। তিনি জানান, মূলত সাংগঠনিক ঐক্যই জামায়াতকে বিজয়ে সহায়তা করেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতাদের বিচার ও শাস্তির ঘটনা তৃণমূলে প্রভাব ফেলেনি দাবি করে তিনি বলেন, এ অপরাধের দায় সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় নেতাদের, তৃণমূলের নয়। তার দাবি, উপজেলা নির্বাচনে কারচুপি, প্রভাব বিস্তার, জাল ভোট প্রদান ও কেন্দ্র দখলের মতো ঘটনা না ঘটলে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি-জামায়াত জোট ৯০ ভাগ পদে বিজয়ী হতো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এক সদস্য জানান, ভালো প্রার্থী দেওয়ায় জনগণ ভোট দিয়ে তাদের জিতিয়ে এনেছে। আগামী দিনে অনেক উপজেলায় জামায়াত যোগ্য প্রার্থী দেবে।
জামায়াতের ভালো ফলাফলের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.) বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, জামায়াত বিজয়ী হয়েছে তাদের একটা নির্দিষ্ট বেল্টে। পাকিস্তান আমল থেকেই ওই অংশটা তাদের নিয়ন্ত্রণে। আর দেশের অন্যান্য জায়গায় বিজয়ী হওয়ার কারণ তৃণমূলে আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব, বিএনপির সাপোর্ট এবং জামায়াতের প্রার্থীদের বিভিন্ন সূত্র থেকে গোপনে অর্থ জোগান। তিনি বলেন, '৯১ সালে জামায়াতের যে পরিমাণ ভোট ছিল, আজ তাই আছে। বেশকয়েকটি উপজেলায় জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হওয়ায় তারা ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে যাচ্ছে, এটা মনে করি না। এ ব্যাপারে তথ্য কমিশনার অধ্যাপিকা সাদেকা হালিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, উপজেলা নির্বাচন অরাজনৈতিক। কিন্তু বেশকিছু উপজেলায় বিএনপি জামায়াতকে ছাড় দিয়েছে। যেসব উপজেলায় জামায়াত পাস করেছে সেখানে জামায়াত এককভাবে তাদের ভোটে পাস করেনি। বিএনপি তাদের সে অবস্থান তৈরি করে দিয়েছে। আর আওয়ামী লীগও তৃণমূলের পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাছাড়া জামায়াত স্কুল, কলেজ, হাসপাতালসহ নানা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছে। ঠাণ্ডা মাথায় জামায়াত তাদের কর্মী তৈরি করছে। জামায়াতের ভালো করার পেছনে ধর্মান্ধতাও কাজ করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতকে বাংলার রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রধান দলগুলোই সহযোগিতা করেছে।
বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর চৌধুরী বলেন, উপজেলা নির্বাচন স্থানীয় নির্বাচন। ভালো ব্যক্তি হিসেবে ভোট পেয়ে পাস করার অর্থ এই নয় জামায়াত পাস করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে জামায়াতের সমর্থন থাকতে পারে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।