আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিদ্রোহীদের চাপে দুই দলের প্রার্থীরাই

উপজেলা নির্বাচনে দলের বিদ্রোহীদের চাপে রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ৮৩টি উপজেলার মধ্যে অন্তত ৫৩টি উপজেলায়ই দুই প্রধান দলের বিদ্রোহী প্রার্থী লড়ছেন। দল সমর্থিত প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে একাধিক উপজেলায় উভয় দলের বিদ্রোহীদের বহিষ্কার করা হলেও চরম অস্বস্তিতে দলীয় প্রার্থীরা। কোনো কোনো উপজেলায় দল সমর্থিত প্রার্থীদের চেয়ে বিদ্রোহীদের অবস্থানই শক্তিশালী। যে কারণে বেকায়দায় পড়েছেন তারা।

সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দল সমর্থিত ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি প্রচারণা চালাচ্ছেন সমান তালে। এদিকে মন্ত্রী প্রভাবিত এলাকায় দলের বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা বঞ্চনার প্রতিশোধ নিতে মন্ত্রী-এমপিদের পছন্দের প্রার্থীকে বর্জন করছে। বঞ্চিত নেতা-কর্মীদের নীরব সমর্থনে অনেক উপজেলায় হেরে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী। আওয়ামী লীগের একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্যের নিজ নির্বাচনী এলাকায় বিদ্রোহী প্রার্থীরা এখনো চিন্তার কারণ। এমনকি খোদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নির্বাচনী এলাকার অবস্থা আরও বিপজ্জনক।

বিএনপির ক্ষেত্রেও কেন্দ্রের কিছু সিনিয়র নেতাকে শিক্ষা দিতে বিদ্রোহী প্রার্থীরা সুবিধাজনক অবস্থানে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা, সরকারদলীয় মন্ত্রী-এমপিদের কারণেই দলে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি। প্রভাবশালী নেতারা নিজেদের বলয় ঠিক রাখতে পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই দল সমর্থিত প্রার্থীদের ঘুম হারাম হচ্ছে। দুই দলের কেন্দ্র থেকে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও কাজে আসেনি।

দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়ায় অনেক প্রার্থীকে দলের সব পদ থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। তবে বহিষ্কার করায় আরও বেঁকে বসেছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহর এলাকা ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় দলীয় প্রার্থী জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাহাদত হোসেন। এলাকায় জাকির হোসেন কাজী জাফর উল্লাহ সমর্থিত প্রার্থী। আর বিদ্রোহী প্রার্থী সাহাদাত হোসেন সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার কাজী জাফর উল্লাহকে পরাজিত করে বর্তমান সংসদ সদস্য নিঙ্ন চৌধুরীর।

এখানেও সাহাদত হোসেনের কারণে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। বিদ্রোহে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা খোদ দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নির্বাচনী এলাকা কিশোরগঞ্জে। সেখানে নির্বাচন হতে যাওয়া তিন উপজেলার মধ্যে দুটিতেই বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা তিনজন। তারা হলেন_ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আনোয়ার কামাল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মফিজউদ্দিন এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান শেখ সেলিম কবীর।

এই উপজেলায় দলীয় প্রার্থী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ছোট ভাই সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম। জানা গেছে, প্রার্থী মনোনয়নে তৃণমূল সম্মেলন সৈয়দ আশরাফের নিয়ন্ত্রণে হওয়ায় সে সম্মেলন বর্জন করে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন দলের স্থানীয় তিন নেতা। দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ঘুম হারাম হয়েছেন দল সমর্থিত প্রার্থীর। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুর সদর উপজেলায় লড়ছেন দলের দুই প্রার্থী। এর মধ্যে মন্ত্রীর ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরকে সমর্থন করছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ দলের একাংশ।

অন্যদিকে অপর প্রার্থী প্রয়াত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুন হাসানের স্ত্রী ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ঝর্ণা হাসান। তাকে সমর্থন দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ দলের অপর অংশ।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক সরকারকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছিম ইউপির টানা চারবারের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান সাইফুল এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান খোকন নির্বাচন করছেন। ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বিএনপির সমর্থন পেয়েছেন আহম্মদ তায়েবুর রহমান হিরন।

সেখানে বিদ্রোহী হয়েছেন সার্জেন্ট (অব.) মকবুল হোসেন। ফুলবাড়িয়ায় বিএনপির চার প্রার্থী। স্থানীয় বিএনপি সমর্থন দিয়েছে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল আজিজকে। তবে সেখানে আরও তিন নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন দল সমর্থিত প্রার্থী।

ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন ফারুক সিকদার। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তরুণ সিকদার। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামায় বিপাকে পড়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন রেজাউল করিম। দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে তৃণমূলের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি এমন অভিযোগ এনে বর্তমান চেয়ারম্যান ইউসুফ আল আজাদ বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন।

অপরদিকে বিএনপির একক প্রার্থী করা হয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করা নিয়ে টেনশনে রয়েছেন। তাহিরপুর উপজেলায় বিএনপির সমর্থন পেয়েছেন আনিসুল হক। এখানে চারজন বিদ্রোহী প্রার্থী তার বিরুদ্ধে লড়ছেন। দলের কেন্দ্রে তাদের ডেকে পাঠানো হলেও তারা এখনো অনড় রয়েছেন।

ফলে সুবিধাজনক স্থানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। বরিশালের হিজলা উপজেলায় আওয়ামী লীগের তিন ও বিএনপির একজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। ফলে কেউই সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। এখানে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন সুলতান মাহমুদ টিপু সরকার। তাকে চ্যালেঞ্জ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন দলিলুর রহমান সিকদার, বেলায়েত হোসেন ঢালী, আবদুল কাইয়ুম খান।

অপরদিকে বিএনপির সমর্থন পেয়েছেন মো. শহীদুল্লাহ। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আবদুল গাফফার খান। নোয়াখালীর সেনবাগে দুই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় বেকায়দায় দল সমর্থিত প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ভিপি মফিজ।

অপরদিকে বিএনপির সমর্থন পেয়েছেন আবুল কালাম আজাদ। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন কাজী মফিজুর রহমান, আবদুল্লাহ আল মামুন। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় বিএনপি ও জামায়াতের তিন প্রার্থী। সেখানে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানকে। কিন্তু সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ভিপি শাহীন।

এ ছাড়া জামায়াতের প্রার্থী হয়েছেন অ্যাডভোকেট ইয়াসিন সরকার। চিলমারীতে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. জয়নুল আবেদিনকে। সেখানে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন অস্টমিরচর ইউপি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসেন এবং জামায়াতের প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আমির অধ্যাপক রাশিদুল আলম বাদল। রৌমারীতে বিএনপির ৫ প্রার্থী। তারা হলেন- শাহেদ হোসেন সোনা, ইমান আলী ইমন, রেজওয়ানুল হক পাখি, খাদিজা জামান, শামসুল হক এবং জামায়াতের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক।

কুড়িগ্রাম সদরে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী। দলের সমর্থন পেয়েছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান পনির উদ্দিন আহমেদ, বিদ্রোহী হলেন আবদার হোসেন বুলু। চিলমারীতে উপজেলা সভাপতি শওকত আলী বীরবিক্রমকে সমর্থন দেওয়া হলেও সেখানে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি নুরুজ্জামান আজাদ নির্বাচন করছেন। রৌমারীতে আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শহিদুল ইসলাম শালু দলীয় সমর্থন পেলেও বিদ্রোহী হয়েছেন মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী ও শেখ আবদুল্লাহ।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.