আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২৪ বছর বন্ধ চাকসু নির্বাচন

প্রশাসন, চাকসু ও ছাত্রসংগঠন তিন পক্ষই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন চায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো গত ২৪ বছর ধরে নির্বাচন হয়নি। বরং দায়িত্বপ্রাপ্তরা 'নির্বাচন দেওয়া হবে হবে'র মতো আশ্বাসের মধ্যে শেষ করেছেন দুই যুগ। ফলে চাকসু নির্বাচন নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি বলছেন, ছাত্রসংগঠনগুলো যদি একমত হয় তাহলে চাকসু নির্বাচন দিতে আপত্তি নেই। নির্বাচনের প্রথম শর্ত হলো তাদের সহাবস্থান। চাকসু ভিপির দাবি, অনতিবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হোক। নেতৃত্ব সৃষ্টিতে এর কোনো বিকল্প নেই। ছাত্র সংগঠনগুলো বলছে, 'সরকার ও প্রশাসন চাইলে যে কোনো মুহূর্তেই নির্বাচন দিতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন দুই পক্ষের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা।' তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ_ কোনো পক্ষই আন্তরিকভাবে নির্বাচন চায় না, তাই হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন হয়। পরে শিবির ক্যাডারদের হাতে ছাত্র ঐক্য নেতা ফারুকুজ্জামান খুন হওয়ায় ছাত্র সংসদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর গত ২৪ বছর ধরে নির্বাচন হয়নি। তবে চাকসু কার্যক্রম না থাকলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়মিত আদায় করা হচ্ছে 'বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিয়ন ফি' ও 'হল ইউনিয়ন ফি'। অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তিচ্ছু প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এ দুই নামে ৫৫ টাকা করে আদায় করা হয়। এই চাকসু পরিচালনা করেত প্রতি বছর ব্যয় করা হয় ছয় লাখ টাকা করে। বর্তমানে চাকসু কেন্দ্রে কর্মরত আছেন পরিচালক ও সহকারী পরিচালকসহ ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারী। বর্তমান কমিটির বয়স ২৪ বছর পার করলেও কর্তৃপক্ষ এখনো বিলুপ্ত ঘোষণা করেনি। চবি ভিসি প্রফেসর মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফ বলেন, ছাত্র সংগঠনগুলো নিজেরা যদি ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করে তাহলে নির্বাচন দিতে কোনো আপত্তি নেই। এ ক্ষেত্রে আমাদের কাছে কোনো বাধাও নেই। কিন্তু যারা সামান্য একটি মিটিং-মিছিল করতে গিয়ে পরস্পর মারামারি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটায়, সেখানে কী করে আমরা নির্বাচন দিতে পারি? তিনি বলেন, তারপরও রাজনৈতিক বাস্তবতা বিষয়টি সব সময় থাকে। গত জানুয়ারি পর্যন্ত আমরা কোন কঠিন সময় পার করছি তা সবারই জানা। আমিও চাই চাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হোক। চাকসু সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৬৬ সালে। দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয় চাকসুর ১৯৭০ সালে। প্রতিষ্ঠার পর ছয়বার নির্বাচন হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন শহীদ আবদুর রব এবং জিএস হন মোহাম্মদ ইব্রাহিম, ১৯৭২ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনে ভিপি হন শামসুজ্জামান হীরা ও জিএস হন মাহমুদুর রহমান মান্না, ১৯৭৪ সালের তৃতীয় নির্বাচনে ভিপি হন এস এম ফজলুল হক ও জিএস হন গোলাম জিলানী চৌধুরী, ১৯৭৯ সালের চতুর্থ নির্বাচনে ভিপি হন মাজহারুল শাহ চৌধুরী ও জিএস হন জমির চৌধুরী, ১৯৮১ সালের পঞ্চম নির্বাচনে ভিপি হন জসিম উদ্দিন সরকার ও জিএস হন আবদুল গাফফার। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভিপি হন নাজিম উদ্দিন ও জিএস হন আজিম উদ্দিন। চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দিন বলেন, এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমার একমাত্র দাবি অনতিবিলম্বে চাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হোক। এ জন্য সরকার, প্রশাসন ও ছাত্রসংগঠনগুলোকেও আন্তরিক হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তবে এক্ষেত্রে টাকাও একটা ব্যাপার। কারণ এখন চাকসুর মতো একটি ছাত্রসংসদের নির্বাচন করতে গেলে অন্তত ১০ কোটি টাকা খরচ হবে। তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে তিনটি চাকসু নির্বাচন দেখেছি। কিন্তু বর্তমানের শিক্ষার্থীদের দুর্ভাগ্য তারা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কার্যত এর মাধ্যমে দেশ যোগ্য ও সৃষ্টিশীল নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ছাত্র সংগঠনগুলোর অভিযোগ, নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির আশ্বাস দিয়ে দিয়ে কর্তৃপক্ষ নির্বাচন দেওয়া থেকে বিরত থাকছে। অতীতের উপাচার্যরাও আশ্বাসের মধ্যেই দায়িত্বের মেয়াদকাল শেষ করেন। এর আগে সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম বদিউল আলম, প্রফেসর এ জে এম নুরুদ্দীন চৌধুরী, প্রফেসর ড. আবু ইউসুফ চাকসু নির্বাচনের প্রয়োজনীয় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ না থাকার অজুহাতে নির্বাচন দেননি। সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির আশ্বাস থাকলেও তা তৈরির কোনো পদক্ষেপ লক্ষণীয় থাকে না। এতে ছাত্রসংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সন্দেহের দাবানল দানা বাঁধে। নির্বাচন না হওয়ায় বর্তমানে এ সংসদটির কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ। এটি যেন কেবলই একটি ভবন। তিনতলা ভবনের নিচতলায় একপাশে ক্যান্টিন, দ্বিতীয় তলায় শিক্ষার্থীদের কমনরুম, তৃতীয় তলায় চাকসু পরিচালক ও সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়। অন্যান্য কক্ষে মাঝে মধ্যে সাংস্কৃতিক সংগঠন অনুশীলন করে। কমনরুমে কয়েকটি পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের ব্যবস্থা আছে। ছাত্রলীগ চবি শাখার সাধারণ সভাপতি মামুনুল হক বলেন, আমরা গত এক বছরে চাকসু নির্বাচনসহ নানা দাবিতে প্রশাসনকে একাধিকবার স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু রহস্যজনক কারণে দীর্ঘ দুই যুগেও চাকসু নির্বাচন হচ্ছে না। আমরা মনে করি, ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোর সহাবস্থান, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য চাকসু নির্বাচন জরুরি। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেধাবী নেতৃত্বও তৈরি হবে। ইসলামী ছাত্রসেনা চবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, কিছু ছাত্রসংগঠনও চায় না চাকসু নির্বাচন হোক।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.