বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের ভাগ্যবিধাতার আসনে গুজরাট দাঙ্গার নায়ক নরেন্দ্র মোদিকে ঠেকাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত বিজেপির প্রবীণ নেতা এল কে আদভানি হতে পারেন শেষ ভরসা! দিলি্লর রাজনীতির অন্দরমহলে এমন একটি গুঞ্জন চলছে তবে তার সম্ভাবনাও ভোটের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে। নরেন্দ্র মোদির বিজেপি যদি ২০০ আসনে জয়লাভ করতে ব্যর্থ হয় তখনই আদভানিকে প্রধানমন্ত্রী করার শর্তে তাদের পার্টিকে অন্যরা সমর্থন দিতে এগিয়ে আসতে পারেন। এমনকি বিজেপি জোট যদি ১৭০-১৮০ আসনের মধ্যে আটকে যায় অথবা একই সঙ্গে কংগ্রেস জোট যদি ১২০ আসনে জয়লাভ করে বসে তখন নরেন্দ্র মোদির দিল্লির প্রধানমন্ত্রিত্বের আসন থেকে ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। এ ক্ষেত্রে বিজেপি সরকার গঠনে ব্যর্থ হলেও কংগ্রেস যে রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রিত্বের আসনে বসিয়ে সরকার গঠন করতে পারবে সে সুযোগও আসবে না। তখন নরেন্দ্র মোদি ও রাহুল গান্ধীর বাইরে থেকেই ছোট ছোট আঞ্চলিক দলের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন ও সরকার গঠনের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।
এ ক্ষেত্রে অনেকের মতামত হচ্ছে, বিজেপি ২০০ আসনে জয়লাভ করলে নরেন্দ্র মোদিকে সরকার গঠনের পথ থেকে কেউ ঠেকাতে পারবে না। সম্প্রতি দিলি্ল সফর করে এ আভাস পাওয়া গেছে। একসময় হিন্দুত্ববাদী বিজেপির উদারপন্থি নেতার পাশে কপালে তিলক পরা যে আদভানিকে উগ্রপন্থি বলে চিহ্নিত করা হতো, জীবনের পড়ন্তবেলায় তাকে এখন ভারতের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা গুজরাট দাঙ্গার রক্তমাখা হাত নিয়ে ভোট লড়াইয়ে উঠে আসা নরেন্দ্র মোদির পাশে একজন উদার গণতান্ত্রিক নেতা হিসেবেই দেখছেন। আদভানি নাকি পাকিস্তান সফরকালে জিন্নাহর কবরে গিয়ে ফুল দিয়েই তার উদার চরিত্রখানি মানুষের মাঝে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। মোদি ভয়ে আতঙ্কিত সংখ্যালঘু আর ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবাসীর কাছে মোদির চেয়ে আদভানি অনেক উত্তম বলেই বিবেচিত হচ্ছেন।
বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হতে গিয়ে বিজেপির একচ্ছত্র কর্তৃত্ব হাতে নিয়ে যেভাবে প্রচারণা ও মনোনয়নদান করেছেন তাতে পার্টির প্রবীণ নেতা আদভানি, যশোবন্ত সিং, সুষমা স্বরাজরা তো কোণঠাসা হয়েছেনই এমনকি বিজেপিও মোদির কাছে তলিয়ে গেছে। সব ছাড়িয়ে মোদি নিজেকেই বিজ্ঞাপনে-প্রচারে পার্টির চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে নিয়েছেন। মোদির বিলবোর্ডে যেখানে তার ছবি, তার স্লোগান সঙ্গে নির্বাচনী প্রতীক পদ্মফুল শোভা পাচ্ছে সেখানে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীর বিলবোর্ডে ভারতবাসীর ঐক্যের কথাই প্রাধান্য পাচ্ছে। রাহুলের ডানে-বাঁয়ে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের ছবি শোভা পাচ্ছে। সঙ্গে পার্টির প্রতীক হাতের পাঞ্জা।
দিল্লিতে কেজরিওয়াল তার নবগঠিত আম আদমি পার্টির জোয়ার তুলেছেন। সাতটি আসনের চার-পাঁচটি তার হবে এমনটি বলছেন সবাই। বামপন্থিরা বিচ্ছিন্নভাবে সর্বসাকল্যে ১৫টির মতো আসন পেতে পারে। এর মধ্যে ত্রিপুরায় দুটি, পশ্চিমবঙ্গে পাঁচ-ছয়টি। পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস ৩০টির বেশি আসন পাবে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, তার অবস্থানও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির দিকে। যদিও অতীতে বিজেপি সরকারে তিনি ছিলেন। তা ছিল বাজপেয়ি সরকার। কিন্তু অনেকের ভাষায়, নরেন্দ্র মোদির সরকারে তিনি যাবেন না। দিলি্লর শাহি মসজিদের ইমাম সংখ্যালঘু মুসলমানদের কেন্দ্রে ধর্মনিরপেক্ষ কংগ্রেস ও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
উত্তরপ্রদেশে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি ও তামিলনাড়ুতে জয়ললিতার এআইডিএমকে উভয়ই ২৫ থেকে ৩০টি করে আসন পেতে পারে। জয়ললিতা বিজেপির দিকে ঝুঁকলেও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির কারণে মায়াবতী চাইবেন না নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসুন। এ ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদির ঝড়ে বিজেপি ২০০ আসন না পেলে এ তিন মহিলা নেত্রীর আঞ্চলিক পার্টি সরকার গঠনে বড় ফ্যাক্টর হয়ে আবির্ভূত হবে। জনমত জরিপে বা জুয়াড়িদের ব্যাটিং হিসাবে এখনো কংগ্রেস ১০০ আসনের বেশি জয়লাভ করবে এমনটি মনেই করছে না। যদিও অনেকে বলছেন, ভোট কমলেও যত ঢাকঢোল পেটানো হচ্ছে কংগ্রেসের আসন ততটা কমছে না।
এমনকি কংগ্রেসবিরোধী মঞ্চ যেমন গুজরাটের উন্নয়নের মডেল সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে দিয়ে এক নম্বরে ভারত স্লোগান তুলে, দুর্নীতির লাগাম টেনে উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের স্বপ্নের সওদাগর হয়ে নরেন্দ্র মোদি আবির্ভূত হয়েছেন তেমনি ২০০২ সালের রক্তাক্ত গুজরাট দাঙ্গার নৃশংসতা স্মরণ করে ধর্মনিরপেক্ষ উদার গণতান্ত্রিক ভারতের আদর্শবোধ নিয়ে তাকে ঠেকানোর জন্য কংগ্রেসের পাশাপাশি ছোট ছোট দলগুলোও কাছাকাছি চিন্তাভাবনা করছে। বামপন্থিরাও আশাবাদী মোদি আসবেন না। তেমনি ছোট দলগুলোরও একই প্রত্যাশা। তবে হিসাবের খাতায় যে যাই লিখুক না কেন সবাই একমত, ভোটের ফলাফল জানার আগে ভারতের ক্ষমতার মসনদে কে বসছেন তা নিশ্চিত হয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না। প্রায় দেড় শ কোটি মানুষের ভারতে কাল সোমবার ১৬তম লোকসভা নির্বাচন শুরু হতে যাচ্ছে।
৭ এপ্রিল থেকে ১২ মে- নয় পর্বে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ৮১ কোটি ৪৫ লাখ ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে নতুন ভোটার ১০ কোটি। নতুন ভোটারদের মধ্যে তরুণরাই শীর্ষে। তরুণদের দিকে সবার নজর ছিল ভোটযুদ্ধে।
নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে কংগ্রেস এনেছে দাঙ্গা আর মিথ্যাবাদীরা অভিযোগ। অন্যদিকে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তারা এনেছে দুর্নীতি আর রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতার অভিযোগ।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দিলি্লর মসনদে ক্ষমতার পালাবদল নিয়ে জল্পনা-কল্পনা যা-ই থাক কূটনীতিতে রাষ্ট্রীয় নীতিমালার তেমন পরিবর্তন ঘটবে না। এখানে জাতীয় ঐক্য প্রতিফলিত হবে। শ্রীলঙ্কা সফরে মনমোহন সিং সঙ্গে নিয়েছিলেন বিজেপির সুষমা স্বরাজকে।
অন্যদিকে ঢাকা প্রণব মুখার্জি সঙ্গে এনেছিলেন বিজেপির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক চন্দন মিত্রকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।