আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুজিবের জন্য সাড়ে ৭ কোটি কম্বল চোট্টার কিছুই হয়নিঃ হাসিনা কিভাবে ১৬ কোটি মানুষের নয়নের মণি-দেশপ্রেমিক আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করবে?

আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সেই গত ২০১১র সেপ্টম্বর হতে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ও তদারকি পরামর্শক নিয়োগ বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগ বর্তমান হাসিনার সরকার, তার অন্ধ ও চামচা সমর্থকগণ হেসেই খুন হচ্ছিল। তাদের কথা হল এটা বিরোধী দল, ডঃ ইউনুসের চক্রান্তের ফসল। তাদের ভাবখান ছিল এমন যে কেউ চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণ, খুন, ঘুষ যেকোন অপরাধ করতে যেয়ে ব্যার্থ হলে তাকে অপরাধ ঘটেছে বলে বলা যাবে না। তাই হাসিনা ও তার চামচারা বার বার বলছিল পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক সহ অন্যান্য দাতার যখন ঋণই ছাড় করেনি তখন কিভাবে র্দূনীতি হল? যেন তারা ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না। তাই তথাকথিত ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করেই চলল।

উল্টা বিশ্বব্যাংককেই র্দূনীতিগ্রস্থ বলে সমালোচনা করতে লাগল। মানে একেতো চুরি তার উপর শিনাজুড়ি। হাসিনা ও তার আলীগ মনে করেছিল বিশ্বব্যাংক হল বিএনপি তাই তাকে থোড়াই কেয়ার করি। বলা হচ্ছিল কানাডিয়ান পুলিশ এসএনসি লাভালিনের অফিসে অভিযান চালিয়ে কোম্পানীর দুই কর্মচারীকে গ্রেফতার সহ তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেনের ঘুষ চাওয়ার ব্যাপারে প্রমাণ পেয়েছে। কিন্তু হাসিনা ও তার সরকার এ সব আমলে নিলেতো! ফলাফল এই বছর ২০১২র জুন মাসে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর জন্য প্রস্তাবিত ১২০ কোটি ডলার ঋণ প্রকল্প বাতিল ঘোষণা করে।

কিন্তু গলাবাজ-চাপাবাজ হাসিনা ও তার আলীগ বলে কথা। হুংকার দেয় যে নিজেদের অর্থেই পদ্মা সেতুর নির্মাণ হবে। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বলে \"যদি বিশ্বব্যাংক প্রমাণ না করতে পারে যে আবুল হোসেন ঘুষ খেয়েছে তাহলে আমি ঋণ নিব না\"। এরই মধ্যে দুদক নামকা ওয়াস্তে তদন্তের নামে প্রহসন করে। বলে যে আবুলের বিরুদ্ধে তারা কোন র্দূনীতির প্রমাণ পায়নি এবং কানাডায় ঘুষ চাওয়া বাংলাদেশে অপরাধের অন্তর্গত নয়, ইত্যাদি ইত্যাদি।

এরএই দিকে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে মোবাইল ফোনে সারচার্জ সহ বিভিন্ন লেভী আরোপ করে ফান্ড করা হবে বলে হাসিনা সহ সংসদের স্পীকারও বলেন। জনগণ হতেও অর্থ নিয়ে এবং চাঁদাবাজির মাধ্যমেও অর্থ আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর পর পরই পদ্মা সেতু বিষয়ে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের এক কর্মী নিজেদের কোন্দলে নিহত হয়। তারপর বলে মালয়শিয়া, পাব্লিক মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে অর্থ পাওয়া যাবে। এমনকি র্দূনীতিগ্রস্থ ডেষ্টিনিও মালয়শিয়ার নাম ভাঙিয়ে পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগ করার চেষ্টা করে।

কিন্তু মালয়শিয়ার অতিরিক্ত সুদ(৬%) তারপর নিজস্ব মাধ্যমে রিজার্ভের বৈদেশিক মুদ্রা ডলারে হাত দিলে দেশের বৈদেশিক লেনদেনে ঝুকি হবে বিধায় এই সবই স্রেফ যত গর্জে তত বর্ষে না বলেই প্রমাণিত হয়। তাই সহসাই পদ্মা সেতুর মূল নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হবে তা অনিশ্চিত হয়ে যায়। ইতিমধ্যে কানাডার পুলিশ আনুষ্ঠানিক ভাবে রিপোর্ট দেয় যে আবুল হোসেন শুধু ঘুষই চাননি বরং লাভালিন কোম্পানীকে ভয়ভীতিও দেখিয়েছে। এই দিকে সরকারের উপর দেশের জনগণের বিরুপ প্রতিক্রিয়া ও রোষানল শুরু হতে থাকে। হাসিনা এই বিরুপ পরিস্থিতি আচ করতে পেরে তার উপদেষ্টা ও ভারতপন্থী গওহের রিজভীকে মার্কিন মুল্লুকের ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠায়।

হাসিনা উপরে উপরে গোস্বা দেখালেও তলে তলে বিশ্বব্যাংককে ম্যানেজের চেষ্টা চলতে থাকে। এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী মুহিতের সুরও নরম হতে থাকে। সরকারের তরফ থেকে বলা হয় যে আবুল হোসেন, মসিউর সহ বিশ্বব্যাংক যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের স্ব স্ব পদ থেকে সরিয়ে পুনরায় উপযূক্ত তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। তাই আবুল হোসেন পদত্যাগ করে। সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেয় যে আবুল হোসেন হল দেশপ্রেমিক! রিজভীর এই প্রচেষ্টায় খানিকটা সফলতা হল যে এই পদ্মা সেতুর নির্মাণ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক পুনরায় ফিরে আসার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়।

বিশ্বব্যাংক বলে যে তারা পরবর্তী তদন্ত প্রক্রিয়া সহ দুদক এই ঘুষ বিষয়ে কি ব্যাবস্থা নেয় তার উপর ভিত্তি করেই সেতুর বিষয়ে ঋণ প্রদান চূড়ান্ত করবে। কিন্তু কারসাজি, বিকৃতি ও মিথ্যাবাদী হাসিনা এই বছরের সেপ্টম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে নিউ ইয়র্কে যেয়ে বলে \"বিশ্বব্যাংক র্দূনীতি পায়নি তাই পুনরায় ঋণ দিতে রাজী হয়ে গেছে\"। আর এই দিকে মসিউরকে সরিয়ে দিতে বললেও সেও একই সময়ে নিউ ইয়র্ক গিয়ে হাসিনার সাথে ঘুরে ও বিভিন্ন মিটিং সমাবেশে এক টেবিলে বসে বক্তৃতাও করে। এর পর পরই বিশ্বব্যাংক বিবৃতি দেয় যে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও বাংলাদেশ সরকার যে বক্তব্য দিচ্ছে তা যথাযথ ও সঠিক নয়। তারা পুনরায় তাদের শর্তের বিষয় গুলো তুলে ধরে।

এই বিষয়ে তাদের একটি টিমও দুদকের কার্যক্রম নিয়ে পর্যবেক্ষণ সহ উপদেশ দিয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর বাংলাদেশে আসবে। এরপর গত অক্টোবর মাসে একবার ঘুরে যায় বিশ্বব্যাংকের উক্ত টিম। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৭শে নভেম্বর দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান সাংবাদিকদের জানান \"পদ্মা সেতু প্রকল্পে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়েছি\" Click This Link গোলাম রহমান বলছে কিছুটা র্দূনীতি হয়েছে। আবুল হোসেন, মসিউর এতে জড়িত কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না। গোলাম রহমানের ভাবখানা এমন যে ধরি মাছ না ছুই পানি।

অনেকেই এই বিষয়ে আশান্বিত হেয়েছিল এই কারণে যে তারা মনে করেছিল দুদকের উপযূক্ত ব্যাবস্থা নিয়ে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের নামে মামলা করলে বিশ্বব্যাংকের ঋণ বুঝি মঞ্জুর হবে। কিন্তু দুদক চেয়ারম্যানের কথার ভঙিমা, নাটকীয়তা ও কারসাজিমূলক বক্তৃতার জন্য আমি মোটেও নিশ্চিত হতে পারিনি। কেবলই মনে হচ্ছিল যে হাজার হৌক হাসিনার পছন্দমত নিয়োগ প্রাপ্ত এই গোলাম রহমান চাইলেই আবুল হোসেন, আবুল হাসান, মসিউরের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে না। তাই বিধিবাম হল যে দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তারা ১০ জনের নামে মামলা করতে সুপারিশ করলেও কমিশন ২ জন তথা আবুল হোসেন এবং আবুল হাসানের নাম বাদ দিয়ে মামলা করার বিষয়ে চূড়ান্ত করে। অথচ মূল অভিযোগটাই আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে।

আবার অনিশ্চয়তা দেখা দেয়; Click This Link দুদক ও গোলাম রহমান যে শুধুই বিরোধী দলকে দমন ও হেনস্থা করতে এবং হাসিনা সরকারের র্দূনীতিবাজদের রক্ষায় সক্রিয় তারই প্রমাণ মিলে এই পদ্মা সেতুর বিষয়ে। দুদকের গোলাম রহমান ঠিক যেন হাসিনার মতই স্ববিরোধী। কারণ দুদক এসএনসি লাভালিনের স্থানীয় এজেন্ট মো. মোস্তফা এবং এর তিন কর্মকর্তা সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ সাহ ও সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইলের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে রাজী কিন্তু উক্ত দুই আবুল নয়। আমি অনেক আগেই ধারণা করেছি যে র্দূনীত তথা অবৈধ অর্থ কামানোর জন্যই পদ্মা সেতুর নির্মাণ বিলম্ব হয়েছে। কারণ হাসিনার সরকার আন্তরিক ও সৎ হলে এই পদ্মা সেতুর মূল নির্মাণ কাজ ২০১০ সালের মধ্যেই শুরু হত।

কিন্তু এসএনসি লাভালিনকে কন্সালটেন্সি ফার্ম হিসেবে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য বার বার পদ্মা সেতুর কমিটি পরিবর্তন করা হয়; Click This Link এটা সেই ২০০৯ সালের ডিসেম্বর হতেই এই ধরণের অনিয়ম হয়ে আসছিল। এখানে এই অংশটি খুবই লক্ষ্যণীয়; এভাবে বারবার দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির ভাঙাগড়ার পেছনে দুদক বিভিন্ন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, কমিটি গঠন ও পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে সময় নষ্ট করা হয়েছে। আর এর মূল লক্ষ্য ছিল এসএনসি-লাভালিনকে কাজ পাইয়ে দেওয়া। এভাবে কমিটি গঠন ও পুনর্গঠনে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন ও কয়েকজন বেসরকারি প্রভাবশালী ব্যক্তি ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়েছেন। বস্তুত এই কারণেই পরিণাম হল; বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দুদকের আলোচনা ভেঙে গেছে! Click This Link এই আবুল হোসেন এবং কয়েকজন বেসরকারী প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের অপতৎড়তা সমন্ধে শেখ হাসিনা ভালভাবেই অবগত ছিল।

তাই পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়া দেড়ী হলেও সরকারের কেউই কিছু বলেনি। মূলত উক্ত অজ্ঞাত বেসরকারীদের ক্রীড়ানক ছিল এই আবুল হোসেন। আবুল হোসেন এবং শেখ হাসিনা ভালভাবেই জানে যে এই বেসরকারী প্রভাবশালী ব্যাক্তি কারা। ঠিক যেমন শেখ মুজিব জানত যে রিলিফে আসা সাড়ে ৭ কোটি কম্বল গাজী গোলাম মোস্তফা চুরি করছে। শেখ মুজিব গাজী গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়নি যদিও মুজিব র্দূনীতিবাজ ছিলেন না।

কিন্তু এসএনসি লাভালিন হতে যে সকল বেসরকারী প্রভাবশালী ব্যাক্তি লাভবান হত তাদের যেন কোন সম্মানহানি না হয় সেই লক্ষ্যেই আবুল হোসেন হাসিনার তরফ থেকে দেশপ্রেমিকের উপাধি পায়। শেখ হাসিনার এই মহাজোট আমলে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু না হলেও তার অতি পরিচিত বেসরকারী প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা রক্ষা পাবে এটাই মূখ্য। শেখ হাসিনা বর্তমানে দেশের প্রধানমন্ত্রী। তার মন্ত্রী, এমপি, নেতা-কর্মী সহ চামচাদের কাছে শেখ হাসিনা দেশ রত্ন তাই সার্টিফিকেট প্রাপ্ত আবুল হোসেনও দেশপ্রেমিক। ১৬ কোটি মানুষের আশা, আকংখা ও স্বপ্নের পদ্ম সেতু নির্মিত হৌক বা না হৌক প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সার্টিফিকেট ঠিকই বহাল থাকছে।

এটাই নির্মম বাস্তবতা!  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।