আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সভাপতির অগ্রযাত্রা : কেটে যাচ্ছে কালো মেঘ

আ হ ম মোস্তফা কামালকে অভিনন্দন। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্ষদে এর আগেও তাঁর প্রতিনিধিত্ব ছিল। তিনি ছিলেন একাধারে বিসিবি ও এসিসি’র সভাপতি এবং আইসিসি’র অডিট কমিটির প্রধান। তবে এসব আসন অলঙ্কৃত করে তিনি যত না আলোচিত হয়েছিলেন তার চেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছিলেন একটি ছবির জন্য। প্রায় হাতজোড় করে বিসিবি সভাপতির সামনে নতজানু হয়ে বসা সাকিব আল হাসানের ছবিটি সে সময় বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতিকৃতি হয়ে উঠেছিল।

বিসিবি’র মিডিয়া কমিটির পক্ষ থেকে পরবর্তীতে এ ছবির গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করা হলেও দুর্জনেরা সে ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হননি। তবে সম্প্রতি আইসিসি’র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়ে অনেক বিতর্ককে পিছে ফেলে বিসিবি ছেড়েছেন সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল। যাবার আগে সাংবাদিকদের কাছে তাঁর আশা-হতাশার কথা জানিয়েছেন বিদায়ী সভাপতি। তাঁর সাফল্যের মধ্যে রয়েছে বিশ্বকাপের সফল আয়োজন, বিপিএল যুগের সূচনা আর খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি। আর ব্যর্থতার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটসূচিতে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া, সময়মতো বিপিএল খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক পরিশোধ না করায় বিসিবি’র বিশ্বব্যাপী সমালোচনা, ঘরোয়া ক্রিকেটের গুণগত পরিবর্তনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়া, কক্সবাজারে প্রতিশ্র“ত ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণ না করা, এখন পর্যন্ত টিভি স্বত্বের বিষয়টির নিষ্পত্তি না হওয়া ইত্যাদি।

আ হ ম মোস্তফা কামালের আমলে ক্রিকেট নিয়ে বিতর্কও কম তৈরি হয়নি, বিশ্বকাপে মাশরাফির খেলা না খেলা, পাকিস্তান সফর, বোর্ডের পয়সায় বিদেশে ভিআইপিদের ক্রিকেট দর্শন, আয়ারল্যান্ড সফরের দোলাচাল, রিচার্ড পাইবাসকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া সেসবের অন্যতম। সময়ের স্রোতে অন্যান্য বিতর্ক মিইয়ে গেলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচের ভবিষ্যত এখনও ঝুলে আছে। শারদ পাওয়ারের পর এ বছরের জুন মাসে আইসিসির সভাপতির পদ অলংকৃত করে এখনও পাদপ্রদীপের আলোয় আসেননি এলান আইসাক। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্ষদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়ে আলোকিত হয়েছেন আ হ ম মোস্তফা কামাল। সেই আলোয় বাংলাদেশের ক্রিকেট উদ্ভাসিত হবে বলে তার স্তাবকরা যতখানি উল্লসিত ক্রিকেট বোদ্ধারা ততটা উচ্ছ্বসিত নন।

তার কারণ মোস্তফা কামালের কর্মযজ্ঞের প্রতি আস্থাহীনতা নয়। বিশ্ব ক্রিকেটে আইসিসি সহ-সভাপতির কর্মপরিধির সীমাবদ্ধতা। ক্রিকেট বোদ্ধারা স্মৃতি হাতড়ে আর কোনো সহ-সভাপতির নাম মনে করতে পারেন কিনা সেটাও ভেবে দেখার মতো বিষয়। তবে এই পদায়নে বিসিবি থেকে তার বিদায়টি সম্মানজনক হওয়ায় মোস্তফা কামাল আইসিসি এবং পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কাছে কৃতজ্ঞ থাকতে পারেন। স্বাগতম নাজমুল হাসান বিসিবি’র নতুন সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় নাজমুল হাসানকে অভিনন্দন।

কলম্বোতে আইসিসির সর্বশেষ সভার পর থেকেই সরগরম হয়ে উঠেছিল মিরপুরের বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড অফিস। আইনত শূন্য হতে যাওয়া বিসিবির নতুন সভাপতি কে হতে যাচ্ছেন, কবে নতুন সভাপতি দায়িত্ব পাবেনÑ এসব প্রশ্নে মুখর ছিল ক্রিকেটপাড়া। এর আগে থেকেই শুরু হয় অনুমানপর্বÑ কে হচ্ছেন সভাপতি? সেই অনুমানে নাজমুল হাসান পাপনের নাম ছিল। সেইসঙ্গে বেশ জোরেশোরে শোনা যাচ্ছিল সাবেক বিসিবি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর নামও। এছাড়া ক্রীড়া সংগঠক গাজী গোলাম দস্তগীর ও সাংসদ ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের নামও শোনা যাচ্ছিল।

অবশেষে ১৭ অক্টোবর সকালে সব প্রশ্নের উত্তর মিললো। সব গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে ১৬ অক্টোবর রাতে পাপনের নিয়োগপত্রে সই করেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার। ১৭ অক্টোবর ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়ে দেয়া হয় আ হ ম মোস্তফা কামালের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তাকে বিসিবি সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ১৪তম সভাপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন নাজমুল হাসান পাপন। এই প্রজ্ঞাপন জারির ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে মোস্তফা কামাল যুগের অবসান হলো।

ক্লাব সমিতির প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় পাপনকে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সাধুবাদের দাবিদার। গত ১৯ অক্টোবর নাজমুল হাসান পাপন আনুষ্ঠানিভাবে বিসিবির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পাপন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের পুত্র হওয়ায় অনেকে বিষয়টিকে আরাফাত রহমান কোকোর বিসিবির সাথে সংশ্লিষ্ট হবার ঘটনার সাথে মিলিয়ে দেখতে চাইছেন। তবে পাপনের ক্রিকেট সংশ্লিষ্টতা অনেক পুরোনো।

তিনি ২০০৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আবাহনীর ক্রিকেট কমিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন। ২০০৮ সাল থেকে তিনি আবাহনীর ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বেক্সিমকো ক্রিকেট দলেরও চেয়ারম্যান। একই সঙ্গে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের উদ্বোধনী আসরের উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। এর পরও কথা থেকে যাচ্ছে, আইসিসির নির্দেশনা মানা না মানা নিয়ে।

বাংলাদেশের রেওয়াজ অনুসারে ক্রিকেটের সভাপতি নিয়োগ দেয় সরকার। আইসিসি চায় নির্বাচিত সভাপতি। এত কম সময়ে বিসিবির পক্ষে নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব হতো না। বর্তমান কমিটির মেয়াদও প্রায় শেষের পথে। এই মুহূর্তে ক্রিকেট পাড়ায় পাপনই যোগ্যতর।

বিসিবির সফলতম সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীকে যোগ্যতায় ছাড়িয়ে যেতে পারলেই তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নিয়ে যেতে পারবেন ভিন্ন উচ্চতায়। বিসিবি সভাপতিদের রোল অব অনার সভাপতি মেয়াদ কাল প্রফেসর মো. ইউসুফ আলী ১৯৭২-১৯৭৬ এস এস হুদা ১৯৭৬-১৯৮১ কমোডোর মুজিবুর রহমান ১৯৮১-১৯৮৩ কে জেড ইসলাম ১৯৮৩-১৯৮৭ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম ১৯৮৭-১৯৯০ কাজী বাহাউদ্দিন আহমেদ ১৯৯০-১৯৯১ লে. কর্নেল মুস্তাফিজুর রহমান (অব.) ১৯৯১-১৯৯৬ সাবের হোসেন চৌধুরী ১৯৯৬-২০০১ এম আকমল হোসেন ২০০১-২০০১ মো. আলী আসগর, এমপি ২০০১-২০০৬ আবদুল আজিজ ২০০৬-২০০৭ লে. জেনারেল সিনহা ইবনে জামালী (অব.) ২০০৭-২০০৯ আ হ ম মোস্তফা কামাল ২০০৯-২০১২ নাজমুল হাসান পাপন ২০১২- ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.