মিথ্যেবাদী নই, প্রেমিক আমি ! এক
ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকাল লোকটা। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন ডাক্তার এহতেশামস। যাক! লোকটা তাহলে বেঁচে গেল।
লোকটা দুর্বল কণ্ঠে বলল, “পানি”।
ডাক্তার ইশারা করতেই একজন নার্স পানির গ্লাসটা লোকটার ঠোঁটের কাছে ধরল।
অল্প একটু পানি খেল লোকটা। তারপর বলল, “এটা কোন জায়গা”।
ডাক্তার হাসি মুখে বললেন, “এটা হাসপাতাল। আপনার একটা মারাত্মক এক্সিডেন্ট হয়েছিল। ভাগ্য ভাল বেঁচে গেছেন! মেজর কোনও হাড় ভাঙ্গেনি”।
“আমার গলার আওয়াজ এমন কেন?”
“আপনার গলার ওপর মারাত্মক আঘাত লেগেছিল। ভোকাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে”।
“এটা কি ঠিক হবেনা?”
“আই এম আফ্রেইড। মনে হচ্ছে পুরোপুরি ঠিক হবে না”।
লোকটা চুপ করে থাকল।
ডাক্তার আবার বলছেন, “আর একটা সমস্যা হয়েছে আপনার”।
“কি সমস্যা?”
ডাক্তার এহতেশামস নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলেন। বললেন, “আপনার মুখের চামড়া পুড়ে গেছে। আপনাকে এখন চেনা যাচ্ছেনা”!
লোকটা তিক্ত ভঙ্গিতে হাসল। “গলার স্বর যন্ত্রের মত, চেহারা পুড়ে গেছে- এর চেয়ে তো মরে গেলেই ভাল ছিল”।
“আপনি ঘাবড়াবেন না। বিশ্বের সেরা প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আছেন। ভদ্রলোক আমার পরিচিত। আমি একটা চিঠি লিখে দিচ্ছি, আপনি তার কাছে যান”।
***
একমনে কাজ করছিলেন ডক্টর জন ডেনভার।
বাংলাদেশে এসে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা আর্টিকেল লিখছেন তিনি। পৃথিবীর বিখ্যাত প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডক্টর জন ডেনভার একটা মেডিক্যাল টিম আর দামী দামী সার্জিকাল ইকুইপমেন্ট নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। তারা কুমিল্লায় ক্যাম্প করেছে। বিনামূল্যে এসিডদগ্ধ নারীদের প্লাস্টিক সার্জারি করে পূর্বের চেহারা ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেখানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নারীরা আসছে।
তিনি হয়ত জানেন না দেশের ডাক্তাররা অসুস্থ অসহায় রোগীদের কাছ থেকে গলাকাটা ভিজিট রাখে আর বাইরে থেকে তাদের মত ডাক্তাররা এসে এদেশের মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা করে যায়!
কাজে বিঘ্ন ঘটল সেক্রেটারি রবার্টের ডাকে। “স্যার, একজন লোক এসেছে আপনার সাথে দেখা করার জন্য”।
“পরে আসতে বল। আমি ব্যস্ত আছি”। বিরক্তি ভরা কণ্ঠে বললেন ডক্টর জন।
এক মুহূর্ত ইততস্থ করে রবার্ট বলল, “স্যার, আমার মনে হচ্ছে লোকটার সাথে আপনার দেখা করা দরকার। ব্যাপারটা জরুরী। ডাক্তার এহতেশামস এর চিঠি আছে তার সাথে”।
“কি হয়েছে?”
“দেখা করলেই বুঝতে পারবেন, স্যার”।
রবার্টের কণ্ঠে অস্থির ভাবটা টের পেলেন ডক্টর।
“ঠিক আছে, এখানে আসতে বল”।
রবার্ট ডক্টরের রুম থেকে বেরিয়ে গেল। একমুহূর্ত বাদেই একটা লোক ঢুকল ভেতরে। এই গরমের মধ্যেও গায়ে ওভার কোট। হুড দিয়ে ঢাকা থাকায় মুখ দেখা যাচ্ছে না।
লোকটার চলা ফেরার মধ্যে একটু জড়তা লক্ষ করলেন ডক্টর।
“বসুন, কি দরকারে এসেছেন?”
“আপনার সাহায্য দরকার আমার ডক্টর”।
লোকটার কণ্ঠস্বর শুনে চমকে উঠলেন ডক্টর। যেন কোনও যন্ত্র কথা বলছে। “আপনার গলার আওয়াজ এমন কেন?”
“এক্সিডেন্ট হয়েছিল।
ভোকাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে”।
“আমার কাছে কেন এসেছেন?”
“আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ। আপনার কাছে একজন মানুষ কি সাহায্য চাইতে পারে, স্যার?”
“হুম... সমস্যাটা কি আপনার?”
লোকটা চুপ করে বসে থাকল।
“কি ব্যাপার? কিছু বলছেন না কেন?”
লোকটা মুখের ওপর থেকে হুড সরিয়ে নিল। জীবনে অনেক মানুষের বিকৃত চেহারা তিনি সার্জারি করে ঠিক করে ফেলেছেন।
কিন্তু এমন ভয়ংকর কিছু তিনি আগে দেখেন নি। লোকটার ভয়ংকর বীভৎস চেহারা দেখে আঁতকে উঠলেন। নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কীভাবে হল ?”
লোকটা আবার মুখের ওপর হুড টেনে নিল। “দয়া করে এ ব্যাপারে জানতে চাইবেন না। আমি এ সম্পর্কে কিছু বলতে চাইনা।
আপনি কি সার্জারি করে আমাকে আমার আগের চেহারা ফিরিয়ে দেবেন?”
“কিন্তু আমরা এখানে এসেছি সামাজিক কিছু কাজ করার জন্য। আপনাদের দেশের এসিডদগ্ধ মেয়েদের উপকার করতে। দুর্ঘটনায় পরা কারও চিকিৎসা করা আমাদের কাজ নয়”।
“কোটি কোটি টাকা খরচ করে বড় হাসপাতালে গিয়ে সার্জারি করার সামর্থ্য আমার নেই। আপনি যদি আমাকে সাহায্য না করেন তাহলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আমার আর কোনও উপায় থাকবে না।
এই মুখ আমি কাউকে দেখাতে পারব না, সেটা আপনি বুঝতেই পারছেন”।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছারলেন ডক্টর। “ঠিক আছে, আমি সাহায্য করব। আপনার আগের চেহারার ছবি এনেছেন সাথে?”
লোকটা ওভার কোটের পকেট থেকে একটা এনভেলপ বের করল। বিনা বাক্য ব্যয়ে সেটা ডক্টর জন কে ধরিয়ে দিল।
এনভেলপ খুলে কিছু ছবি বের করলেন ডক্টর। একজন হাস্যজ্জল, উচ্ছল যুবকের ছবি। প্রমাদ গুনলেন ডক্টর। তিনি কি পারবেন এই যুবকটিকে তার আগের চেহারা ফিরিয়ে দিতে?
দুই
দুই দিন আগের কথা। দিনটা ছিল শুক্রবার।
অন্যান্য দিনের মত ৬টা বাজতেই মোবাইলের অ্যালার্ম বেজে উঠল না। কিন্তু প্রতিদিনের অভ্যাসমত ঘুমটা ঠিকই ভেঙ্গে গেল। চোখ বন্ধ করে আরও কিছুক্ষন বিছানায় পরে থাকল শামিম। ব্যর্থ চেষ্টা, ঘুম আর আসবে না। একটা আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে পড়ল সে।
ব্রাশ করল, হাত-মুখ ওয়াশ করল, তারপর কি ভেবে শাওয়ারটাও সেরে ফেলল। খবরের কাগজ হাতে নিয়ে রিলাক্স মুডে বসল। কোনও কাজে আজ শামিমের কোনও তাড়াহুড়ো নেই।
আজ অফিস নেই। একটা মালটিন্যাশনাল কোম্পানিতে ভাল বেতনে চাকরী কর সে।
প্রতিদিন ৮টা-৫টা ডিউটির যান্ত্রিক জীবন তাকে একটা যন্ত্রদানবে পরিনত করছে। দিনে দিনে স্বাভাবিক চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। জীবনের সব কিছু একটা গণ্ডির ভেতর চলে আসছে। শুক্রবারটা এলেই শামিম একটু হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। এদিন রুটিন বাধা জীবনের নিয়ম গুলো আর মানতে হয়না।
সপ্তাহের এই একটা দিন যদি নিজের মত করে বাঁচার সুযোগ না থাকত, তাহলে হয়ত আত্মহত্যাই করে বসত সে!
“ছিঃ ছিঃ! আত্মহত্যার কথা ভাবছি আমি?” মনে মনে বলল শামিম। “এত সহজে আত্মহত্যার চিন্তা আমার মাথায় আসে কি করে? মরে যাওয়াই কি জীবনের সব বার্থতা, গ্লানি আর অপমানের অবসানের একমাত্র উপায়? একজন মানুষ একবার আমাকে একটা উপাধি দিয়েছিল, কাপুরুষ! যথার্থ ছিল সেই উপাধি, আমি আসলেই একটা কাপুরুষ! আমার জীবনের কোনও সিদ্ধান্ত আমি নিজে নিতে পারিনি। সব সিদ্ধান্তই অন্য কারও নেওয়া। আমি একটা কাপুরুষের জীবন যাপন করছি”।
আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতে ব্রেক ফাস্টটা সেরে নিল শামিম।
সারাদিন কীভাবে পার করা যায় তা ভাবছে এখন। এই শহরে সে সম্পূর্ণ একা। মাঝে মাঝে তার মনে হয় যদি এই একাকী দিনটা কারও হাত ধরে কাটান যেত! মন্দ হতনা। যাওয়ার মত জায়গা অবশ্য একটা আছে, বন্ধু ফাহাদের বাড়ি।
ফাহাদ!
ফাহাদ শামিমের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
কথাটা কি ঠিক হল? ফাহাদ শামিমের ঘনিষ্ঠ ছিল ঠিকই কিন্তু ওকে কি শামিম কখনও বন্ধুর চোখে দেখেছে? গায়ের রং, উচ্চতা, শরীরের আকৃতি সহ সবকিছুতেই দুজনের মাঝে অনেক মিল। কিন্তু চিন্তা-ভাবনা, আচার আচরন সহ সব কিছুতেই দুজনে ছিল দুই মেরুর বাসিন্দা। শামিম মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যায় এই ভেবে যে ফাহাদের মত লাফাঙ্গা ছেলেটা কীভাবে এত বদলে গেল? অবশ্য সবই সম্ভব হয়েছে ত্রিনার কারনে।
ত্রিনা!
মেয়েটির নামটা শামিমের সমস্ত শরীরে একটা ভাল লাগার অনুভুতি ছড়িয়ে দেয়। এই মেয়েটার সাথে প্রথম দেখা হওয়ার দিনই তার মনে হয়েছিল মেয়েটি অতুলনীয়া।
তার মধ্যে এমন একটা সম্মোহনী ক্ষমতা আছে যা সহজেই অন্য মানুষকে ইনফ্লুয়েন্স করতে পারে। সেই ক্ষমতা ব্যাবহার করেই হয়ত ত্রিনা ফাহাদের মত বুনো পশুকে গৃহপালিত প্রাণীতে পরিনত করেছে।
***
ফাহাদ থাকে ধানমণ্ডিতে। বিশাল আলিশান বাড়ি। সুখী দম্পতীর আপনালয়।
ফাহাদের বাবার মৃত্যুর পর সমস্ত ব্যবসার দায়িত্ব ফাহাদের উপর পড়েছে। ভবঘুরে টাইপের ছেলেটা কাজে মন দিয়েছে! শামিম একটা রিকশা ডেকে উঠে পড়ল। এবার বেশ কিছু দিন পর ওদের বাড়িতে যাচ্ছে।
সেদিনের কথা শামিমের আজও স্পষ্ট মনে আছে। ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে বসে কফি খাচ্ছিল।
হঠাৎ কোত্থেকে যেন ফাহাদ ছুটে এল। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “তুই এখানে? আমি তো খুজে খুজে হয়রান”।
“কেন খুজছিস?”
“কি বলব দোস্ত?” ফাহাদ একগাল হেসে বলল, “একটা নতুন জিনিশ পটিয়েছি”।
ফাহাদের কাছে অল্পবয়সী মেয়ে মানেই “জিনিশ”। সুন্দরী মেয়ে দেখলেই ফাহাদ সিক হয়ে পড়ে।
মেয়ে পটান তার কাছে কোনও ব্যাপার না। কোটিপতি বাবার একমাত্র সন্তান। ইচ্ছে মত টাকা ওড়ায়, দামী গাড়িতে চড়ে, দামী দামী গিফট দেয়, কেএফসিতে নিয়ে খাওয়ায়। মেয়েগুলো খুব সহজেই গলে যায়। শামিম প্রথম দিকে ভাবত মেয়েরা এত বোকা হয় কেমন করে? পরে আবিষ্কার করল মেয়েরা আসলে ব্যাপারটা উপভোগ করে।
তারা বুঝতে পারে ফাহাদ তাদের সাথে অল্প কিছুদিন ডেটিং করবে, সুযোগ বুঝে শরীরের ক্ষুধা মিটাবে তারপর আবার অন্য মেয়ের দিকে ঝুঁকে পড়বে। এই সময়ের মধ্যে যত বেশি সম্ভব দামী কাপড়-চোপড়, গিফট, গহনা ইত্যাদি আদায় করে নেওয়া যায়। এটা তাদের কাছে একটা খেলার মত। শামিম জোর করে একটু হাসার চেষ্টা করল, “এটা আর নতুন কি? এই কথা বলার জন্য তুই পাগল হয়ে আছিস?”
“না রে! এইটা অন্য কেইস! এই মেয়েকে বাগে আনার জন্য প্রচুর ধকল গেছে আমার। দু মাস আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাল।
কত গিফট দিয়েছি, নেয়নি। কতবার ভাল রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেতে চেয়েছি, যায় নি। এমন কি গাড়ি করে লিফট দিতে চেয়েছি, রাজি হয়নি। শেষে কি করলাম জানিশ?”
শামিমের জানতে মোটেও আগ্রহ হচ্ছেনা। কিন্তু একজন ভাল বন্ধুর ভুমিকায় অভিনয় করতে হবে তাকে।
চোখে আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কি করলি?”
“বাংলা সিনেমার ডায়লগ ছাড়লাম মামা! তুমি আমাকে এই মুহূর্তে ভালবাসি না বললে আমি গাড়ি নিয়ে মারাত্মক একটা এক্সিডেন্ট করব। ব্যাস!”
শামিম আবার হাসল। মজা পাওয়ার ভান করছে।
“মেয়েটা কে জানতে চাইলি না?” ফাহাদের গলায় রহস্য। “ওকে তো তুই চিনিস!”
“আমি চিনি?” শামিমের বুক ধক করে উঠল।
সে তো খুব বেশি মেয়েকে চেনেনা! ফাহাদ কার কথা বলছে? কে মেয়েটা?
“তুই যে কোচিং এ পড়াস। ঐ কোচিংয়েই ইংলিশ পড়ায়। ত্রিনা”।
ত্রিনা! শামিম নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না। ত্রিনার মত মেয়ে ফাহাদের মত ছেলেকে পছন্দ করল কীভাবে? শেষ পর্যন্ত ত্রিনার উপরও বদমাশটার নজর পড়ল? “ত্রিনা রাজি হল?”
“এত সহজে রাজি হয়ানাই রে।
বহুত খাটনি গেল আমার”।
শামিমের সামনের চিরচেনা পৃথিবীটা যেন ভীষণ ভাবে দুলে উঠল। মনে মনে বলল, এটা তুমি কি করলে ত্রিনা? ফাহাদের মত লোফারের ফাঁদে পা দিল?
“কি রে? তোর চেহারা এমন কাল হয়ে গেল কেন? ঐ মেয়ের প্রতি দুর্বল ছিলি নাকি?”
শামিম হাসার চেষ্টা করল। ফাহাদ ঠিকই বলেছে। জীবনে ঐ একটা মেয়ের প্রতিই সে দুর্বল ছিলাম।
কিন্তু তার কিছু বলার নেই। কিছুই বলার উপায় নেই। শামিম একটা নামকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। এখানে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করতে ১০ লাখের বেশি টাকা লাগে। মা বাবা হারান এতিম ছেলে সে।
তার বাবা ছিলেন ফাহাদের বাবার কর্মচারী। বাবার মৃত্যুর পর থেকে শামিমের পড়ালেখা ও অন্যান্য যাবতীয় খরচ ফাহাদের বাবা চালায়। ফাহাদ তার সবকিছু শামিমের সাথে শেয়ার করে, এর মানে এই না যে ফাহাদ শামিমকে খুব ভাল বন্ধু বলে ভাবে। ফাহাদ জানে তার এইসব আচার আচরন শামিমের একদম পছন্দ না। তাই শামিমকে এসব শুনিয়ে একধরনের বিকৃত আনন্দ অনুভব করে ফাহাদ।
ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারেনা শামিম। সে তো ফাহাদের টাকায় কেনা গোলাম।
***
কলিং বেল চাপতে যা দেরি, সাথে সাথে দরজা খুলে গেল। শামিম অবাক চোখে তাকিয়ে থাকল। দরজা খুলেছে ত্রিনা।
গত ৫ বছরে মেয়েটা একদম বদলায়নি। সেই চোখ, সেই চুল, সেই অবয়ব!
কোচিঙের অফিস রুমটা ছিল মাঝ বরাবর। সেখান থেকে সব গুলো ক্লাস রুমের দরজা দেখা যেত। ত্রিনা যখন ক্লাস নিত, শামিম একটা চেয়ার টেনে এমন যায়গায় বসত যেখান থেকে ত্রিনাকে সহজেই দেখা যায়। বোর্ডে কিছু লেখার সময় বা স্টুডেন্টদের সাথে কথা বলার সময় তার কিছু অবাধ্য চুল উরে এসে মুখের ওপর পড়ত।
ত্রিনা সেগুলো সুন্দর করে আবার কানের ভাঁজে গুজে দিত। শামিম মুগ্ধ হয়ে সে দৃশ্য দেখত। কিন্তু একসময় এই দৃশ্য দেখাও তাকে বন্ধ করতে হল।
একদিন ক্লাস শেষ করে এসে ত্রিনা তাকে বলল, “শামিম ভাই কি একটু বাইরে আসতে পারবেন? আপনার সাথে কথা আছে আমার”।
শামিম রোবটের মত নির্দেশ পালন করল।
বাইরে এসে ত্রিনা প্রথমেই বলল, “আপনার বন্ধু নিশ্চয়ই আপনাকে সব বলেছে?”
“ম...মানে?”
“মানেটা আপনি ঠিকই বুঝতে পারছেন। কিন্তু না বুঝার ভান করছেন”।
শামিম চুপ করে থাকল।
“আপনার বন্ধু ফাহাদ নিশ্চয়ই ওর আর আমার ব্যাপারে আপনাকে বলেছে?”
শামিম উপর নিচে মাথা ঝাঁকাল।
“তারপরও আমার দিকে অমন ভ্যাবলার মত তাকিয়ে থাকেন কেন? আপনার লজ্জা করে না?”
শামিম নিশ্চুপ।
মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকল।
“আমি যেদিন থেকে এই কোচিংয়ে পড়ান শুরু করেছি সেদিন থেকেই দেখছি আপনি ক্লাস নেয়ার সময় সারাক্ষন তাকিয়ে থাকেন। মনে করেছেন আমি কিছু বুঝিনা? কিছু বলার থাকলে মুখে বলতে পারেন না?”
শামিম বরাবরের মত নিশ্চুপ হয়ে থাকল।
ত্রিনা অধৈর্য কণ্ঠে বলল, “আপনি যে একটা কাপুরুষ সেটা কি আপনাকে আগে কেউ বলেছে?”
লজ্জায় অপমানে শামিমের মাটিতে মিশে যেতে মন চাইছে।
ত্রিনা হাসল একটু, “অবশ্য ঠিকই করেছেন।
আপনার মত একটা কাপুরুষ কিছু বলতে চাইলে অপমান ছাড়া তার ভাগ্যে কিছু জুটত না”।
কিছু একটা বলতে মন চাইছে শামিমের কিন্তু মুখ দিয়ে কথা আসছে না।
ত্রিনা বলে চলেছে, “আমি ভেবে পাইনা আপনার মত একটা কাওয়ারডের সাথে ফাহাদ কীভাবে বন্ধুত্ব করল!”
এবার কিছু না বলে পারল না শামিম। শোনা যায় কি যায় না এমন একটা আওয়াজে বলল, “ফাহাদ ছেলে ভাল না”।
“খবরদার এ কথা বলবেন না।
নিজের বন্ধুর সম্পর্কে অমন কথা বলতে আপনার লজ্জা হয়না? ফাহাদ আমাকে পৃথিবীর সব কিছুর চেয়ে বেশি ভালবাসে। আমার এক কথায় নিজের জীবন দিতে পারে”।
ফাহাদ ত্রিনা সম্পর্কে কি কি বলে সব গোপনে মোবাইলে রেকর্ড করে রাখে শামিম। এই মুহূর্তে চাইলে সে ত্রিনার এই ভুল ধারনা ভেঙ্গে দিতে পারে। কিন্তু সেই সাহস তার নেই।
ত্রিনা ঠিকই বলেছে, সে আসলেই কাপুরুষ।
“কি ব্যাপার শামিম ভাই? বাইরে দাড়িয়ে থাকবেন? ভেতরে আসবেন না?”
ত্রিনার কথায় অতীত থেকে বাস্তবে ফিরে এল শামিম। ভেতরে ঢুকল। ঢুকেই দেখল ফাহাদ স্যুট-টাই পরে সোফায় পড়ে বসে আছে। শামিমকে দেখে বলল, “আরে! শামিম।
কতদিন পরে এলি!”
শামিম একটু হাসল। “তুই কোথাও যাচ্ছিস নাকি?”
“হ্যাঁ...আজ হঠাৎ অফিসে একটা কাজ পড়েছে”।
“কাজ বাদ দেও না। শামিম ভাই এসেছে, ওনার সাথে একটু গল্প কর”। ত্রিনা আবদার করল।
“গল্প যেতে যেতে করা যাবে। জরুরী মিটিং, যাওয়াই লাগবে। চল শামিম আমার সাথে। কাজের ফাকে ফাকে তোর সাথে গল্প করব”।
ফাহাদের কাজের ফাকে ফাকে গল্প করার ব্যাপারটা মোটেও পছন্দ হলনা শামিমের।
কিন্তু না করতে পারল না। ফাহাদের কোনও কথাতেই সে না করতে পারেনা। ফাহাদের সাথে বেড়িয়ে এল। গাড়িতে উঠে বসল। ত্রিনা পেছন পেছন এসেছে।
ফাহাদ হাত নেড়ে বায় জানাল ত্রিনাকে, “বায় বায়, লাভ ইউ!”
ত্রিনাও হাসি মুখে হাত নেড়ে বিদায় জানাল।
একেই বোধহয় বলে কপাল! কেউ না চাইতেই দু হাত ভরে সব কিছু পেয়ে যায় আর কেউ সারাজীবন তপস্যা করে খালি হাতে ফেরে। শামিম অবাক চোখে তাকিয়ে থাকল ফাহাদের দিকে। কীভাবে চোখের সামনে বদলে গেল ফাহাদ। ভালবাসার শক্তি কত বিশাল! ত্রিনার পক্ষে কোনও কাজই অসম্ভব নয়!
শামিম সবচেয়ে অবাক হয়েছিল সেই দিন যখন ফাহাদ এসে বলল, “দোস্ত! আমি ত্রিনাকে বিয়ে করতে যাচ্ছি”।
শামিম ভিমরি খেয়ে গেল। “কি বলছিস?”
“হ্যাঁ...আজই ওদের বাসায় বাবা প্রস্তাব নিয়ে যাবে”।
“সত্যি বলছিস? ত্রিনা তো তোর টাইপের মেয়ে না। ওকে নিয়ে সংসার করতে পারবি?”
ফাহাদ বলল, “হ্যাঁ...ঘরের বউ হিসেবে ওর চেয়ে ভাল আর কেউ হতে পারেনা”।
শামিম অবশ্য সেদিন খুশি হয়েছিল।
কারন সে জানত যদি ফাহাদ বেঈমানি করে মেয়েটার সাথে, মনের কষ্টে হয়ত মেয়েটা আত্মহত্যা করে বসতে পারে। এত বড় আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা মেয়েটির হবেনা।
ফাহাদ তার অফিসের সামনে গাড়ি না থামিয়ে ফুল স্পীডে পার হয়ে গেল। ঝট করে তার মুখের দিকে তাকাল শামিম। ফাহাদের ঠোঁটের কোনে ক্রুর হাসি লেগে আছে।
এই হাসি শামিমের অনেক চেনা। এই হাসির মানে ফাহাদের মনে খারাপ কিছু একটা আছে।
“কোথায় যাচ্ছি আমরা?”
“ক্লাবে?”
“ক্লাবে? তুই না অফিসে যাবি বললি?”
“তোর কি মনে হয় শুক্রবার অফিস করার মত পাবলিক আমি?”
শামিম অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। এই সেই পুরনো ফাহাদ! পারেনি ত্রিনা! পারেনি ফাহাদকে বদলাতে।
***
ধানমণ্ডি এলাকায় এই ক্লাবটা নতুন হয়েছে।
দেশি বিদেশি বড় বড় বিজনেস ম্যাগনেটদের আনাগোনা। ভাল পানি, লাল পানি সহ সবকিছুর ব্যবস্থা আছে। স্ট্রিপ ড্যান্স, লাপ ড্যান্স আর প্রাইভেট কেবিনের ব্যবস্থা তো আছেই। সরকার ইদানিং এসব বিষয়ে উদার মনভাবের পরিচয় দিচ্ছে। ক্লাবের সামনে গাড়ি পার্ক করল ফাহাদ।
শামিমকে নিয়ে ঢুকল ভেতরে। জমকালো লাইটিং আর মিউজিক শামিমের মাথা ধরিয়ে দিল। ফাহাদ এক কোনায় একটা টেবিল দেখে বসল। সুন্দরী ওয়েটারকে দেখে ভদকা দিতে বলল। মেয়েটা সুন্দর করে “জী স্যার” বলে নিতম্ব দুলাতে দুলাতে চলে গেল।
“আমি ভেবেছিলাম ত্রিনার ভালবাসা তোকে বদলে দিয়েছে”।
“ড্যাম ইওর ফাকিং ভালবাসা! আমাকে চিনিস না তুই? এক নারী নিয়ে মজে থাকার মানুষ আমি?”
“চিনি! তবুও মনে হয়েছিল!”
“ঐ সব রাখ, তোকে যেজন্য ডেকেছি শোন। আজ রাতে আমি ইউরোপ যাচ্ছি। সাথে আমার নতুন সেক্রেটারি রিনা যাচ্ছে। ব্যবসায়িক কিছু কাজ আছে।
বাকিটা সময় ইনজয় করব। তোর কাজ হবে মাঝে মাঝে ত্রিনার সাথে দেখা করা। তাকে বলবি যে আমি প্রায়ই ফোন দিয়ে তোকে বলি যেন ত্রিনাকে দেখে আসিস কেমন আছে। ওকে ছাড়া আমার ভাল লাগেনা ব্যাগারা ব্যাগারা..... কি পারবি তো?”
“এই জীবনই যদি চাস তবে কেন বিয়ে করলি ওকে?”
“আরে! সংসার করা লাগবে না? বংশ বৃদ্ধি করা লাগবে না? বাদ দে তো! ওইতো রিনা এসেছে! দেখ দেখ! সেই রকম সেক্সি মেয়ে!”
রিনাকে দেখার কোনও আগ্রহ বোধ করল না শামিম। বেরিয়ে এল ক্লাব থেকে।
প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে তার। ত্রিনা প্রতারনার শিকার হয়েছে। এই দায়ভার তারই। সে পারত সহজেই ত্রিনার সাথে ফাহাদের সম্পর্ক টা ভেঙে দিতে। কিন্তু ফাহাদ কে সে ভয় পায়।
সেই ভয়ের কারনে সে পারেনি ত্রিনাকে কিছু বলতে। ত্রিনা ঠিকই বলেছে। শামিম আসলেই একটা কাপুরুষ। রাস্তায় বেড়িয়ে কোথায় যাবে বুঝতে পারছে না। পায়ের উপর দায়িত্ব ছেড়ে দিল।
আজ পা দুটি যেখানে নিয়ে যাবে সেখানেই যাবে।
এভাবে কতক্ষন পেরিয়ে গেল আর কতটুকু হেঁটেছে তা বুঝতে পারল না শামিম। আশে পাশে যা কিছু ঘটে যায় যাক আজ আর কিছুই যায় আসে না। খেয়াল হল কেউ একজন চিৎকার করছে। ঘুরে তাকানর চেষ্টা করল সে।
এক সেকেন্ডের জন্য দেখতে পেল একটা পিক আপ ভ্যান ফুল স্পীডে তার দিকে ছুটে আসছে। সম্ভবত তার কাপুরুষের জীবন শেষ হতে চলেছে!
পিক আপের ড্রাইভার শেষ মুহূর্তে ব্রেক করার চেষ্টা করল। বনবন করে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু জায়গাটা ছিল একটা পেট্রোল পাম্পের পাশে। পিকআপ ধাক্কা খেল তেলের ট্যাংকারে।
প্রচণ্ড শব্দে আশে পাশের বিল্ডিংগুলো কেঁপে উঠল। আরও কিছু গাড়ি দিক হারিয়ে এসে ধাক্কা খেল। দাউ দাউ করে আগুন জলে উঠল। আগুনের শিখা উঁচু হয়েই চলেছে। আজ যেন আকাশটা ছুঁয়েই ছাড়বে।
তিন
২০ দিন পর দেশে ফিরল ফাহাদ। ব্যবসায়িক কাজ শেষে সেক্রেটারি রিনার সাথে ইউরোপের নানান দেশে প্রমোদ ভ্রমন করেছে। এত মজা আগে খুব একটা করা হয়নি তার। মনটা উৎফুল্ল হয়ে আছে। গাড়িতে করে রিনাকে তার এপার্টমেন্টের সামনে নামিয়ে দিল ফাহাদ।
তারপর রওনা দিল নিজের বাসার দিকে। শামিমকে একটা ফোন দেয়া দরকার। রিনার সাথে বাইরে কিকি করেছে সেটা শামিমকে শুনিয়ে বেশ মজা পাওয়া যাবে। মোবাইলে শামিমের নম্বর বের করে ডায়াল করল ফাহাদ। শামিম রিসভ করতেই একনাগাড়ে বলা শুরু করল, “দোস্ত! আমি তো ফিরে আসছি দেশে”।
ওপাশ থেকে আওয়াজ এল, “হুম”!
“তুই কই? বাসায় চলে আয়”।
“হুম”।
“কি হুম হুম করছিস? চলে আয় এখনই”।
“হুম”।
কি হয়েছে শামিমের? হুম হুম ছাড়া কিছু বলছে না! ফোন কেটে দিয়ে ত্রিনাকে ফোন করল ফাহাদ।
রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ ধরছে না। বাড়ির সামনে চলে এসেছে ফাহাদ। ড্রাইভারকে গাড়ি গ্যারেজে রাখতে বলে লিফটে চরল ফাহাদ। গুন গুন করে একটা ইংলিশ গান গাইতে গাইতে ৮তলা উঠে এল। এপার্টমেন্টের সামনে এসে কলিং বেল চাপল ফাহাদ।
২ মিনিট পেরিয়ে গেল। কেউ দরজা খুলছে না। আবার কলিং বেল চাপল সে। কি ব্যাপার? ত্রিনা আসছে না কেন, কাজের মেয়েটা কি করছে? দরজার নবে হাত রাখল ফাহাদ। আশ্চর্য ব্যাপার।
দরজা খোলা কেন? ধাক্কা দিতে দরজা খুলে গেল। আস্তে আস্তে ভেতরে একটা পা রাখল ফাহাদ। সমস্যা কি? ত্রিনা কোথায়? ত্রিনার নাম ধরে ডাকার চেষ্টা করল সে। কিন্তু অবোধ্য একটা শব্দ বের হল মুখ থেকে। মাথায় প্রচণ্ড জোরে কিছু একটা আঘাত করেছে।
চোখের সামনে পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে এল ফাহাদের।
জ্ঞান ফিরার পর বেশ কিছুক্ষন চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা লাগল। মাথা ঝাঁকিয়ে দৃষ্টি পরিস্কার করার চেষ্টা করল সে। মাথায় যেখানে আঘাত লেগেছে সেই অংশে প্রচণ্ড বাথা। একটু পর সে বুঝতে পারল কোথায় আছে! এটা তার বাসার স্টোর রুম।
নড়া চড়ার চেষ্টা করতেই বুঝল হাত পা বাঁধা। সামনে কেউ একজন বসে আছে। গায়ে ওভার কোট, মুখটা হুড দিয়ে ঢাকা।
“কে তুমি? আমাকে বেঁধে রেখেছ কেন?”
লোকটা কেমন যেন যান্ত্রিক কণ্ঠে বলতে লাগল, “এই স্টোর রুমে একটা গোপন কম্পার্টমেন্ট তৈরি করেছি আমি। সেখানে এখন তোমাকে ঢুকিয়ে তালা মেরে দেব।
তারপর চাবিটা ফেলে দেব ড্রেনে। ভাসতে ভাসতে সেটা ম্যানহোলে গিয়ে পড়বে। সেখান থেকে আবার ভাসতে ভাসতে একসময় হারিয়ে যাবে বুড়িগঙ্গার বুকে”।
আতঙ্কিত বোধ করল ফাহাদ। চেঁচিয়ে বলল, “ত্রিনা কোথায়?”
“আহ, চিৎকার করোনা।
মেয়েটা ঘুমুচ্ছে”।
“কি বলছ তুমি? কেন এমন করছ? কি উদ্দেশ্য তোমার? কত টাকা চাও...” আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল ফাহাদ। কিন্তু লোকটা এগিয়ে এসে তার মুখে একটা টেপ লাগিয়ে দিল। "আর কোনও কথা নয়। চল তোমাকে তোমার আসল ঠিকানায় নিয়ে যাই"।
হাত পা ছোড়া-ছোড়ি করার চেষ্টা করল ফাহাদ। কোনও লাভ হলনা। শক্ত দুটো হাতে তাকে দাড় করাল লোকটা। প্রায় টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেল একটা বুক শেলফের কাছে। তারপর বুকশেলফের পেছনে কিছু একটা ধরে তান দিতেই দেয়ালের গায়ে একটা ফোঁকর সৃষ্টি হল।
অবাক হয়ে গেল ফাহাদ, কেউ বলে না দিলে ধরাই যাবেনা এখানে একটা গোপন কুঠুরি আছে! ধাক্কা দিয়ে তাকে ভেতরে ফেলে দিল লোকটা। প্রানপনে চিৎকার করার চেষ্টা করল সে। লোকটা কুঠুরি আটকে দিচ্ছে! যান্ত্রিক কণ্ঠে বলল, “তোমার নিশ্চই জানতে ইচ্ছে হচ্ছে কে তোমাকে তোমার বাড়িতেই চিরতরে আঁটকে রাখছে?”
ফাহাদ ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে থাকল। লোকটা মুখের ওপর থেকে হুড সরিয়ে নিল। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারল না ফাহাদ! মনে মনে বলল, “এটা কীভাবে সম্ভব? নিশ্চয়ই আমি ভুল দেখছি।
না না এ হতে পারেনা!” আর বেশি কিছু ভাবতে পারল না সে। তার আগেই কুঠুরি আঁটকে গেল। নেমে এল নিকষ কাল অন্ধকার।
***
একটা অস্বস্তি নিয়ে ঘুম ভাঙল ত্রিনার। মনে হল কেউ একজন তার দিকে তাকিয়ে আছে।
ঝট করে ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখল বিছানার পাশে ফাহাদ বসে আছে। মৃদু হাসল ত্রিনা। “কি ব্যাপার? তুমি এখানে বসে আছ?”
“তোমাকে দেখছিলাম। ঘুমন্ত অবস্থায় তোমাকে অপ্সরীর মত লাগে”।
হাসিটা ধরে রেখেই ত্রিনা বলল, “তুমি আমাকে এত ভালবাস কেন?”
ঝুঁকে এসে ত্রিনার কপালে একটা চুমো খেল ফাহাদ।
বলল, “এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই”।
ত্রিনা উঠে বসল। দুহাতে ধরল ফাহাদের একটা হাত। “তোমার মত মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। আমার মত ভাগ্যবতী এই পৃথিবীতে কেউ নেই”।
ফাহাদ বলল, “একটা প্রশ্নের জবাব দেবে ত্রিনা?”
“কি প্রশ্ন?”
“আমাকে কি তোমার ভীতু বা কাপুরুষ বলে মনে হয়?”
ত্রিনা ফাহাদের গলার ক্ষতচিহ্নটা হাত দিয়ে স্পর্শ করল। “এত ভয়ানক একটা এক্সিডেন্টের সাথে যুদ্ধ করে তুমি আমার কাছে ফিরে এসেছ। কে বলেছে তুমি কাপুরুষ? তুমি আমার দেখা সব চেয়ে সাহসী মানুষ”।
ফাহাদ দুহাতে ত্রিনার গাল স্পর্শ করল। গভীর আবেগে ত্রিনার চোখে পানি চলে এল।
সেই চোখে আছে অনন্ত সুখের আহবান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।