সকাল আর আসেনা গোলাপ হয়ে ফোটেনা কিশোরীর হাতে জানিনা কেন আমি আমার আরাধ্য তরলের সন্ধানে অনবরত মানুষ খুঁড়েছি। যদি প্রথমেই মেনে নিতাম-
আমি যা চাই তা পাবার নয় তাহলে হয়ত এতটা কষ্ট স্বীকার না করলেও চলত। আমার মনে পড়ে সেই প্রথম পরমা এক মানবীকে খুঁড়ার কথা। জীবনে যা কিছু প্রথম, ভুলা যায় না। আজ সে গল্পই করবো।
হয়ত কোথাও ভ্রমণে বের হয়েছিলাম। আমার ঠিক মনে নেই। হতে পারে নদী কিংবা সাগর। যেহেতু আজন্ম তৃষ্ণার্ত, আমার জলের প্রতিই লোভ। ভাবি এ হয়ত তৃষ্ণা মেটাবে।
আমি তাকে দেখে মুগ্ধ হই। তাকে দেখে কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম সে বলতে পারব না। কতক্ষণ দাঁড়িয়ে তাকে কেন্দ্র করে ঘড়ির কাটার মত ঘুরেছি তাও না। আমার আরাধ্য তরল তার মাঝেই পাব বলে ভুল করে ভুল ভেবেছিলাম। প্রথম দর্শনে আমি তাকে বলেছিলাম আপনি অগাধ জল সমৃদ্ধ এবং সুন্দর।
কিছুটা ভ্রু কুঁচকিয়ে তাকালো। পরক্ষণেই হেসে বলল আপনিতো অনেক সুন্দর এবং স্মার্টলি কথা বলেন!কাব্য করেন বুঝি?আমি মনে মনে বলি না আমি মানুষ খুঁড়ি। তারপর তার সাথে আরোও অন্য কোনদিন দেখা করার বায়নানামা নিয়ে চলে আসি। সেদিনের মত ।
আমাকে বিশ্বস্ত ভেবে তারপর যতবারই দেখা হয়েছে ততবারই সে সহসা তার ডালপালা মেলতে থাকে।
ভরসা পেলে হয়ত শিকড়ও গজাতে চাইবে কিংবা চাইবে না। অবশেষ আমি আমার পরিকল্পনা মত কাজ করতে থাকি। প্রথম দিন শুধু ভাল করে তার বহিরাবরণটা খুলি। সে কিছুই জানতে পারে না। জানবে কি করে সে তার আদিখ্যেতা দেখিয়েই কূল পায় না!
সেদিন আর কিছুই করিনি।
আর কিছুই না।
অন্য আরেক দিনের কথা।
অন্য একদিন তার ডাল পাতা গুলো ভাল করে পরখ করি। দেখি পাতার আড়ালে কোথায় কোন লজ্জাবতী ফল লুকিয়ে আছে কিনা। পাতাগুলো কি বাতাসে বটপাতার মত তালি বাজায়?আমি কান পেতে শুনতে চেষ্টা করি।
আর দেখি তার শরীর নদীর মত কোথায় কিভাবে কতটা বাঁক নিয়েছে। দেখি আর তৃষ্ণার্ত হই।
আমি তৃষ্ণার্ত হতে থাকি।
তৃষ্ণা কেবল বেড়েই চলে।
তারপর!
তারপর একদিন তার শরীরের খাঁজগুলোতে ,ভাঁজগুলোতে শীতল ভাবে স্পর্শ করি।
মনে মনে প্রশ্নঃ কতটুকু জল রেখেছো হে আরাধ্য রমনী ?পারবে আমার তৃষ্ণা মেটাতে?তার পুরো দেখাবয়ব আমার চেনা হয়ে যায়। কাঠামোটা আমি ভালভাবেই বুঝে নিই।
আচ্ছা সে কি আমাকে বুঝতে পারছিলো কিছুটা? একবার মনে হয়, হয়ত পারছিলো। আর বার মনে হয় হয়ত পারছিলো না। কেন পারবে না তাকে তো বোকা মনে হয় না।
কিন্ত্ত ......
সেসব আজ আর কিছুই মনে পড়ছে না।
তবে বুঝতে পারি, মানুষ ইচ্ছে করে নিজেকে লুকোতে। ভিন্ন রং ধারণ করতে থাকে ক্ষণে ক্ষণে। নিজেকে সে অচেনাই রাখতে চায় । যেনো সে আরাধ্য হতে পারে ।
কেননা অচেনা জিনিসের প্রতিই আমাদের এত আগ্রহ। আর সে বড় ভুলটা করে সেখানেই। ক্রমাগত রং বদলাতে বদলাতেই সে তার আসল বর্ণ ধারণ করে। নিজেই বুঝতে পারে না। মানুষ জেনে যায় যে সে বর্ণচোরা।
যখন সে বুঝতে পারে মানুষ তাকে জেনে ফেলেছে তখন তার আর কিছুই করার থাকেনা।
কিছুটা হয়ত ফিলোসফি হয়ে গেল তাই না? হাহা...
তারপর আসে আমার আরাধ্য দিন। উত্তেজনায় আমার নার্ভাস সিস্টটেম চরমে উঠে। কিন্ত্ত আমি ভুল করি না। একজন নিখুঁত শিল্পীর মত তার প্রতিটি বাঁক ভাঙতে থাকি।
খুলতে থাকি তার শ্যাওলাপড়া পথের দরোজা । মরচে পড়ে কেমন যেনো খুলতেই চায় না। আমি আমার গন্তব্যে যেতে চাই। কিন্ত্ত যেতে পারি না। নানান পথের ধাঁধায় পড়ি।
অবশেষে বুঝতে পারি ছলনাময়ী এখানেও কিছুই রাখেনি। আঁকাবাঁকা পথ এঁকেছে। ধাঁধা ফেঁদেছে। কিন্ত্ত আমাকে ধোকা দেবার কথা ,আমি জানি বোকারাই ভাবতে পারে। ক্রোধ বেড়ে বেড়ে ক্রোধান্ধ হতে থাকি।
তবুও ভুল করি না।
খুঁজতে থাকি আরাধ্য তরল। বালিশ ছেঁড়া তুলোর মতো তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো এলোমেলো করি। আমার প্রবল আক্রমনে তার প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অবিন্যস্ত হয়ে পড়ে। অধিক সুখে সে কোন শব্দ করে না।
কেন তার এত সুখ আমাকে বোকা বানাতে পারবে ভেবেছে?
অবশেষে আমি তাকে চিড়ে ফেলি একটানে। আমার নিশানা বরাবর। যেখানে রয়েছে আমার আরাধ্য তরল। আমি জানি আমি ভুল করছি না। সেও জানে।
তবুও সে উচ্চ সুরে হাসে । অর্গাজম সুখে। আমি সেসবের তোয়াক্কা করি না। প্রবল তৃষ্ণা আমাকে কিছুই ভাবতে দেয় না।
আমার আরাধ্য তরল!
আমার তৃষ্ণা মেটাবো।
অনেক তৃষ্ণার্ত আমি।
ঐতো ওখানে টলমল করছে।
আমি পাপিষ্ঠ দুর্দান্ত যোদ্ধার মত দ্রুততায় ছুটি। অনেক দূর থেকে ঝাপিয়ে পড়ি সেই তরলে।
সেখানে আমার জিহবা ঠেসে ধরি।
মিটিয়ে নিতে চাই আজন্ম পিপাসা।
আর তখনই ।
আর তখনই।
ঠিক তখনই
বিষম তিক্ততায় পাথর হয়ে যাই। আমি কাঁপতে থাকি কিংবা আমি কাঁপতে থাকি না।
বিববিষা পেয়ে বসে।
আমি বৃক্ষ হয়ে যাই।
বজ্রাঘাতে মরে যাওয়া ,শুকিয়ে ডালপালা মেলে চিৎ হয়ে থাকা একটা বৃক্ষ।
একটা শুকনো খটখটে বৃক্ষ।
কিন্ত্ত খুঁড়াখুঁড়ি আমি ছাড়তে পারিনি।
আমি অনবরত খুঁড়েছি। তারা ---,---,---,--- ,---। আরাধ্য তরলের অসীম তৃষ্ণায় উদভ্রান্ত হয়ে। সে তরল যতই সুপেয় হবে ভাবি ঠোঁট ছুঁয়ে ঠিক ততটাই তেতোয় বুঁদ হয়ে গেছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।