জানুয়ারী ৩, '১৩
এক কাল ছিল, যখন বিলেতে গেলে বাঙালি জাতে উঠত, আই মিন বাঙালির প্রেস্টিজ বাড়ত, অভিজাতের কাতারে সামিল হতো। তখন ইংরেজ ছিলো 'রাজার জাতি' । তবে কিনা, এখন সেই রামও নেই আর সেই অযোধ্যাও নেই। তার উপর বিশ্বায়নের কল্যাণে পৃথিবী এখন এতই ছোট হয়ে এসেছে যে এমনকি কিছু অবস্থাপন্ন হলেই বাঙালি এখন দেশের কক্সবাজার - রাঙামাটির গন্ডি ছাড়িয়ে দেশের বাইরে ছোটে। তাই লন্ডন- আমেরিকা এখন আর আগের মত সমীহ জাগায় না।
তারপরও উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বাইরে যেতে আগ্রহী বঙ্গসন্তানের সংখ্যা কম নয়, আমিও তাদেরই একজন।
কিন্তু, যাবার রাস্তায় সেই চিরপুরাতন সমস্যা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে। মেয়ে -একা তাও অবিবাহিত অবস্থায় সেই হাজার মাইল দূর পাঠানো! নৈব নৈব চ! চিন্তা করতেই যে বাঙালির যাবতীয় রক্ষণশীলতার মূলে টান পড়ে। অনেক কষ্টে বাঙালি এখন ঘরের বউকে কর্মজীবি নারীরূপে মানতে শিখেছে- তাও খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। এখনও তো অফিসের মকবুল ভাই দেখি শিক্ষিত কিন্তু বিয়ের পর গৃহবধূ হয়ে থাকবে এমন বউ খোঁজে ।
আমার প্রাক্তন বসের স্বামী নাকি তার মেধাবী স্ত্রীর চাকরীর পেঅর্ডারের ফর্মগুলো ছিড়ে ফেলতেন। অনেক কষ্টে লুকিয়ে আবেদন করে তিনি এই চাকরিটা পান। এখন যে এই ধরনের স্বামীদের সংখ্যা কমছে সেটাইই আশার কথা- তা নারী অধিকার আন্দোলনের কারণেই হোক কিংবা দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতির কারণে একা সংসার চালানো ক্রমশঃই দূঃসাধ্য হয়ে ওঠার কারণেই হোক।
সে যাই হোক, সবসময় মেয়ে নয় , পরিবারে মানুষ হিসেবেই মূল্য পেয়ে এসেছি, আর এখন শুধুমাত্র মেয়ে বলেই বাইরের একটি ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়ার আজন্মলালিত স্বপ্ন পূরণ হবে না? দস্তুরমত জেদ পেয়ে বসল। আমি যাব এবং যাব একাই।
অবশেষে বাবামা নিমরাজী হলেন। কিভাবে যে তা হয়েছে বা কত ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় হয়েছে তাঁদের বোঝাতে তা আর বলে কাজ নেই।
ইতিমধ্যে প্রচুর মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন বেঁধেছে আরেক বিপত্তি। স্পনসরশিপের টাকা আঠাশ দিন রাখতে হবে ব্যাংকে, এখনও পুরোপুরি টাকার জোগাড়ই করা হয় নি। বিপিপির এদেশী্য় এজেন্ট জাহাঙ্গীর ভাই সকালে প্রায় ধমকে দিয়েছেন আমাকে, এভাবে চললে ডেডলাইন মিস হয়ে যাবে।
বেচারার জন্য মায়াই হয়, তার সংক্ষিপ্ত কর্মজীবনে আমার মত একটা ঝামেলাযুক্ত পাবলিক যে উনি কখনো দেখেননি ততে কোন সন্দেহ নেই।
আমি পড়েছি মাইনকা চিপায়। নিজে মাত্র বছরখানেকের চাকরিতে যে টাকা জমিয়েছি - তা সমুদ্রে বিন্দু জলমাত্র। কোনরকমে শুধু যাবার টিকেটই হবে আর কিচ্ছু হবে না। কাজে মন বসে না, একে হেড অফিস, তায় আমি নতুন বদলি হয়ে এসেছি -কাজের চাপ তাই এখনও আমার উপর তেমন করে পড়েনি, তাই রক্ষা, ব্রাঞ্চে থাকলে আমার খবর হয়ে যেত।
এমনিতে কাজে তেমন ভুল হয় না আমার, কিন্তু এখন অর্থসংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে টেনশনের কারণে সিলি মিসটেক করে সকাল থেকে বারদুয়েক বসের কাছে ঝাড়ি খেয়েছি।
এইসব টেনশান কারো সাথে শেয়ার করারও জো নেই। এমনকি সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু লিমার কাছেও না, কেননা সে আমাকে চ্যালেঞ্জ করেছে যে আমার মাবাবা একাকী আমাকে কিছুতেই বিদেশে যেতে দেবেন না। শেষমেষ যদি যাওয়া না হয়! এই অফিসেই তো আমাকে কাজ করতে হবে, নাকি?
যাই হোক আমার উৎকন্ঠার প্রহর শেষ হয়েছে অবশেষে। এক ফোনকলে জানলাম, অবশেষে পুরো টাকার ব্যবস্থা হয়েছে।
স্বপ্ন পূরণের দিগন্তরেখা এখন আর অতটা ঝাপসা নয়,বোধ হল আমার।
(চলবে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।