নভেম্বর ১০, '১৩ ইং
বহুদিন হয় আমার এই ডায়েরীর পাতাগুলো খালি নিঃসঙ্গ পড়ে আছে। প্রথম যখন শুরু করি তখন প্লান ছিল প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার লিখব। শুরু শুরুতে মোটামুটি তাও ধারাবাহিকতাটা কিছুটা ছিল । তখন বরঞ্চ বলার বিষয় ছিল কম। কিবোর্ড সামনে রেখে ভাবতাম, এবার কি নিয়ে লিখি? দিনে দিনে বলার বিষয় জমেছে অনেক কিন্তু অভাবটা এখন শুধু সময়েরই নয় ,সুযোগেরও।
পড়াশোনাতো ছিলই, তারপরে দুদুটো চাকরি আর মাঝখানের নেটবিহীন এক দুঃসময় কেটেছে আমর বহুদিন ধরে। বাড়িওয়ালার গদাধর যে ব্যাক্তি তাকে বলে কিছু লাভ হলো না। নানা ঝামলা পেরিয়ে অবশেষে সমাধান হলো , তবে অনেক দেরীতে।
আজকের যুগে মানুষ মনে হয় স্বাচ্ছন্দ্যে একদিন পানি খাবার বিহনে কাটিয়ে দিতে রাজি হয়ে যায়, কিন্তু অন্তর্জাল সুবিধাবিহীন দশটা মিনিট, নৈব নৈব চ। এই জালে যে আমি এত বাঁধা পড়েছি তা অভাবে না পড়লে বোঝা হত না।
কথায় বলে প্রেম বিরহে উজ্ঝ্বল মিলনে ম্লান, আমার নেট আসক্তি দেখলাম তার বেলায় কম যায় না!
সে যা বলছিলাম , মাঝে বলার কথা জমা হয়েছিল বিস্তর। এক ম্যাক মানে ম্যাক ডোনাল্ডের মাস দেড়েকের কাজ করার অভিজ্ঞতা দিয়েই একখানা বই লেখা সম্ভব। সবচেয়ে আগে একটা কথা বলে রাখি , এধরনের পার্টটাইম/ঘন্টা বেজড কাজের জন্য যতগুলো জায়গা আছে ম্যাক মানের দিক দিয়ে তার নিচের দিকেই আসবে । কাজ করতে গিয়ে সেই প্রথম দিকে দেখা পাওয়া এক বড়ভাইয়ের কথা বার বার মনে পড়েছে- সাবধান করে দিয়ে বলেছিলেন, আর যেখানেই হোক ম্যাকে কখনো কাজ নিয়েন না, খুব বাজে ধরনের কাজ ওটা। আমি করেছি তাই জানি ।
তখন বুঝিনি , কাজ করতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে ওনার কথার যথার্থতা বুঝতে পেরেছি। ম্যাকের নিয়ম হল শুধুমাত্র ফাস্ট সার্ভ করলেই হবে না, এমপ্লয়ি যেন কাজের একটা মুহুর্তও দাঁড়িয়ে না পার করতে পারে, প্রতিটা মুহুর্ত কাজে লাগাতে হবে, তা কাস্টমার থাক আর নাই থাক। খাবার দোকানের বেশীর ভাগেরই অবশ্যি দস্তুর এই, ম্যাক আরও সোয়া কাঠি বাড়া। কাজ নেই তো খামখা কিছু মুছতে থাকো, নিদেন মোছার ভান তো করতেই পারো।
অবশ্যি মাঝে ব্রেক টাইম আছে।
তা ছাড়া বাকি পুরো সময় -হতে পারে দশ বারো ঘন্টারও মত অবিরাম কাজ। বোধকরি যন্ত্রের কাছেও মানুষ এতটা আশা করে না। আমি কাজের শিডিউল পড়েছে উইকএন্ডে , তাও আবার ওভারনাইট। আমাদের স্টোরটা ২৪/৭ এর , তার মানে সপ্তাহে সাত দিন চব্বিশটা ঘন্টা খোলা । আমাদের মত যারা এখানে এধরনের তথাকথিত অড জব করেন সেগুলোর মাঝে ফুড স্টোরের কাজগুলোই সবচেয়ে কমন ,সংখ্যায় সবচেয়ে বেশী, কিন্তু মানের দিক থেকেও সবচেয়ে বাজে, মাইনেতেও।
তাও মানুষ করে- একে তো কাজের একান্ত অভাব , তার উপর শুধু এধরনের জায়গাগুলোতেই অনেক বেশী কর্মঘন্টা মেলে যা অন্য জায়গাগুলোতে মেলে না। বিশ ঘন্টার পারমিট নিয়ে চল্লিশঘন্টা কাজ করে চলেছে- এরকম বহুত মিলবে এখানে।
ম্যাক -তা যত বড় ইন্টারন্যাশনাল ব্রান্ডই হোক না কেন , তার মাঝেও এরকম অনিয়ম ব্যাপক হারে চলছে। একটা ম্যাকের-আমাদের ব্রাঞ্চ না, শুনলাম কিছু কিছু উপরের দিকের এমপ্লয়ি বাকি সবগুলোতে নিজেদের লোক বসিয়ে মহা আনন্দে ঘন্টার কোটা লঙ্ঘন করে ইচ্ছা মত কাজ দিয়েছে। রেগুলার বাকি এমপ্লয়িদের খবর নেই ,ওরা কোন শিডিউল পায় না।
কয়েকমাস এভাবে চলার পরে ধরা পড়ে, সবকটা বরখাস্ত হয়, কিন্তু এবার বিপত্তি বাঁধে অন্যখানে। দেখা যায় পুরনো এমপ্লয়ির নাম এমনকি রেকর্ড থেকে মুছে ফেলা হয়েছে, যারা ঐসব হোমরা চোমরাদের কেউ হয় না, তাদের একেবারে গায়েব করে কোন শিফটে কাজ না দেয়ার এক অভিনব উপায়। শুনলাম ঐ এমপ্লয়ির এখন আবার নাকি নতুন করে এপ্লাই করে আবার নতুন হিসেবে ঢুকতে হবে।
আমাদের এখানে এসব বিপত্তির সম্ভাবনা নেই। কেন জানেন? লোক এসে ধরার আগেই ব্রাঞ্চের লোকেদের কাছে পরিদর্শনের খবর চলে আসবে।
কি বঙ্গ কি বাহির খিড়কি দরজা ও খিড়কি গোপন চাবি- এই ব্যবস্থা সবজায়গাতেও আছে।
ম্যাকে ঢোকার আগে পরে আমাদের জন্য ফুড সেফটি , ক্লিনিং, ওয়ার্ক সেফটি এইসব বিষয়ক বিস্তর অনলাইন ট্রেনিং/পরীক্ষায় অবশ্যই অংশ নিতে হয়, বাধ্যতামূলক। কাগজে কলমে অন্তত কাস্টমার সেফটি ছাড়া আর বাদবাকি তেমন কিছুর অস্তিত্ব আমি বিশেষ দেখিনি। আমাদের কাজের অংশটুকু মহা বিপজ্জনক, নোংরা , পিচ্ছিল। সেখানে সেফটি ফার্স্ট থেকে বাহুল্য অংশ ঝরে গিয়ে রয়ে গেছে শুধু ফার্স্ট।
আরে ভাই যুগটাই তো শর্টকাটের,বাড়তি ঝামেলা নিয়ে লাভ আছে?
একদিন সহকর্মী রুশেন একেবারে চোখের সামনেই সাংঘাতিক পতন থাকে অল্পের জন্য বেঁচে গেল, পড়লে খবর ছিল। এই অভিঞ্জতা কমবেশী সবারই হয়ত আছে কেননা জায়গাটা আসলেও খুবই বিপজ্ঝনক।
পিছনের ময়লা ফেলার জায়গাটাও পাল্লা দিয়ে ভয়াবহ স্যাঁতস্যাঁতে ও অন্ধকার। আফগান সুলতান মাসে সাঝে নাইটে লবিতে কাজ করে, ঐ খানে ময়লা ফেলতে যায়, আমাকে বলেছিল সে নিজে ওখানে কয়েকবার পড়ে গিয়েছিল। তারপরেও মিলিয়ন পাউন্ড আয় করা ব্রাঞ্চটার পিছনের ঐ একটু জায়গায় একটা সামান্য বাতি লাগিয়ে দেবার কথা কারোরই মনে হয় না।
ম্যাকে কাজ করতে গিয়েছে অথচ পোড়া লাগে নি , ছ্যাঁকা খেতে হয় নি এরকম নজির নেই। বড় দুর্ঘটনাও হয়। কাগজের ভালো ভালো কথার বাইরে দুর্ঘটনার মাত্রা যতই বড় হোক না কেন কমপেনসেশন বলে তেমন কিছু নেই।
ম্যাকে আমরা যারা নাইটে উইকএন্ডে কাজ করি তাদেরর শিফট ভয়াবহ ব্যস্ততার , কষ্ট সাধ্যও বটে। একটা বড় কারন সপ্তাহান্তে ছুটিতে বাধভাঙা উল্লাস প্রিয় বিলাসী মানুষের দল।
এদের মাঝে নব্বুই শতাংশই যুবক যুবতি। একটু রাত হলে রাস্তা থেকে দেখতে স্টোরে এসে পৌঁছাই, দলে দলে পাব , বারগুলোর সামনে মদের গেলাস বা সিগারেট ফোঁকা দলে দলে মানুষ জনের ঢল নেমেছে। রাতভর ফূর্তি- মৌজ একটু কমলে একটু চটজলদি খবারের আশায় সামনেই থাকা আমাদের স্টোরে এসে ঢোকে। মাতাল পাবলিক সামলানো সহজ কথা না। খুব কমদিনই এমন পেয়েছি যেদিন কোন না কোন গ্রুপ দাঙ্গা হাঙ্গামা বাধায় নি।
মাসে সাজেই তুমুল লড়াই বাধায় ওরা নিজেরা নিজেরাই। হাতা হাতি তো আছেই, খাবার ছুঁড়ে দেয়াল- বাতির শেড একাকার, মিল্কশেক ছুঁড়ে মাড়া -সবই আছে। এমনকি কামড়া কামড়িও আছে।
কাউন্টারের বেড়ার পৃথক নিরাপদ দূরত্বে আমরা এ অবস্থাতেও এতই ব্যস্ত থাকি যে অনেক সময় টেরও পাই না সামনে দাড়ানো একঝাঁক কাস্টমারের হাউকাউয়ের আড়ালে এত সব কান্ড হয়ে গেছে। কাতারে দাঁড়ানো এসব লোকজনকেও বলিহারি, পিছনের মারামারিতে এদেরও কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই।
মানুষজন অবশ্য অবাক হয়, এত ভিড়ও হয় নাকি রাতের বেলায়? কারা আসে এমন অড টাইমে?তাদের জন্যে জবাব এই যে- আসে তো বটেই , এমনকি রেগুলার টাইমের চেয়েও ঘন্টাপ্রতি অনেক সময় কয়েকগুন বেশি আসে। সাধে কি আর এরা চব্বিশ ঘন্টা খোলা রাখে?কষ্ট -বেনিফিটের চুলচেরা হিসেব এরা ভালোই জানে ও মানে।
একবার এক মেয়ে এরকমই এক মারামারির শেষে আমদের কাছে টিস্যু চাইতে এল , অনেকেই তো চায়, -তাতে আর আশ্চর্য কি। তবে তারা তা চায় খাবারের পর হাত মুখ মোছার জন্যে , সে চাইছে মুখ থেকে রক্ত মোছার জন্য। মুখের দিকে ইশারা করতে ,ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম মারামারিতে ঠোঁট কেটে রক্ত বেরিয়ে এসেছে।
ওদের আরেক সঙ্গিনীর অনাবৃত রক্তাক্ত পিঠে একজায়গায় মনে হয় কেউ কামড়ে কেটে এনেছে- এমন এক অংশ। তারপর যা হয়, ম্যানেজার এমনকি মাঝে মাঝে খোদ কাস্টমার কর্তৃক ডেকে আনা পুলিশে পুলিশে অতরাত্রেও স্টোর পরিপূর্ণ , সে এক হুলুস্থুল অবস্থা।
ওদের মাঝে বেশ কিছু মহিলা পুলিশও আছে। ওদের যতই নারীদেহ ব্যবসায়ী বলে গাল দেই না কেন, নারীর জন্য দিনরাত্রী এরকম সুরক্ষিত কর্ম পরিবেশ কি আমরা দিতে পেরেছি? নিজে নাইটশিফটে কাজ করেও দেখছি, পরিশ্রমের বেলায় যেমন নারীপুরুষের তেমন ভেদ নেই, তেমনি নেই নিরাপত্তাতেও। স্টোরের ভেতরে কোথাও অন্তত কোন বিপত্তির শঙ্কা নেই।
তা না সহকর্র্মীদের দিক থাকে আর না বাইরের লোক জনের দিক থেকে।
সে যাই হোক , পুলিশ ডেকে আনার কিছুক্ষণ পরেই সব ভোজ বাজির মত উধাও, দাঙ্গারত ক্রেতা আর পুলিশ উভয়েই। তারপর আবার সব চলতে থাকে আগের মত, যেন কিছুই হয়নি। আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ি নিজ নিজ কাজে । অবশ্য কাস্টমারদের কোল্ড ড্রিঙ্কস , মিল্কশেকের অবশিষ্ট যা কিছু ছিল মারামারির স্মৃতির অবশিষ্ট রূপে তাও পরিষ্কার করার বাড়তি দায়িত্বটুকু তো থাকেই।
উইকএন্ডের রাতগুলো কিভাবে চোখের সামনেই এই করতে করতে ভোরে পরিণত হয়।
এই কয়দিনের কাজেই আমি মজার কিছু ক্যারেক্টারের দেখা পেয়েছি। কতকগুলো রাতের অতিথি আমাদের কাস্টমার আছে যারা একটা কোকের গ্লাস বা বারগারেরর মিল সামনে নিয়ে অবলীলায় পুরো রাত ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয় ম্যাকে বসে। এই যে এই ধুন্দুমার মারামারি এতেও ওদেরও নিশঙ্ক শান্তির ঘুমে কোন ব্যাঘাত ঘটে না। আমি লবি সাফ করতে করতে চোখেমুখে একটু হিংসা নিয়ে ওদের দিকে তাকাই, আমরা এখানে রাতের ঘুম হারাম করে তুমুল কাজ করছি আর এরা কি নিশ্চিন্তেই না ঘুম দিচ্ছে!
একজন বয়স্ক লোককে দেখলাম- ক্রসওয়ার্ডের পাজল নিয়ে এসে বসে বসে কয়েক ঘন্টা ধরে সলভ করছে।
সেও মোটামুটি রেগুলার। শুরুতে শুরুতে দেখে অবাক হতাম, এখন আর হই না। আরেকদিন এক "ভদ্র" লোকের দেখা পেলাম। ড্রাগসট্রাগস মনে হয় সাথে কিছু ছিল , তাই নিচ্ছে। চোখে বিচিত্র ঘোলা দৃষ্টি।
সামনে একটা কোল্ডড্রিংসের গ্লাস রাখা। ঐ নিয়ে বসে আছে ঘন্টার উপর কোনের একটা টেবিল দখল করে। আমি তো তখন নতুন অতকিছু বুঝি নি। ভেবেছি নরমাল কাস্টমার।
একসময় সে ঝুটা ড্রিঙ্কভর্তি শেক গুলো ঘাটার সময় ম্যানেজারের জেরার মুখে পড়লো।
ম্যানেজার আমাকে জানালো, ঐ লোকটা এ্তক্ষণ সামনে পানীয় নিয়ে বসে বসে ভান করছিল সে ওগুলো কিনেছে, আসলে স্রেফ নেশা করছিল। ওকে সে বের করে দিচ্ছে স্টোর থেকে , আবার যদি ঢুকতে দেখি যেন অবশ্যই ওনাকে জানাই। আজব ব্যাপার, লোকটা আবার দেখি কিছুক্ষণের মাঝেই এসে আবার ক্রেতার কাতারে দাঁড়িয়েছে। ম্যানেজারকে জানালাম, সে এসে বের করে দিল , ফের। ওমা আবার দেখি হাজির।
এভবে বার বার তিনবার। ম্যানেজার তো এক্কেবারে ক্ষেপে লাল।
কিছু কিছু তরুন তরুনী দেখি প্রতি সপ্তাহেই মুখে রং মেখে টেখে নানা প্রাণীর সাজে , একেবারে কার্টূন বনে হাজির হয়। শুরুতে শুরুতে ভাবতাম ওদের কিছু উৎসব চলছে নাকি?জিজ্ঞেসও করতাম। না তেমন কিছু নয়।
এখন দেকে দেখে অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। প্রতি উইকএন্ডে তো আর কোথাও উৎসব থাকে না। তবে এরকম বিচিত্রবেশ ধারী নরনারীর দেখা প্রতি সপ্তাহেই পাই। বিশাল একটা বিড়ালের বেশধারী তরুন,সাথে মুখে লাল লিপস্টিক কিংবা কি রং আল্লাহ্ জানেন দিয়ে মোচ আঁকা তরুনী। জড়াজড়ি করে কখনো কখনো দোকলা, কখনো বা বিশাল এক গ্রুপ এসে ঢোকে।
সামনে একগাদা অর্ডার করা খাবার দাবার, যার একটা বিশাল অংশ থেকে যায় না খাওয়া -যখন ঘন্টা দেড়েক পড়ে ওরা বেরিয়ে চলে যায়। খাবারে একটা বড় অংশ একেবারে এমনকি না ছোঁয়া, ড্রিংক্সের বোতল দেখলে মনে হয় একদম খোলাই হয়নি। অথচ খাবার নেয়ার সময় চুলচেরা তো বুঝেই নেয়, যেন রাক্ষুসে ক্ষিধে পেয়েছে। কয়েকটা করে নানা জাতের সসের টাব চেয়ে নেয়, যা প্রায়ই অব্যবহৃত অবহেলিত পড়ে থাকে।
এইধরনের এক একটা গ্রুপ আসে আর আমার বুক ঢিপ ঢিপ করে, কারণ আর কিছুই না , প্রায় সময়ই এই গ্রুপ গুলোতে যারা আসে, মারামারি যারা করে তারা তো করেই, না করলেও একরাশ কোক , খাবার দাবারে টেবিল, মেঝেতে ঢেলে পুরো সয়লাপ করে দিয়ে যায়।
এগুলো পরিষ্কার করা কি চারটিখনি কথা! আরও মজার ব্যাপার - পরিষ্কার করার আগেই -যতই আরও খালি জায়গা পরে থাকুক, পরবর্তী দলটা এসে বসবে ঠিক ওখানটাতেই। অথচ আশে পাশে তো পরিষ্কার টেবিলের অভাব নেই। এদের কি নোংরা থাকার বেলায় একধরনের ন্যাক আছে কি না জানি না। মহা আজব কান্ড!
ওভারনাইট শিফটে এইসব মাতালের যন্ত্রণা , অন্য অন্য দিনের তুলনায় অনেক বেশী কাজের চাপ ও রাতের স্বাভাবিক ঘুম নষ্ট ইত্যাদি ইত্যাদি কারণে মানুষ কাজ করতে চায় না সহজে। তাই যারা আসে তাদের অনেকেরই শিফট বারো ঘন্টারও বেশী হয়ে যায় মাঝে মাঝে ।
সাধে কি বলে, যে ম্যাকে যারা কাজ করে তার নাকি যেকোন জায়গায় কাজ করতে সক্ষম, আরো শুনেছি এরা নাকি রোবট। আমারতো মনে হয় রোবটেরও বাড়া।
তবে ওভার নাইটে কাজ করে যে আজব আজব চরিত্রের দেখা পাওয়া যায় তা মনে হয় না দিনে কখনো পাওয়া যেত।
উইকএন্ডের রাতগুলোতে যারা আসে -প্রায়শই নবীন যুবক যুবতির দল, তদের বিলাসী অপব্যায়, বল্গাহীন অনাচার , মদ্যোন্মত্ত চালচলন দেখে মনে একটা প্রশ্নই বারে বারে জাগে, জীবন গঠনের সবচেয়ে দামী সময়টার কি অপব্যবহার!এই উদ্যমী জীবনীশক্তির কি নিদারুন বিনাশ! এৃমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। অন্তত এদের এই হরতাল অবরোধ বিহীন সুস্থ দেশটাতে যেখানে দেশকে এগিয়ে নিতেই সবাই ব্যস্ত,আমাদের মত পিছিয়ে নিতে না, আমদের দেশের বিবেক হীন রাজনীতি এখানে অনুপস্থিত ,সুযোগ সুবিধার ছড়াছড়ি চারিদিকে, সেখানে এমন হবে কেন?
ঘুমন্ত বা নিরলস জেগে পুরো রাত সামনে ক্রসওয়ার্ডের পাজল নিয়ে নিয়ে বসে থাকা লোকগুলোকে দেখলে মনে হয়, আপাদমস্তক গৃহহীন নিঃস্ব।
যেন এই বিশাল পৃথিবীতে ওদের জন্য ঘরের সুশীতল ছায়া নিয়ে কেউ কোথাও অপেক্ষা করে নেই। মনে অকারন বিষাদ ভর করে। এই যে খাবারের বাহানা নিয়ে শুয়ে বসে থাকা মানুষগুলো আসে -বেশ প্রৌঢ় থেকে একেবারে টিনএজ কিশোর কিশোরীরাও। যখন তারা এখানে অকাতরে ঘুমাচ্ছে,বাড়িতে কি তাদের মায়েরা বাবারা তাদের জন্য নির্ঘুম রাত কাটায় না? নাকি তারাও অন্য কোনখানে বিলাস ব্যাসনে পূর্ণ পার্টিতে ব্যস্ত? ঘরের টান হয়তবা তাদেরও নেই।
রেজওয়ানা আলী তনিমা
১২/১২/২০১৩ ইং
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।