আগস্ট ৮, '১৩ ইং
বিলেত যে সুন্দরী তা গ্রীষ্মকাল অর্থাৎ এদের ভাষায় সামারটাইমে যতটা বোঝা যায় ততটা আর কখনও নয়। আমার সামনের কঙ্কালসার ন্যাড়ামুড়ো গাছটা দেখলাম গরমের আগমনের সাথে সাথে সবুজ শোভায় ছেড়ে গেল। জানালার সামনে সে তার নবযৌবনের আনন্দে হালকা বাতাসে দোলে। বেশ একটা পর্দার ব্যবস্থা করে দিয়েছে যাইহোক। বিশেষ করে লন্ডনের খেয়ালি হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে থেকে থেকে চকচকে সজীব হয়ে ওঠে।
লন্ডন সত্যিই রূপসী -তা এই সময়টাতেই আমি বুঝেছি। চারিদিকে সবুজের ছড়াছড়ি যেগুলো দুদিন আগেও এরকম ছিল না-
বিলেতকে ঈশ্বর বছরের অর্ধেক -প্রায় সৌন্দর্যবিহীন ধূসর রাজ্যে পরিণত করে রাখেন বলেই হয়ত বাকি ছমাসে কড়ায় গন্ডায় পুষিয়ে দিয়েছেন। বিলেতের আবহাওয়া আমার একেবারে না পছন্দ,একে ত পুরোপুরি খেয়ালি শিশুর মত-এই রোদ ,এই বৃষ্টি ,এই বর্ণহীন মন খারাপ করে দেওয়া আকাশ জোড়া মেঘ। চরম বিরক্তিকর। তারপর মেঘের ভাগটাই বছরের বিশেষ লম্বা একটা সময়ে পুরো দখল করে রাখে।
আমার ঝকঝকে সমুদ্রনীল আকাশ ভালো লাগে, পূর্ণিমা চাঁদের বা ঝমঝম বৃষ্টির কবিত্ব আমার একেবারে নেই। রাত্তিরে বৃষ্টি দেখলে বড়জোড় একটা সুনিদ্রাকর্ষনের সম্ভাবনায কিছু পুলকিত হই এই যা- বঙ্গদেশের বঙ্গসন্তান চিরঝলমল সূর্যের দেশ থেকে এসে না এখানের শীত সহ্য হয় আর না এখানের কালচে ধূসর মেঘরাজি। পুরো মনকে স্যাঁতস্যাঁতে বিষন্ন বানিয়ে তুলতে ঘোলাটে মেঘের দলই যথেষ্ট।
গ্রীষ্মের সাথে সাথে আকাশের এই মেঘরা কিছু ক্ষনিকের অতিথি হয়ে পড়ে-প্রখর রোদের রাজত্ব চারিদিকে। মাঝে কিছু দিন তো এমনকি ফ্যানের জন্য হাহাকের পড়ে গিয়েছিল।
হোক গরম তাও আমার কাছে আমার সুর্য্যিমামাই ভালো।
বিলেতকে একটা পুর্বকালীন শহর বলে অনায়াসে চালানো যায় এখনও, বাড়িঘরগুলো শত শত বছরের ঐতিহ্য ধরে আছে। দেখলে মনে হয় এই যে কোন ঘর থেকে হয়ত হাতে পাখা দোলাতে দোলাতে বেরিয়ে আসবে কোন গাউন পরা তরুনী। পথ দিয়ে যাবে কোন ঘোড়ায় টানা গাড়ি। অবিকৃত দূর্গগুলো থেকে ঘোড়ায় চড়ে দুলকি চালে বেরিয়ে আসবে কোন ঝকঝকে বর্মসজ্ঝিত নাইট।
ভিতরে অবশ্য অত্যাধুনিক যন্রপাতিতে ভর্তি। বেরসিক জিন্স-টপ/টিশার্ট পরিহিত মানুষজন বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলে প্রাচীন শহরের মোহভঙ্গ ঘটে । রাস্তাঘাটে ঝা চকচকে বিএমডব্লিউ, মার্র্সিডিজ- কতকগুলো ধুমসে হুড খুলে উচ্চস্বরে ধুমধারাক্কা গান বাজাতে বাজাতে চলেছে- এই অবস্থায় বেশীক্ষণ প্রাচীন ষোল সতের শতকে পড়ে থাকা যায় না , এক ঝটকায় আবার ফিরে আসতে হয় একবিংশ শতাব্দীতে। মনে পড়ে যায় আমি এখন দুহাজার তেরতে আছি, ভিক্টোরিয়ান যুগে নয়। এই বাড়িঘরগুলোও মূলত এদেশের বর্ণবিহীন একঘেয়ে আবহাওয়ার মত নব্বই ভাগই ভয়াবই বর্ণহীন,অনুজ্জ্বল -ধূসর,লালচে মেরুন এইসব রং-এর বাইরের দিকটা।
টিপিক্যাল আবহাওয়ায় ভূতুরে পরিত্যাক্ত শহরের মত লাগতে থাকে ।
রোদ ভরা গ্রীষ্মে আবার তার অন্য রূপ-পুরো সাজানো গোছানো শহরটাকে ছবির মত সুন্দর লাগে, প্রকৃতি যেন হেসে ওঠে। একই জায়গা রোদ ছায়ার পালাবদলে কি আশ্চর্য বদলে যায়!
নানা অদ্গূত সুন্দর ফুল ফুটে ফুটে পুরো শহরটাকে ছেয়ে ফেলে। এদের ফুলের অবাক গুন হল প্রায় বিনা বা অল্প যত্নে দারুন ফোটা। অনেক বাড়িতেই আগাছা ভরা জংলা ঝোপঝাড়ে সবার অলক্ষ্যে সগর্বে ফুটে থাকতে দেখেছি গোলাপসহ নানা বনেদী ফুলকে।
গাছ ভরা এসব দারুন সুন্দর বিশাল বিশাল আকারের গোলাপ, মুঠো ভরে যায়। শুধু গন্ধ নেই তেমন- আমার দেশের ক্ষুদে ক্ষুদে এমনকি হতশ্রী শুকনো পটাকা গোলাপেও যা থাকে। আল্লাহ্ এদের এত রূপ দিয়েছেন বলেই বোধকরি এতখানি গন্ধহীন রেখেছেন, সবাইকেই তিনি কিছু অপূর্ণতা দিয়েই রাখেন-না হলে যে তার দেমাগ বড় বেড়ে যেত।
এরা জাতি হিসেবে দারুন শৌখিন- বাড়ি ঘরগুলো , এমনকি ক্ষুদে পাতি দোকানগুলো, রাস্তার মোড় ফুলের ঝুড়ি দিয়ে দারুনভাবে সাজানো। অবশ্যি এই ফাঁকে চুপি চুপি বলে নেই- সবগুলোই কিন্তু আসল নয় ।
কিন্তু একেবারে না ছুঁয়ে বলার উপায় নেই এতখানি জীবন্ত লাগে। আমাদের দেশে আর্টিফিশিয়াল ফুলের বিশাল বাজার- নিউমার্কেট এলাকায় দেখেছি । কৃত্তিম ফুলগুলো দেখে মনে হত এরকম আশ্চর্য সুন্দর ফুলগুলো কি কোথাও ফোটে? এখানে ঐরকম ফুল বহু দেখে দেখে বুঝলাম ওগুলো কোথাকার ফুলের অনুকরনে তৈরী হয়ে থাকতে পারে! মাঠে ঘাটের ফুলও আছে বিস্তর, ওগুলোর কুলীনকুলে দাম নেই সত্যি কিন্তু নিজের কাজে কম যায় না, ঘাসে ভরা মাঠঘাটগুলো কুচি কুচি সাদা হলুদ ফুলে ছেয়ে আছে-দারুন লাগে দেখতে।
গ্রীষ্মের গুনকীর্তন অনেক করলাম , যে ফুলগুলো আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে তার কিছুর ছবি দিলাম এখানে, গ্রীষ্মের প্রথমভাগে দেখা কিছু ফুল এবারের মত বিদায় নিয়ে গেছে, কিছু আবার নতুন করে চোখে ধরা দিয়েছে। দামী ডিএসএলআর নেই ,মনে হল তার দরকারও নেই।
আমার ফুলঅনুরাগী চোখে অন্য অন্য সব ফুলঅনুরাগী ব্লগবন্ধুদের জন্য যেটুকু ধরা পড়েছে ঔটাই তুলে এনেছি। ফুলের নাম জানা নেই, সুযোগ , চেষ্টা ইচ্ছাও বিশেষ ছিল না,বিশেষত যে উপায়ে ছবিগুলো ফুল চোখে পড়তেই বন্দি করে নিয়েছি, সেই উপায়ে নামগুলো সংগ্রহ করার সুযোগ ছিল না বলাইবাহুল্য। জ্ঞানের চোখে না দেখে শুধু মনের চোখেই দেখেছি, তাই - এই দিক আমার ব্লগটার একটা অপূর্ণতা রয়েই গেল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।