আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেক্যুলারিজম

প্রকীর্ণ করি অর্ণে আলোক বিসর্গী বীথিকায় সেক্যুলারিজম মানবতার ধর্ম, যা ইহজাগতিকতাকে; এর উত্তমটুকুকে জড়িয়ে আছে। এর কাজ সকল সংবেদনশীল প্রাণের কল্যাণকে ঘিরে আবর্তিত হয়, কেননা এটি বিশ্বাস করে প্রত্যেকটি প্রাণ এক নৈর্ব্যক্তিক উপায়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধিকারের একটি স্পর্ধিত ঘোষণাপত্র। সেক্যুলারিজমের কাছে উপাসনালয়ের জড় আসনগুলোও যাজক অপেক্ষা শ্রেয়। এর ভাষ্য- যারা ভার আপনার স্কন্ধে তুলে নেয়, মোক্ষ তাদেরই।

পৃথ্বীর সভ্যতা ও অর্থনীতি যাদের মেধা, ঘাম ও রক্তের ঋণে বাঁধা, ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণের রাজমুকুট বসবে তাদেরই শিরে। এটি ধর্মীয় নির্যাতনের; উৎপীড়নের বিরুদ্ধে একটি সুস্পষ্ট প্রতিবাদ। এর সরোষকণ্ঠ যাবতীয় অতিলৌকিকতা- আধিভৌতিকতার দাসত্বের বিরুদ্ধে, ধর্মজুজুর প্রতিনিধিদলের বিরুদ্ধে। আর এমন একজনের জন্যে এ মহামূল্য জীবনটাকে স্রেফ অপচয় করার বিরুদ্ধে, যার সঙ্গে আমাদের আদৌ পরিচয় নেই। এটি বরং ঐ সমস্ত কল্পিত ঈশ্বরদের নিজ নিজ দেখভালের পরামর্শ দিয়ে থাকে।

সেক্যুলারিজম সহজাত; সাধারণ জ্ঞানবুদ্ধির অপর নাম। এটি জয়ধ্বনি করে, সেই একদানিম্ন প্রাণটির একটি প্রত্যাশিত-অনিবার্য-বোধগম্য অভিযোজনের এবং উত্তরণের, যা তাকে ক্রমশ একটি উচ্চতর প্রাণে বিকশিত করেছে। এটি এই পৃথিবীর বুকেই একটি স্বর্গীয় আবাস গড়বার প্রতীতিতে বিশ্বাস রাখে। কোন অজানা অতিপ্রাকৃতের সাহায্যের চেয়ে এটি বরং আস্থা রাখে প্রাণের দুর্দমনীয় টুকরো টুকরো প্রচেষ্টা, শক্তি, বুদ্ধিমত্তা, পর্যবেক্ষণক্ষমতা আর লব্ধ অভিজ্ঞতার ওপর। আশা করে সবাই কবরের এপারেই সুখী হবে।

ওপারে নয়। সেক্যুলারিজমের অপর নাম খাদ্য, বেঁচে থাকার নিমিত্তে উত্তাপ, আশ্রয়, পরিধেয়, যুক্তিপূর্ণ কাজ- যুক্তিযুক্ত অবসর, সুরুচির চর্চা, সদজ্ঞানের অর্জন, এবং সৎশিল্পের রসাস্বাদন। এটি মানুষের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ও স্বাধিকারের বুদ্ধিবৃত্তিক জয়, সর্বোপরি- মুক্তি বয়ে আনবার জন্যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এটি রদ করে দেয় ধর্মীয় সংকীর্ণচিত্ততা, জাতিগত বিসংবাদ, আন্তঃধর্ম ঘৃণার ফুঁৎকার! এর মূলমন্ত্রটি উচ্চারিত হয় বন্ধুত্বের চর্চা এবং প্রজ্ঞাবৃত্তিক আতিথেয়তাকে ঘিরে। এটি অপরের তরে বেঁচে থাকার তাগিদ দেয়, অতীতের পরিবর্তে বর্তমানের ছবিটি এঁকে দেয়, কোন এক অদেখা বিশ্বের পরিবর্তে বুঝিয়ে দেয় অত্র বিশ্বটিকে।

এটি ‘আমাদের’ মত প্রকাশের পূর্ণ অধিকারের বজ্রবাক্যটি ঘোষণা করে, কোন অলীক ঈশ্বর বা তাদের স্বঘোষিত প্রতিনিধিদলের নয়। এর সোচ্চার কণ্ঠটি বলে দেয় ঐ সমস্ত নির্লজ্জ অলসদের খেটে খাওয়া সৎ মানুষের ওপর ছড়ি ঘোরাবার কোন অধিকার নেই! সেক্যুলারিজম ঐ সমস্ত ধর্ম ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় ধ্বস নামিয়ে দেয় যারা অদেখা এক কল্পিত পরলোকের ভয় দেখিয়ে সতত আড়ালে লুটপাটে মত্ত! এটি মানবাত্মার নির্মল প্রশান্তি আর তুষ্টির এমন এক ফাগুন হাওয়া ছড়িয়ে দেয়, যা নিভিয়ে দেয় ঐ নরকাগ্নিটিকে। সেক্যুলারিজম প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলে তাবৎ হিংস্রতা, অনৈতিকতা, মূঢ়তা-মূর্খতা, দারিদ্র আর জ্বরার বিরুদ্ধে। এটি উপস্থিত বর্তমানটিকে নিয়ে, সতত আগত ভবিষ্যতটিকে ঘিরে বাঁচে, বাঁচায়। এটি প্রার্থনা ও গ্রহনে বিশ্বাস করে না।

বরং বিশ্বাস করে অর্জনের উপযুক্ততায়। এটি কাজকে দেখে অর্চনা রূপে, শ্রমকে প্রার্থনারূপে, জ্ঞান ও প্রজ্ঞাকে রক্ষাকর্তা রূপে। মানুষকে উপদেশ দেয়, আপনাকে শাণ দাও যাতে অপরের ত্রাণে সমর্থ হও! জীবনকে সুসজ্জিত কর সৎকার্যের অমূল্যরত্ন দ্বারা, যেখানে বন্ধুত্ব আর ভালবাসা রয় পথের আলোকবর্তিকা হয়ে! সেক্যুলারিজম একটি ধর্ম। সেই ধর্ম- যা বোধগম্য। এখানে নেই কোন ধোঁয়াটে কথামালা, কোন হেঁয়ালি, কোন ধর্মগুরু, কোন ধর্মোৎসব।

নেই কোন নিগ্রহ, নিপীড়ন। এটি কল্পবিজ্ঞানের ললিতপ্রশ্রয়ক্ষেত্র, যা বুনে যায় আগামীর বীজ। এটি সারাবিশ্বের কাছে এ বার্তাটি পৌঁছে দেয়, -কাজ করে যাও, যেন তুমি অন্ন পাও, বস্ত্র পাও! -কাজ করে যাও, যেন তুমি উপভোগ করতে পার তোমার জীবনটাকে! -কাজ করে যাও, যদি বদলাতে চাও অবাঞ্ছিত কিছু! -কাজ করে যাও, যেন এ পৃথিবীকে এ মানবতাকে উত্তম কিছু দিয়ে যেতে পার! আর, কখনও হাত পেত না! মূল- Robert G. Ingersoll. রচনাকাল- ১৮৮৭। ভাবানুবাদ- হ ক। বিশেষ কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন-বাপী হাসান।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.