চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা
সংবিধানে সেক্যুলার রাষ্ট্র ব্যবস্থাটি নিশ্চিত করা হয়েছে ভারতে। আবার দলগুলোর মধ্যে সবচাইতে সেক্যুলার বলে পরিচিতি আছে কংগ্রেস দলের। কিন্তু সমাজের মানুষগুলোর চিন্তাধারার উন্নতি না ঘটলে এইসব ইজম খুব একটা কার্যকরী হয় না। ইন্দিরা গান্ধীকে যখন তার শিখ দেহরক্ষীরা হত্যা করল তখন কংগ্রেস সেক্যুলার কর্মীরা এক এক করে চারহাজার শিখকে হত্যা করল। তখন একজন ইন্দিরা গান্ধীর জীবন হাজার হাজার শিখদের জীবনের চাইতে বেশি মুল্যবান হয়ে উঠল।
মানবতাবোধের মত আর সব বোধ লুপ্ত পেয়ে চিন্তাধারা সংকীর্ন হোল একটি মানুষকে ঘিরে। ভারতে ব্যাক্তিপুজা একটু বেশি হয় বলে মনে হয়। আমাদের দেশেও মাঝে মাঝে চোখে পড়ে ওমুক ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে। একজনের জন্য সবাইকে জ্বালিয়ে দেয়ার মানসিকতা ব্যক্তিত্বের দৈন্যতাকে প্রকট করে তোলে।
যাহোক মুল আলোচনায় আসা যাক।
আরেকটি দেশ যেটি মনে করে সেক্যুলারিজম তাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থার ব্যাকবোন সেই তুরস্কেও মানবধিকারা লংঘিত হয় বারে বারে।
সেখানে ব্যাক্তিপুজা চলে, পথে পথে কামালের মুর্তি আর অফিসে অফিসে কামালের ছবি টাংগিয়ে। আর কামালের খারাপ কিছু বললে ত কথাই নেই, সোজা জেল। অথচ এটা সত্য যে এই ভদ্রলোক একদলের শাসন চালিয়ে ব্যাক্তিগত চিন্তাভাবনা চাপিয়ে দিয়েছিলেন দেশটির ওপর। একজন কামাল বড় হয়ে উঠে আর সব তুর্কিদের চাইতে।
কামাল তুনে কামাল কিয়া ভাই। আর্মিরা এখন মাঝে মাঝে ধমকে উঠে সেক্যুলারিজমের কিছু হলে...............। তাই মাথায় কাপড় দিতে না পেরে ঐদেশে লক্ষ লক্ষ মেয়েরা শিক্ষা থেকে বন্চিত হয়। আরও মজার ব্যাপার তুরস্কের দুই তৃত্বীয়াংশ মেয়েরা মাথায় কাপড় দেয়। বুঝুন ঠেলা মানুষ বড় নয় সেক্যুলারিজমটা বড় হয়ে দাড়ায়।
এই আর্মিরাই আবার সরকার থেকে বেশ কিছু আর্থসামাজিক সুবিধা আদায় করে নিতে ভুলে না। যতই হোকনা কেন ওরা ত সেক্যুলারিজমের রক্ষক। ভাগ্যিস পশ্চিমাদের ভয়ে কিংবা লজ্জায় গনতন্ত্রকে গিলে ফেলেনি।
এবার আসি ফিনল্যান্ড কিংবা নরওয়ে কথায়। দুজায়গাতেই ধর্মের সাথে রাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা আছে।
ফিনল্যান্ডের ৮৫% মানুষ চার্চের সদস্য। অথচ ফিনল্যান্ডে মানবিধাকের লংঘন কখনো হয়েছে বলে শুনিনি। শুনেছি ফিনল্যান্ডের সরকার নাকি মসজিদ বানানোর জন্যও টাকা দেয়।
কমিউনিষ্টরা সেভিয়েত রাশিয়াসহ পুর্ব ইউরোপে নাস্তিকবাদের কথা বলে যে রাজত্ব কায়েম করতে চেয়েছিল সেটি সেক্যুলারিজিমের এক কাঠি ওপরে ছিল। ওখানে ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে দুরে নয় একবারে গায়েব করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
সেই রাজত্ব শুধু ব্যর্থ হয়নি নিজেই গায়েব হয়ে গেছে। এখন কি কেউ বলবেন ধর্মবিহীন পুর্ব ইউরোপে পশ্চিম ইউরোপের চাইতে মানবাধিকার বেশি সমুন্নত ছিল, যেখানে অনেক দেশে রাষ্ট্রের সাথে ধর্মের সম্পৃক্ততা ছিল।
আসলে সমস্যাটা মানুষের মননের। মানুষগুলোর চিন্তাধারা উন্নত হলে, মানুষগুলো সভ্য হলে, পাশের মানুষগুলোর নিরাপত্তা আর স্বাধীনতা বিঘ্নিত হয় না।
এক বিদ্যান ব্যাক্তি সভ্য মানুষের সংজ্ঞা দিয়েছিলেন চমৎকারভাবে।
সভ্যমানুষের কাপড়চোপড় হবে সাধারন, খাবার দাবার হবে সাধারন, কথাবার্তাও হবে সাধারন শুধু মাথার ভেতরকার চিন্তাটা হবে অসাধারন।
তাই একজন মানুষ যেকোন ইজমের যত চটকদার কাপড়চোপড়ে নিজেকে ঢাকুক না কেন, যত চটকদার জ্ঞানের বুলি আউরাক না কেন যতক্ষন তার চিন্তাধারাকে উন্নত না করতে পারছে ততদিন সে অসভ্যই থেকে যাবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।