শুকতারা তবু "আঁধার ফুরাবে" আশ্বাস দিয়ে যায়... কাল ছিলো প্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণের জন্মদিন।
আর প্রিয় কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ-র মৃত্যুবার্ষিকী।
কবিতা বা সাহিত্যে কোন তুলনা চলেনা। কেউ তুলনা করতে চাইলে, সেটাকেই বরং অনৈতিক মনে হয়। কিন্তু, জানিনা কেন, রুদ্রের প্রশ্নে আমি একটু বেশিই আবেগী, পক্ষপাতদুষ্ট।
নিজেকে হাতের মুঠোয় করে নষ্ট করা, অপচয় করা এই মানুষটির মানুষের প্রতি অদ্ভুত মমত্ব বোধ, বেঁচে থাকার তীব্র বাসনা নিয়ে মৃত্যুর দিকে ছুটে চলা, স্বভাবের অদ্ভুত সব বৈপরীত্য, আমাকে, হয়তো বয়সটা আমার কম বলেই, এমন ভীষণরকম টানে। "নপুংসক কবিদের প্রতি" কবিতাটা পড়ে নিজের উপর ঘেন্না ধরে গিয়েছিলো! সত্যিই, এই সব লুতুপুতু আমি-তুমি মার্কা প্রেমের কবিতা লিখে কি লাভ!! যদি কলম এড়িয়ে যায় মানুষ!!!
নষ্ট সময়__ নষ্ট প্রহর
নষ্ট শশার পচনের মত গলিত জীবন।
মাজরা পোকায় খেয়ে যাওয়া ধান তরুণ শষ্য
নমস্য কিছু প্রবীণ পথিক
আজো বোসে আছে পঁচা পুরাতন বটের শিকড়ে।
মৌশুম যায়__ অনাবাদি জমি পড়ে থাকে চাষহীন,
লাঙল আসে না, আসে নর্তকী খেমটা নাচনে ধেয়ে।
ধেনোমদ চায় বিদেশী বণিক, ধান চায় স্বদেশীরা___
শিরা উপশিরা ধমনী-রক্তে কারা বুনে যায় রোগ
কারা লালনের বাউল কন্ঠে সোনালী শিকল বাঁধে?
কারা সেই প্রতারক!
কারা এ মাটির পুষ্পকে বলে পাপ?
(বিশ্বাসের হাতিয়ার, উপদ্রুত উপকূল, রুদ্র)
এখনো ভোরে আসা কাগজের শিরোনামের মত জ্বলজ্বলে সত্য মনে হয় প্রতটা লাইন।
নিজেকে নিঃশেষ করে বেঁচে গেছে রুদ্র! আজকের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে কি লিখতেন তিনি?
আন্দাজ করতে চেষ্টা করি মাঝে মাঝে, বোধে কুলিয়ে ওঠে না...
রুদ্র-র অন্তত একটা কবিতা__________
নপুংসক কবিদের প্রতি
শিশ্নহীনতাই এতো বেশি নারী-নিমগ্ন করেছে,
তোমাদের অক্ষম সঙ্গম তৃষ্ণা, শিথিল শরীর
টেনে নিয়ে গেছে ওই রমনীর চুলের খোঁপায়।
ঢেকেছো অক্ষম সাধ তোমাদের শব্দে, উপমায়।
সহস্র মৃত্যুর মধ্যে গেয়ে ওঠো রমন সঙ্গীত,
জ্বলন্ত ক্ষুধার রাজ্যে স্বপ্ন দ্যাখো পুষ্পের পেখম।
রাজপথে গুলিবিদ্ধ লাশ রেখে হোটেলের ঘরে
জমে উঠে তোমাদের লাস্যময় কবিতা উৎসব।
শুধু ফুল দ্যাখো, নারী দ্যাখো, স্তন দ্যাখো শুধু
তোমরা দ্যাখো না রক্ত,মানুষের মৃত্যুর মিছিল,
তোমরা দ্যাখো না ক্ষুধা জরাজীর্ন পতিত জীবন
ট্রাকের চাকায় পেষা মাংশপিন্ড তোমরা দ্যাখো না।
জীবন দেখতে যাও টার্মিনালে,খানকি পাড়ায়
বেশ্যার নাভির নিচে খুঁজে ফেরো শিল্পের আরক-
অথচ সে জীবনের জন্যে কোন পক্ষপাত নেই
সেই কষ্টের বিপক্ষে কোন বাক্য নেই তোমাদের।
তোমাদের শিল্প মানে ইঁদুরের গর্তে পলায়ন,
তোমাদের শিল্প মানে হিজড়ার অক্ষম রমন।
তোমাদের শিল্প হলো প্রতারণা, শব্দের জোচ্চুরি,
তোমাদের শিল্প হলো অন্ধকারে আঁধার সন্ধান
শোষক চায় না হোক জীবনের প্রকৃত প্রকাশ,
আঁধার-ইটের নিচে চাপা থাক জালি ঘাসগুলো।
দেহের গ্যাংগ্রিন থাক মনোরম পোষাকের তলে
ক্ষুধার্ত মানুষগুলো পূর্নিমার খোয়াব দেখুক।
তোমাদেরো ইচ্ছে তাই, তোমাদেরো একই বাসনা,
তোমরা ঢাকতে চাও হৃদয়ের ব্যাকুল বিক্ষোভ,
তোমরা লুকাতে চাও ক্লান্তি, কষ্ট, বুকের চিৎকার-
চিত্রকল্প, উপমায় তোমরা ঢাকতে চাও ক্ষুধা।
এ বিপুল পৃথিবীর আর কিছু নয়, হতভাগা,
শুধু ফুল, লতাপাতা, শুধু নারী তোমরা চিনেছো।
মূর্খের সংকীর্ন চোখ, সেই চোখ তোমাদের চোখে
মধ্যযুগ চলে গেছে, প'ড়ে আছো সময়ের মল___
তোমরা রয়েছো প'ড়ে জঞ্জালের অবশিষ্ট স্মৃতি,
সাম্রাজ্যবাদের পুঁজ, সভ্যতার সর্বনাশা ক্ষতি।
আজ আস্তাকুঁড়েও নেই তোমাদের নির্ধারিত ঠাঁই,
প'ড়ে আছো পঁচা ঘায়ে মৃত সব মাছির মতন।
মিছিল এগিয়ে যায় মানুষের স্বপ্নের মিছিল,
তোমরা পেছনে বোসে খুঁড়ে চলো নিজের কবর।
অক্ষমতাগ্রস্ত কবি, বলো অবশেষে তোমাদের
'পুরুষরক্ষা সমিতি' ছাড়া কি আর করার আছে??
(২৯.০৩.৮৪, মিঠেখালি, মোংলা)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।